কেবল বিদ্বেষই শেষ কথা নয়। তারও উপরে বেজে ওঠে সম্প্রীতির সুর। সেই কথাই যেন ফের প্রমাণ করে দিলেন দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরীতে হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বার্তা দিতেই এক পদযাত্রায় পা মেলালেন তাঁরা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সম্প্রতি দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরী। চলছে দোষ দেওয়া আর পালটা দোষারোপ। অবস্থা খতিয়ে দেখছে প্রশাসনও। এই পরিস্থিতিতে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে যে অবিশ্বাস আর অশান্তির বাতাবরণ জমে উঠেছে, এবার তা ভাঙতে উদ্যোগ নিলেন স্থানীয় মানুষেরাই। হিন্দু মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একইসঙ্গে পা মেলালেন একই পদযাত্রায়। হাতে তুলে নিলেন দেশের ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা। যতই হিংসা হানাহানি বিদ্বেষের ঝড় উঠুক, তাঁরা যে একই দেশের মানুষ, একই দেশমায়ের সন্তান, এই সত্যে কোনও বদল ঘটবে না। এই নিশানের মাধ্যমেই যেন এ কথা বুঝিয়ে দিলেন তাঁরা।
হনুমান জয়ন্তীর শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরী। হিংসা ছড়ানোর ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে মামলা করে কড়া বার্তা দেয় সরকার। এদিকে এই পরিস্থিতির মধ্যেই ওই এলাকায় বেআইনি দখল উচ্ছেদ করতে পুলিশ পাঠায় উত্তর দিল্লি পুরনিগম। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের পরও বুলডোজার দিয়ে একাধিক ঘরবাড়ি, দোকান ভেঙে ফেলা হয়। সব মিলিয়ে ওই অঞ্চলে রাজনৈতিক উত্তেজনা ভিন্ন মাত্রা পায়। জাহাঙ্গিরপুরীতে বাঙালি সংখ্যালঘুদের উপর যে আক্রমণ হয়েছে, তার প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনাস্থলে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি পাঠায় এ রাজ্যের শাসক দলও। যদিও পুলিশের অসহযোগিতার দরুন সরাসরি ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেননি বলে অভিযোগ তুলেছেন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রতিনিধিরা। সব মিলিয়ে একাধিক রাজনৈতিক দলের চাপানউতোরে আরও ঘোরালো হয়েছে পরিস্থিতি। এই অবস্থায় এবার স্থানীয় মানুষেরা নিজেরাই উদ্যোগ নিলেন পট পরিবর্তনের।
আরও শুনুন: ‘চড় মারার বদলে আইনের প্যাঁচে মারুন’, পরোক্ষে দেশের বাকস্বাধীনতা নিয়ে কটাক্ষ বীর দাসের
এখনও কড়া নিরাপত্তার আওতায় রয়েছে এই এলাকা। ফলে দুই সম্প্রদায় থেকে মাত্র ৫০ জন করে মিছিলে যোগদানের অনুমতি দেয় দিল্লি পুলিশ। কুশল চক থেকে শুরু হয়ে আজাদ চক পর্যন্ত চলে এই পদযাত্রা। দুই সম্প্রদায়ের মানুষ জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে পদযাত্রায় হাঁটেন, আলিঙ্গনও করেন একে অপরকে। ১৯৮০ সালে স্থাপিত আমান কমিটি, যা আদতে শান্তিরক্ষা দল, তার উদ্যোগেই এই পদযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। ভিন্ন ধর্মের মানুষকে আঘাত না করে নিজের ধর্মাচরণের অভ্যাস বজায় রাখার আদর্শ নিয়েই চলে এই দল। তিরঙ্গা যাত্রার মধ্যে দিয়ে সেই বার্তাই ছড়িয়ে দিলেন হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ।