মন্দির না মসজিদ! কার জায়গা কে দখল করেছে? কার থাকা উচিৎ, এ নিয়েও আগেও বিতর্ক থেকে অশান্তির সাক্ষী থেকেছে দেশ। সেই আতঙ্কই ফিরে আসতে চলেছে না তো? সাম্প্রদায়িক অশান্তি থেকে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, কদিন ধরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে সেই খবরই। কাশীর জ্ঞানবাপী মন্দির ঘিরে সেই অশান্তির আগুনেই ঘি পড়তে চলেছে না তো? উদ্বেগে বিশেষজ্ঞমহল।
এর আগেও ধর্মীয় স্থান নিয়ে দড়ি টানাটানি আমরা দেখেছি। তার ফল যে খুব একটা ভাল হয়নি, তার সাক্ষী ইতিহাস। ইদানীং যেভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অশান্তির ছবি ফুটে উঠছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগের। এরই মধ্যে ফের দানা বেঁধেছে জ্ঞানবাপি মসজিদ নিয়ে নয়া বিতর্ক।
মন্দির না মসজিদ, এ বিতর্ক বোধহয় আজকের নয়। বাবরি থেকে শুরু করে বারাণসীর এই জ্ঞানবাপী মন্দির। হিন্দুদের মন্দিরের জায়গা নিয়ে মসজিদ গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে বারংবার।
কিন্তু এটাই তো আসল ভারত। যেখানে মন্দিরের গা ঘেঁষে গড়ে ওঠে মসজিদ। তারই পাশে থেকেছে গির্জা। বাদ যায়নি অন্যান্য ধর্মও। ভারতের এই চেনা ছবিই তো আমাদের ইতিহাস। বরাবরই সম্প্রীতির আবহে এ দেশে মিলেমিশে ছিল নানা ভাষা নানা মত নানা ধর্মের মানুষেরা। তবে সেই ঐক্যের সুরটাকেই নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে কেউ কেউ।
আরও শুনুন: মসজিদে আজান শুরু হতেই বন্ধ লাউডস্পিকার, সম্প্রীতির নজির গড়ল বিহারের মন্দির
কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ও জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে রেষারেষির জের ইতিমধ্যেই পৌঁছেছে আদালত পর্যন্ত। ওই মসজিদ আসলে মন্দিরের জায়গায় তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ‘ভগবান বিশ্বেশ্বরের বন্ধু’ নামে এক মামলাকারী। প্রসঙ্গত, ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী,কারওর মাধ্যমে আদালতে মামলা করতে পারেন খোদ ভগবান। অযোধ্যা রামমন্দির বিবাদের সময়েও ‘বন্ধু’র মাধ্যমে মামলা করতে দেখা গিয়েছিল রামলালাকে। এ ক্ষেত্রেও সেই ভাবেই মামলা দায়য়ের হয়েছে ইলাহাবাদ হাইকোর্টে।
ভারতে বারবার বিদেশি শক্তির আক্রমণ হয়েছে। ভাঙচুর, ক্ষয় অনেক কিছুরই সাক্ষী এই দেশ। ঐতিহাসিকদের একাংশের মতে, মুঘল আমলে কাশীর এই বিশ্বেশ্বর মন্দিরের একটি অংশ ভেঙে তৈরি হয়েছিল মসজিদ। মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের আমলেই তৈরি হয়েছিল এই মন্দির। এতদিন ধরে পাশাপাশি পড়শির মতোই ছিল এই দুই ধর্মস্থান। বছর চারেক আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে কাশীতে বিশ্বনাথ করিডর গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। বিশ্বনাথ মন্দির থেকে গঙ্গার ঘাট পর্যন্ত রাস্তা তৈরি হওয়ার কাজও শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই।
সেই মসজিদের জমি হিন্দুদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন মামলাকারী। যদিও কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের সঙ্গে এই জ্ঞানবাপী মসজিদটির তেমন কোনও বিরোধ নেই। আঞ্জুমান-ই-আন্ত্রাজিয়া কমিটিই এই মসজিদটির পরিচালনার দায়িত্বে। ইতিমধ্যেই কাশী বিশ্বনাথ করিডোরের জন্য জমিও দান করেছে তারা। মন্দির ট্রাস্ট এই মামলায় কোনও ভাবে যুক্তও নয়। তবে স্বঘোষীত বিশ্বেশ্বর পক্ষই এই মামলা টেনে নিয়ে গিয়েছে আদালত পর্যন্ত।
আরও শুনুন: উজ্জ্বল সম্প্রীতির ভারত, হিন্দুদের শোভাযাত্রায় জলের বোতল এগিয়ে দিলেন মুসলিম পড়শি
ইদের পরেই সেই মসদিজের ভিতরে সমীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আগামী ৬ এবং ৭ মে আর্কিয়োলজি সার্ভেকে দিয়ে ভিডিওগ্রাফি ও সমীক্ষা করানো হবে বলেও জানানো হয়েছে আদালতের তরফে। বারাণসীর সিভিল বিচারক রবিকুমার দিবাকর ওই নির্দেশ দেন। পাশাপাশি সার্ভে করা হবে শ্রীঙ্গার গৌরী মন্দিরেও।
আর তাতেই আপত্তি রয়েছে আঞ্জুমান-ই-আন্ত্রাজিয়া মসজিদ কমিটির। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ভিডিওগ্রাফির জন্য কাউকে মসজিদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তাঁরা আদালতের নির্দেশের কড়া বিরোধিতা করছেন বলেই জানিয়ে দিয়েছেন মসজিদ কমিটির যুগ্ম সচিব এসএম ইয়াসিন।
আর এই ব্যাপারটি নিয়েই ফের বিতর্ক ঘনিয়েছে। মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্তের কড়া নিন্দা করেছে বিশ্বহিন্দু পরিষদ। তাদের জাতীয় মুখপাত্র বিনোদ বনসল জানান, মসজিদ কমিটি কী লোকানোর চেষ্টা করছে? মসজিদ চত্বরে প্রবেশাধিকার নিয়ে আদালত অবমাননারও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। এ বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন বিনোদ।এ দিকে, আদালতের নির্দেশের তীব্র বিরোধিতা করেছেন বহু মুসলিম নেতারাই।
এমনিতেই গোটা দেশ জুড়ে বারবার উসকে উঠেছে সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার ছবি। ইদের আগে অশান্তি ছড়িয়েছে মধ্যপ্রদেশের বিস্তীর্ণ অংশ জুড়েই। দিন কয়েক আগেই দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরী ও ভোপালের বেশ কিছু অংশে হিংসা ছড়ায়। ধর্মস্থানে লাউডস্পিকার ব্যবহার নিয়েও অব্যাহত বিতর্ক। এই পরিস্থিতি জ্ঞানবাপী মসজিদ বিতর্কের জল যে অনেক দূর গড়াবে, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ওয়াকিবহাল মহল।