মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে ফিরেছে সেই মন্দির-মসজিদ বিতর্ক। যুযুধান শিবিরের দুই পক্ষই ব্যস্ত নিজেদের হিন্দুত্বের প্রমাণ দিতে। একদিকে বিজেপি আর মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা। অন্যদিকে শাসক দল শিব সেনা। রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছিলই। তবে হিন্দুত্বের প্রশ্নে বারংবার খোঁচা খেয়ে এবার গর্জে উঠলেন উদ্ধব ঠাকরে। বাবরি ভাঙার প্রসঙ্গ টেনে বিঁধলেন বিজেপিকে। ঠিক কী বললেন তিনি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আজান বনাম হনুমান চালিশা। মহারাষ্ট্রের রাজনীতি সম্প্রতি সরগরম হয়েছে এই ইস্যুতে। নেতারা একে অন্যের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহারাষ্ট্রের মাটিতে এই ধরনের রাজনীতি নতুন কিছু নয়। তবে, এবার সামান্য হলেও তফাৎ নজরে পড়ছে। তা হল, এবারের মন্দির-মসজিদ বিতর্ক বা আজান-হনুমান চালিশা বিতর্ক চলছে, শুধু হিন্দুত্বের সমর্থক প্রমাণ করার জন্য নয়। হিন্দুত্বের কে কত বড় সমর্থক, তারই প্রমাণ দেওয়ার তাগিদে চলছে এই বিতর্ক। এই প্রশ্নেই শাসকদল শিব সেনাকে বারংবার প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা এবং বিজেপি। এবার তাই বিজেপির বিরুদ্ধেই গর্জে উঠলেন উদ্ধব ঠাকরে। টেনে আনলেন সেই বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রসঙ্গ।
আরও শুনুন: হিংসা নয় চাই সম্প্রীতি, জাহাঙ্গিরপুরীতে জাতীয় পতাকা হাতে একযোগে মিছিল হিন্দু-মুসলমানদের
রাজনৈতিক পথে দীর্ঘদিন একসঙ্গেই চলেছিল বিজেপি ও শিব সেনা। সে গাঁটছড়া এখন আর নেই। বরং একদা রাজনৈতিক মিত্র এখন প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিপক্ষ যখন হিন্দুত্বের পরীক্ষায় চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে শিব সেনাকে, তখন উদ্ধবের হাতিয়ার সেই বাবরি মসজিদই। বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে তাঁর প্রশ্ন, “বাবরি ভাঙার সময় কেন লুকিয়ে পড়েছিল বিজেপি? তারপর আদালতের নির্দেশে যখন রাম মন্দির তৈরি হচ্ছে, তখন আবার ঝোলা নিয়ে বেরিয়েছিল। কোথায় গেল বিজেপির হিন্দুত্ব?” শুধু এটুকু বলেই ক্ষান্ত হননি তিনি। সমালোচকদের একহাত নিয়ে বলেছেন, ‘”বেশ কিছুদিন ধরেই বলা হচ্ছে যে, শিব সেনা হিন্দুত্ব ত্যাগ করেছে। হিন্দুত্ব কি পরনের পোশাক যে তা পরাও যায় আবার খুলেও রাখা যায়? যারা এই সমালোচনা করছে তারা হিন্দুত্বের জন্য কী করেছে?” শিব সেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরেকে স্মরণ করে তিনি বলেন, যে হিন্দুত্বের পাঠ তিনি দিয়ে গিয়েছেন, আজও তা মেনে চলেন প্রত্যেক সদস্য-সমর্থক। অর্থাৎ বিজেপি এবং মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার হিন্দুত্বের পথ থেকে শিব সেনার পথ যে আলাদা তা এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন উদ্ধব।
লাউডস্পিকার বিতর্ক বেশ কিছুদিন ধরেই চলছিল মহারাষ্ট্রে। আসন্ন বৃহন্মুম্বই পুরসভার ভোটের কারণেই এই বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছিল। পরিস্থিতি ঘোরালো হয় নবনীত রানা ও রবি রানার গ্রেপ্তারিতে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস ‘হিটলাররাজ চলছে’ বলে তোপ দাগেন শিব সেনার বিরুদ্ধে। একের পর এক মন্তব্যে শিব সেনার হিন্দুত্বকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দেন বিরোধী শিবির। আর তাই এবার নিজেদের ‘সহি হিন্দুত্বের’ প্রমাণ দিতে উঠে-পড়ে লাগলেন উদ্ধব। তবে সেই প্রমাণ দিতেও তাঁর হাতিয়ার হয়ে উঠল সেই মসজিদই। মহারাষ্ট্রের রাজনীতির এই নয়া রূপ দেশের রাজনীতিতেও এক নতুন অধ্যায়ের জন্ম দিচ্ছে বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।