শরণার্থী হওয়ার যন্ত্রণাটা বোঝেন ভাল মতোই। তাই ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য গোটা একটা রিসর্ট, এমনকি গোটা একটা দ্বীপ উৎসর্গ করেছেন কানাডার এই দম্পতি। তাঁদের জন্য ঢেলে সাজিয়েছেন দ্বীপ ও রিসর্ট। শরণার্থীদের থাকা-খাওয়া, পড়াশোনা থেকে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর সমস্ত দায়িত্বও তুলে নিয়েছেন নিজেদের কাঁধে। তাঁদের উদ্যোগ কুড়িয়েছে নেটদুনিয়ার কুর্নিশ। আসুন, শুনে নিই কানাডার সেই দম্পতির গল্প।
এর আগে তুরস্কের শরণার্থী স্রোত দেখেছে দুনিয়া। দেখেছে সমুদ্রতটে ভেসে ওঠা ছোট্ট আয়লান কুর্দির সেই নিথর দেহ। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংকটও অজানা নয়। ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা মানুষগুলোর অবস্থাটা যেন তেমন না হয়। নিজের মতো করে সেই চেষ্টা করছে সকলেই। এদিকে প্রতিবেশী দেশগুলির সীমান্তে প্রতিদিন উপচে পড়ছে শরণার্থী স্রোত। প্রাণভয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন ছেড়ে পালাচ্ছেন হাজার হাজার বাসিন্দা। এত বছর ধরে কষ্ট করে গড়ে তোলা ঘরবাড়ি, জমিজিরেত, সম্পত্তি সব ছেড়েছুড়ে কপর্দকশূন্য হয়ে ভিড় করছেন অন্য দেশে। প্রতিবেশী দেশের প্রশাসন থেকে বাসিন্দা, সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন অনেকেই। যে যার মতো করে তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে উঠেপড়ে লেগেছেন।
ইউক্রেন থেকে চলে আসা মানুষগুলোকে নতুন ঘর খুঁজে দেওয়া উদ্যোগে এগিয়ে এসেছেন কানাডার এই দম্পতিও। শুধু এগিয়েই আসেননি, নিজেদের একটি গোটা দ্বীপ তাঁরা সাজিয়ে তুলেছেন ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য।
আরও শুনুন: যুদ্ধের আঁচে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল একাই, অবশেষে মায়ের দেখা পেল ইউক্রেনের খুদে
ব্রায়ান হলোওয়েচুক এবং তাঁর স্ত্রী শ্যারণ। ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপপুঞ্জের ইস্ট সুক নামে একটি ছোট্ট দ্বীপের মালিক তাঁরা। সেখানেই রয়েছে তাঁদের একটি বড়সড় রিসর্টও। সেই প্রায় ১৫ হাজার বর্গফুট জায়গা জুড়ে বানানো রিসর্টটিকে শরণার্থীদের জন্য নতুন করে সাজিয়ে তুলছেন এই দম্পতি। শুধু রিসর্টই নয়, গোটা দ্বীপটিই তাঁরা ছেড়ে দিতে চান ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য। ‘ইউক্রেনিয়ান সেফ হেভেন’- নতুন শরণার্থী শিবিরটির এমনই নাম রেখেছেন কানাডার ওই দম্পতি। কানাডায় আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের যাতে থাকা-খাওয়ার কোনও অসুবিধা না হয়, তা নিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর তাঁরা।
আজ থেকে নয়। এই কাজে তাঁরা হাত দিয়েছিলেন অনেকদিন আগেই। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া যেদিন সামরিক অভিযান ঘোষণা করে দিল, তার পরেই প্রমাদ গুনেছিলেন ব্রায়ানরা। তখন থেকেই দ্বীপটিকে ইউক্রেনের শরণার্থীদের জন্য তৈরি করার কাজ শুরু করে দেন। ফেসবুকে সেই কাজের ছবিও ভাগ করে নিয়েছিলেন ওই দম্পতি।
আরও শুনুন: এখন ব্যবসার সময় নয়! যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে মানুষের মুখে বিনামূল্যে খাবার তুলে দিচ্ছে অসংখ্য রেস্তরাঁ
শরণার্থীদের জন্য স্বর্গ গড়ে তোলার কাজ প্রায় শেষের পথেই। ছোটখাটো মেরামতির কাজ চলছে এখন। এই কাজে ব্রায়ানদের সাহায্য করেছেন অনেক স্বেচ্ছাসেবীই। ব্রায়ানদের ওই রিসর্টে কম করে হলেও একশো জন শরণার্থী থাকতে পারবেন। ইতিমধ্যেই ১৯ জন বাসিন্দাকে পেয়ে গিয়েছেন তাঁরা। সপ্তাহ তিনেকের মধ্যেই কানাডায় চলে আসছেন তাঁরা। থাকবেন ব্রায়ানদের রিসর্টেই।
আসলে শরণার্থীদের যন্ত্রণাটা হাড়ে হাড়েই জানেন ব্রায়ান। তাঁর দাদু-ঠাকুমা যে এককালে ইউক্রেন থেকেই শরণার্থী হয়ে চলে এসেছিলেন কানাডায়। সেই থেকে বিন্দু বিন্দু করে উপার্জন করে নিজেদের এই জায়গায় দাঁড় করিয়েছে তাঁদের পরিবার। আর সেই জায়গাটাই ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের করে দিতে চান কানাডার এই দম্পতি। তাঁদের থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে পড়াশোনা, এমনকি তাঁদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে পর্যন্ত যতটা সম্ভব সাহায্য করতে চান ব্রায়ানরা। আর এমন উদ্যোগে কুর্নিশ না জানিয়ে থাকা যায় নাকি! ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে ব্রায়ানদের কথা। সেখানেও ভুয়সী প্রশংসাও কুড়িয়েছেন এই দম্পতি।