চলে এসেছে অসহ গরমের দিন। বেলা বাড়তে না বাড়তেই সূর্যের চোখরাঙানি। রাস্তায় বেরোলে তো রক্ষে নেই। বাসে-ট্রেনে-অটোয় ঘেমে নেয়ে একশা। ঘামের দুর্গন্ধ ঢাকতে বডিস্প্রে আর পারফিউম ঢেলে সাময়িক মুক্তি মেলে বটে, তবে পাকাপাকি সমাধান খুঁজতে তাকাতে হবে সমস্যার গভীরে। প্যাচপ্যাচে গরমে কীভাবে নিজেকে রাখবেন ঘামমুক্ত, তরতাজা! আসুন, শুনে নিন।
গরম মানেই বেজায় ঘাম। এ একেবারে সরল সমীকরণ। আর ঘাম হওয়া মানেই তার যাবতীয় অস্বস্তি তো আছেই। তবে শুধু কি গরমের কারণেই ঘাম হচ্ছে? আর ঘামের দুর্গন্ধ – সে-ও কি খুব স্বাভাবিক? নাকি এই প্রাত্যহিক ঘটনার তলে তলে থেকে যাচ্ছে আরও অনেক কিছু। তাই ঘাম মুছে ফেলা গেলেও ঘামের কারণ কিন্তু মুছে ফেলা যায় না।
অতএব প্রথমেই জানতে হবে ঘাম হওয়ার কারণটা কী? আমরা অনেকেই ভাবি, ঘাম মানেই খারাপ। ব্যাপারটা কিন্তু আদৌ তেমন নয়। আসলে ঘাম আমাদের এমন একটা প্রতিরক্ষা ক্ষমতা যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গরমের দিনে ঘামের মাধ্যমেই শরীর থেকে বাষ্প হয়ে বেরিয়ে যায় অতিরিক্ত তাপমাত্রা। যা হিট স্ট্রোকের মতো বহু বিপদ থেকেই বাঁচিয়ে দেয় আমাদের।
আরও শুনুন: পেটে যন্ত্রণা, বমিতে জেরবার! করোনা নয় তো! নতুন উপসর্গে ক্রমশ বাড়ছে চিন্তা
ফলত ঘাম ভালোই। তবে অতিরিক্ত ঘাম কিন্তু কোনও কাজের কথা নয়। আর সব সময় যে শুধুমাত্র গরম থেকেই ঘাম হয় তা-ও কিন্তু নয়। অনেক সময়েই ঘামের কারণ হয়ে দাঁড়ায় মানসিক অবস্থা। রাগ, উদ্বেগ, দুঃশ্চিন্তা, ভয়- এ সমস্ত কিছুও হতে পারে ঘামের কারণ। অনেক সময় রোগের পূর্বাভাসও হয়ে দাঁড়ায় এই ঘাম। তাছাড়া পোশাকআশাক, দেহের প্রকৃতি, জিন- এ সমস্ত কিছুর উপরেও নির্ভর করে ঘামের মাত্রা। তাই ঘামের নেপথ্যে কোনও অসুস্থতা রয়েছে কি-না তা প্রথমেই জেনে নেওয়া দরকার। হরমোনের ভারসাম্যজনিত সমস্যা, ডায়েবিটিস, এমন কি স্নায়ুরোগ থেকেও হতে পারে অতিরিক্ত ঘাম। সেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া জরুরি।
তবে সাধারণ কারণে যাঁরা বেশি ঘামেন, তাঁদের জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক টোটকা, যা ঘাম কমাতে সাহায্য করবে।
এই গরমে প্রথমেই যেটা প্রয়োজন, তা হল শরীরে জলসাম্য বজায় রাখা। তার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে জল খান। এই গরমের দিনে খাবার খান বুঝে। অতিরিক্ত তেলমশলাযুক্ত খাবার না খাওয়াই বাল। তা হজম করা শক্ত। তাই এ সময়ে হালকা, তেলমশলা কম এমন খাবারদাবারই খান। তবে বেশি করে পাকা ফলমূল ও শাকসব্জি খেতে ভুলবেন। অত্যধিক চা-কফি খাওয়ার অভ্যেস থাকলে তাতে রাশ টানুন। অ্যালকোহল-তামাক থেকে যত দূরে থাকা যায় তত মঙ্গল।
আরও শুনুন: লম্বা ভাতঘুম না হলে চলে না! স্মৃতিরক্ষায় সুখকর নয় এই অভ্যাস, কেন জানেন?
এরই সঙ্গে প্রতিদিন ঠান্ডা জলে স্নান করুন নিয়ম করে। পাশাপাশি গরমের সময় জামাকাপড় বাছুন বুঝেশুনে। হালকা, সুতির জামাকাপড় পরার চেষ্টা করুন। অনেকেরই পায়ের তলা খুব ঘামে। পায়ের অতিরিক্ত ঘাম থেকে মুক্তি পেতে মোজা পরা অভ্যেস করুন। পায়ের অতিরিক্ত আদ্রর্তা শুষে নেবে মোজা। তবে ভুলেও এক মোজা একদিনের বেশি পরবেন না। প্রতিদিন কাচা মোজা পরার চেষ্টা করুন। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল জাতীয় সাবান ব্যবহার করে দেখতে পারেন, উপকার পাবেন। ভেজা শরীরে ডিওডোরেন্ট জাতীয় জিনিস ব্যবহার করবেন না একেবারেই। শুকনো নরম তোয়ালে দিয়ে গা মুছে তবে সুগন্ধি লাগান।
অতএব ঘামকে খুব বেশি ভয় করার কারণ নেই। গরম আর ঘামের সঙ্গে টেক্কা দিতে প্রস্তুত হয়ে যান গোড়া থেকেই। গরম হোক বা ঠান্ডা, মনকে তরতাজা রাখতে পারলে দেখবেন সব ঋতুরই রয়েছে আলাদা আলাদা ম্যাজিক। এমনকী এই গ্রীষ্মকেও তখন আর ততটা মন্দ লাগবে না!