সাম্প্রদায়িক অশান্তির বাতাবরণ গোটা দেশ জুড়ে। বিরোধী দলগুলি প্রায়শই এরকম অভিযোগ তোলে। কিন্তু তা কতটা সত্যি? একমাত্র তথ্যই এর জবাব দিতে পারে। সেই তথ্যই চেয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। জবাবে সংসদে কেন্দ্র যা জানাল, তা অবশ্য স্বস্তির নয়। ২০১৬ থেকে ২০২০ অর্থাৎ ৫ বছরে দেশে সাম্প্রদায়িক অশান্তির কতগুলি ঘটনা ঘটেছে? আসুন শুনে নিই।
৫ বছরে দেশে সাম্প্রাদায়িক অশান্তির ঘটনা ঘটেছে ৩৯৯৯টি। সংসদে এই তথ্য পেশ করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালে অশান্তির ঘটনার সংখ্যা যা ছিল, পরবর্তী বছরগুলিতে তা খানিকটা কমে। তবে, ২০২০ তে গিয়ে আবার সেই ৫ বছর আগের অবস্থাই ফিরে এসেছে, অন্তত তথ্যের দিক থেকে দুটি বছরই কাছাকাছি জায়গায় রয়েছে।
আরও শুনুন: টাইমস স্কোয়ারের বিখ্যাত বোর্ডে ফুটে উঠল ছবি, বিরল সম্মান দুই ভারতীয় ছাত্রীর
সম্প্রতি দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং তার জেরে বাড়ছে সাম্প্রদায়িক অশান্তির ঘটনা – এমন অভিযোগ উঠেছে একাধিকবার। মূলত শাসকদলের বিরোধী শিবির থেকেই এই অভিযোগ শোনা গিয়েছে। তা নিয়ে চাপানউতোরও চলে বিস্তর। একমাত্র তথ্যই নিরপেক্ষ ভাবে প্রকৃত ছবিটি ফুটিয়ে তুলতে পারে। তাই কেন্দ্রের কাছে এই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য চেয়েছিলেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। বিজেপি সাংসদ চন্দ্র প্রকাশ যোশীও একই প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন সংসদে। তাঁদের জিজ্ঞাস্য ছিল, দেশ জুড়ে যে সমস্ত সাম্প্রদায়িক অশান্তির ঘটনা ঘটছে তার যথাযথ রেকর্ড সরকারের হাতে আছে কি-না! এই প্রশ্নের জবাবে সংসদে তথ্য পেশ করে নিত্যানন্দ রাই জানান, গত চার বছরে এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা ৩৩৯৯টি। ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট মোতাবেক, ২০১৬ সালে সাম্প্রদায়িক অশান্তির ৮৬৯টি কেস রেজিস্টার্ড হয়েছিল। ২০১৭-তে এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা ছিল ৭২৩, এবং ২০১৮-তে ৫১২টি। ২০১৯-এ উল্লেখযোগ্য ভাবে এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৪৩৮-এ। ২০১৯-এ এসে আবার দেখা যাচ্ছে ধর্মীয় বা সম্প্রদায়গত কারণে অশান্তি বাধার প্রবণতা আবার বেড়েছে। এক্ষেত্রে নথিভুক্ত ঘটনার সংখ্যা ৮৫৭টি। অর্থাৎ, ২০১৬-র থেকে সামান্য কম, তবে পাঁচ বছরের ব্যবধানেও এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা ৮০০টির বেশিই ঘটেছে।
ধর্মীয় ও সম্প্রদায়গত নয় এমন অশান্তির সংখ্যাও কম নয়। ২০১৬ তে এমন অশান্তির ঘটনা ঘটেছিল ৬১, ৯৭৪টি। ২০১৭-তে এরকম ঘটনার সংখ্যা ৫৮ হাজারের বেশি, ২০১৮-তে ৫৭ হাজারের বেশি, ২০১৯-এ ৪৫ হাজারের বেশি। ২০২০ তে এসে সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ৫১,৬০৬। অর্থাৎ এক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে, অশান্তির ঘটনার নিরিখে ২০১৬ সালের কাছাকাছিই আছে ২০২০ সাল। যদিও নিত্যানন্দ রাই জানান মব লিঞ্চিং-এর আলাদা কোনও তথ্য ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর হাতে নেই।
আরও শুনুন: সম্প্রীতির নিদর্শন! ‘বিশ্বের বৃহত্তম হিন্দু মন্দির’ গড়তে জমি দান মুসলিম পরিবারের
তথ্য-পরিসংখ্যান পেশ করার পাশাপাশি মন্ত্রী জানান, ফৌজদারি আইনের পর্যালোচনা করে এখনকার আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার সঙ্গে সাযু্জ্যপূর্ণ করার কথা ভাবা হচ্ছে। যাতে সমাজের নিপীড়িত অংশ দ্রুত বিচার পায়। বিচারব্যবস্থা যাতে আরও বেশি করে নাগরিকদের সহায়তা করতে পারে, সেদিকে সরকার খেয়াল রাখছে বলেই জানিয়েছেন মন্ত্রী।