সুকুমার রায়ের সেই ‘কাতুকুতু বুড়ো’র কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। -“যতক্ষণ না হাসবে তোমার কিচ্ছুতে নেই ছুটি।” এই ক্যাফেও যেন অনেকটা তেমনই। না, তবে হাসি নয়। এই ক্যাফেতে লেখালেখি শেষ না করে ওঠার জো নেই অতিথিদের। এমন আজব ক্যাফের কথা শুনেছেন কখনও। কোথায় রয়েছে এই ক্যাফে? শুনে নিন।
করোনা-লকডাউন, এই অতিমারি পর্বে কাজের দুনিয়ায় বদল এসেছে অনেকটাই। ওয়ার্ক ফ্রম হোমে অভ্যস্ত হয়েছেন অনেকেই। নাকালও হয়েছেন। অনেকেই অফিসের পরিবেশে কাজ করতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। বাড়ি থেকে কাজ করতে গিয়ে মনোঃসংযোগে অসুবিধা হয়েছে অনেকেরই।
সৃষ্টিশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত যাঁরা, অনেক সময়ই সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। মেজাজটাই তো আসল রাজা। যেমন তেমন কোনও একটা জায়গা হলে লেখা আসবে কী করে? চার দেওয়ালের মধ্যে বসে এক ভাবে লিখে যাওয়াটাও বেশ একঘেয়ে একটা ব্যপার। এসব ক্ষেত্রে বহু লেখক-লেখিকাই কোনও একটি নির্জন ক্যাফে বা কফিশপে বসে কাজ করতে পছন্দ করেন। সেখানে থাকে ফ্রি ওয়াইফাই থেকে শুরু করে হাজার রকম ব্যবস্থা। পছন্দের কফি কিংবা মুচমুচে স্ন্যাকসে মন মজিয়ে ঝটপট শেষ করে ফেলেন দিস্তে দিস্তে লেখা। না শেষ করেও অবশ্য উপায় নেই। কারণ লেখা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ক্যাফে থেকে নড়ার জো নেই যে আপনার। এমনই নিয়ম এই ক্যাফের।
আরও শুনুন: বারবার জায়গা বদল করে জেলের দরজা, গোলকধাঁধা থেকে পালানোর উপায় ছিল না কোনও বন্দির
ক্যাফের নামের মধ্যেও সেই ইঙ্গিতই স্পষ্ট। জাপানের টোকিও শহরের এই ক্যাফের নাম ম্যানুস্ক্রিপ্ট রাইটিং ক্যাফে। বাংলায় তর্জমা করলে যাঁর অর্থ দাঁড়ায় পান্ডুলিপি ক্যাফে। সৃষ্টিশীল মানুষদের প্রায়শই সময়ের হিসেব থাকে না। অথচ কাজের জায়গায় ডেডলাইন মেনে চলাটাও তো জরুরি। আর সেই ব্যাপারটিই দেখভাল করে টোকিওর এই ক্যাফেটি।
অফিসের শক্ত ডেডলাইন মেনে চলতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খান যাঁরা, সেসব লেখক-লেখিকার কথা ভেবেই তৈরি হয়েছে এই ক্যাফে। সেখানে ঢোকার সময়ই আপনার জমে থাকা কাজ ও তার ডেডলাইন উল্লেখ করে দিতে হবে একটি কার্ডে। কতক্ষণে আপনি সেই কাজটি শেষ করে উঠতে পারবেন, তা-ও জানাতে হবে ওই কার্ডের মাধ্যমে। ক্যাফের ম্যানেজার প্রতি এক ঘণ্টা অন্তর আপনার কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে যাবেন। কতক্ষণ অন্তর তিনি খোঁজ নেবেন, তার বিকল্পও বেছে নেওয়ার ক্ষমতাও রয়েছে আপনারই হাতে। মৃদু, স্বাভাবিক ও কড়া, এই তিনটি বিকল্পের মধ্যে যে কোনও একটি পছন্দ করতে পারবেন আপনি। আপনার কাজের গুরুত্ব বুঝে সেই মতোই তাড়া দেবেন ক্যাফের ম্যানেজার। সেই কাজ যতক্ষণ না শেষ হচ্ছে কোনও ভাবেই ক্যাফে ছেড়ে বেরোতে পারবেন না আপনি।
সর্বসাকুল্যে ১০টি আসন রয়েছে ওই ক্যাফেটিতে। তার মধ্যে চারটি জানলার ধারে, চারটি কাউন্টার ঘেঁষা এবং দুটি টেবিল উঁচুতে। প্রত্যেক আসনেই রয়েছে অফিসের কাজ করার যাবতীয় ব্যবস্থা। চার্জিং পয়েন্ট থেকে সুইচ বোর্ড, ল্যাপটপ ঠান্ডা রাখার উপায় সবই মিলবে সেখানে। বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া না দিলে যাঁদের মাথা খোলে না, তাঁদের জন্য রয়েছে মুক্ত প্রকৃতিতে বসার ব্যবস্থাও। প্রথম তিরিশ মিনিটে ১ ডলার এবং তার পর থেকে প্রতি ঘণ্টায় ২.৩৪ ডলার করে খরচ হয় এই ক্যাফেতে বসে কাজ করার জন্য।
আরও শুনুন: মানুষের প্রবেশ নিষেধ… শুধু বাঁদরদের জন্যই পৃথিবীতে আছে এক আশ্চর্য দ্বীপ
এই অভিনব ভাবনার নেপথ্যে রয়েছেন তাকুয়া কাওয়াই নামে ৫২ বছরের এক লেখক। এমন আশ্চর্য ক্যাফের খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় চাউর হতে সময় লাগেনি। অনেকেই কাওয়াইকে প্রশ্ন করেন, সর্বক্ষণ এমন তাড়া দিলে শান্তিপূর্ণ ভাবে কাজ কী ভাবে শেষ করবেন অতিথিরা? কাওয়াই অবশ্য জানিয়েছেন, শুধু তাড়া দেওয়াই নয়। কর্মরত অতিথিদের মনোবল বাড়াতেও সাহায্য করে তাঁর এই ক্যাফে। ক্যাফেতে এসে কাজ করার সুফল হাতেনাতেই পেয়েছেন অনেকে। সারা দিনের কাজ তিন ঘণ্টায় শেষ করে বাড়ি ফিরে যেতে পেরেছেন কেউ কেউ। ফলে কাওয়াইয়ের ক্যাফেতে বারবার ফিরে এসেছেন বহু গ্রাহকই। সব মিলিয়ে এই অতিমারি পরবর্তী সময়ে রীতিমতো হিট এই ম্যানুস্ক্রিপ্ট রাইটিং ক্যাফে।