তারুণ্যের স্পর্ধাকে চিরকালই সম্ভ্রমের চোখে দেখা হয়। মনে করা হয়, অল্পবয়সিরা যেরকম নির্ভীকভাবে প্রশ্ন তুলতে পারেন, ব্যবস্থার ত্রুটির দিকে আঙুল তুলতে পারেন, তা অনেকেই পেরে ওঠেন না। সম্প্রতি সেই কথাটাই মনে করিয়ে দিলেন জনাকয় তরুণ-তরুণী। এক সর্বভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে বিজেপি মুখপাত্রের দিকে তাঁরা ছুড়ে দিলেন চোখা প্রশ্ন। এমন প্রশ্ন, যা হয়তো বিরোধী নেতারাও সবসময় করে উঠতে পারেন না। কী কী প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করলেন তাঁরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের দল এবং মতের পক্ষেই কথা বলবেন, সেটাই স্বাভাবিক। এমনকী যুবা নেতারাও এর ব্যতিক্রম নন। আবার শাসক দলের বিরোধী যাঁরা, তাঁরা তাঁদের রাজনৈতিক অবস্থান থেকে পালটা পশ্ন করেন ঠিকই, তবে অনেক সময়ই এই চাপান-উতোর গিয়ে দাঁড়ায় নেহাত ঝগড়াঝাটিতে। কোন দল মানুষের জন্য কী করেছে তার খতিয়ান দিতে আর একে অন্যকে দোষ দিতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন তাঁরা। টেলিভিশনের টক শো-তে চোখ রাখলে প্রায়ই এ দৃশ্য দেখা যায়। আর এতসবকিছুর ভিতর যেন হারিয়ে যায়, সেই মোক্ষম প্রশ্নগুলো, যা একান্তই আমজনতার, যে-প্রশ্ন মানুষ করতে চায় সরকারকে বা ব্যবস্থাকে। সেই প্রশ্নই এবার তুলে ধরলেন কয়েকজন তরুণ-তরুণী। বিজেপি মুখপাত্রের প্রতি তাঁদের সাফ প্রশ্ন, আচ্ছে দিন কবে আসবে? জিনিসপত্রের এত দাম বাড়লে মানুষ খাবে কী? তবে এতেই ক্ষান্ত হননি তাঁরা করেছেন আর-একটি মোক্ষম প্রশ্নও।
আরও শুনুন: নিরন্নের মুখে খাবার তুলে দেওয়াই ধর্ম! ইউটিউব চ্যানেল খুলেই সেই কাজই করে চলেছেন তিন বন্ধু
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বসেছিল আলোচনার আসর। যেখানে দর্শকের আসনে ছিলেন তরুণ-তরুণীরাও। তাঁরা নির্ভীক। এবং কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের মতাদর্শে প্রভাবিতও নন। ফলে সাহসী প্রশ্ন করতে তাঁরা দ্বিধা করেননি। যখন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক তাঁদের প্রশ্ন করার সুযোগ দেন, তখন একে একে ধেয়ে আসে চোখা প্রশ্নের বাণ। তরুণ-তরুণীরা জানতে চান, যে অচ্ছে দিনের প্রতিশ্রুতি বিজেপি দিয়েছিল, তা আর কবে আসবে? অন্যজন প্রশ্ন করেন, পেট্রল ডিজেলের দাম নিয়ে তর্কাতর্কি তো খুব হচ্ছে। কিন্তু তার জন্য তো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামও বাড়ছে। সে নিয়ে কোনও উচ্চাবাচ্য নেই কেন? এভাবে জিনিসের দাম বাড়তে থাকলে মানুষের খেতে পাওয়াই তো কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে। আর-এক তরুণী ঠিক তখনই প্রশ্ন করেন, বেকারত্ব আর মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে বুলডোজারটা কবে চলবে? তাঁর প্রশ্নের তারিফ করেন খোদ সঞ্চালকও।
আরও শুনুন: যোগ দিয়েছিলেন ইফতার পার্টিতে, প্রতিবাদে উপাচার্যের কুশপুতুল পোড়াল BHU-এর একদল পড়ুয়া
সম্প্রতি ভারতীয় রাজনীতিতে বুলডোজার যেন এক আগ্রাসনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। জাহাঙ্গীরপুরিতে হিংসা আর তারপর বুলডোজার দিয়ে অবৈধ নির্মাণ ভাঙাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল রাজধানী। শেষমেশ সুপ্রিম কোর্টের হতক্ষেপে সেই কাজ বন্ধ হয় বটে, তবে তার মধ্যেই বহু ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের ঘর ভাঙা পড়ে। সেই বুলডোজার প্রসঙ্গ তুলে সঙ্গত প্রশ্নই বিজেপি মুখপাত্রের দিকে ছুড়ে দিয়েছেন ওই তরুণী।
তাঁদের এই সাহসী প্রশ্নের তারিফ করেছেন শিব সেনা নেত্রী প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী। টুইট করে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের তরুণরাই বিজেপি মুখপাত্রকে সঠিক প্রশ্নটি করেছেন। এই দেখে মনে হয় এখনও আশার আলোটুকু বেঁচে আছে।’
রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা যে প্রশ্ন করতে দেয় না, তাই-ই অক্লেশে করে ফেলেন দেশের তরুণ প্রজন্ম। ব্যবস্থার দোষটুকু তুলে ধরতে তাঁরা যে আজও দ্বিধা করেন না, এই তরুণরা সে কথা যেন আবার নতুন করে মনে করিয়ে দিলেন।