সিনেমার চরিত্র যাতে বাস্তবসম্মত হয়, তার জন্য চেষ্টার কসুর করেন না অভিনেতারা। মেথড অ্যাকটিং-এ জোর দেন বহু অভিনেতাই। সম্প্রতি এক খুদে অভিনেতা তাক লাগিয়েছে অভিনয়ে। ‘জলসা’ ছবিতে বিদ্যা বালান আর শেফালি শাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছে সে। তবে ছবিতে তার অভিনয় খুলে দিয়েছে নতুন দিনের দরজা। কেননা নিজে সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত হয়েই ছবিতে একই চরিত্রে রূপদান করেছে সূর্য কাসিভাটলা। সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে যা এক নজির। আসুন শুনে নিই এই খুদে অভিনেতার কথা।
একদিকে বিদ্যা বালান। অন্যদিকে শেফালি শাহ। দুই পোড়খাওয়া অভিনেতার সঙ্গে ফ্রেম শেয়ার। তার ভিতর থেকে নিজের কাজের প্রশংসা আদায় করে নেওয়া নিঃসন্দেহে বেশ শক্ত কাজ। ঠিক সেই কাজটিই অনায়াস দক্ষতায় করেছে সূর্য কাসিভাটলা। বছর দশেকের খুদে এই অভিনেতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ সকলেই। তবে এর পাশাপাশি যে জন্য তাকে কৃতিত্ব দিতে হয়, সেই ঘটনাটি একদিকে যেমন বিস্ময়কর, অন্যদিকে তেমনই তারিফযোগ্য। সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘জলসা’ ছবিতে বিদ্যা বালানের ছেলের চরিত্রে দেখা গিয়েছে সূর্যকে। ছবিতে তার নাম আয়ুষ, যে সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত। বাস্তব জীবনে সূর্য নিজেও সেরিব্রাল পালসিতেই আক্রান্ত। কিন্তু তার কাছে এই বিষয়টি কোনরকম প্রতিবন্ধকতা নয়। বরং যা আপাত ভাবে তাকে দুর্বল করতে পারত, তাকেই শক্তিতে রূপান্তরিত করেছে এই খুদে অভিনেতা।
আরও শুনুন: সম্প্রীতির নিদর্শন! ‘বিশ্বের বৃহত্তম হিন্দু মন্দির’ গড়তে জমি দান মুসলিম পরিবারের
‘জলসা’ ছবির কেন্দ্রে আছে একটি দুর্ঘটনা। জনৈক প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক রাতে নিজেই গাড়ি চালিয়ে ফিরছিলেন। গাড়ির সামনে এসে পড়ে এক কিশোরী। ঘটে যায় মারাত্মক দুর্ঘটনা। কিন্তু সেই মুহূর্তে রক্তাক্ত কিশোরীকে রাস্তায় ফেলে রেখেই চলে যান সাংবাদিক। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিদ্যা বালান। পরে ঘটনা যত এগোয় জানা যায় যে, দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত কিশোরীটির মা ওই সাংবাদিকের বাড়িতেই কাজ করেন। দেখাশোনা করেন তাঁর ছেলের। এই মহিলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন শেফালি শাহ। আর বিদ্যা বালানের ছেলে আয়ুষ চরিত্রে দেখা গিয়েছে সূর্যকে। আয়ুষ সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত। স্বাভাবিক ভাবেই তাকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই মায়ের, এদিকে কর্মব্যস্ততা দিনের বেশিরভাগ সময় তাঁকে বাড়ি থেকে দূরে থাকতে বাধ্য করে। এই শূন্যস্থান পূরণ করে শেফালি শাহের অভিনীত চরিত্রটি। আয়ুষের সঙ্গে এমন এক বন্ধন তৈরি হয়, যা মাতৃত্বের থেকে কম কিছু নয়। ছবির ক্লাইম্যাক্সে তাই অবধারিত হয়ে ওঠে আয়ুষ চরিত্রটি। বিদ্যা এবং শেফালি – দুজনের পাশেই নিজেকে আশ্চর্য দক্ষতায় মেলে ধরেছে সূর্য। সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত আয়ুষ চরিত্রটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। আর এখানেই আয়ুষকে বাহবা দিচ্ছেন সকলে। শুধু প্রাণ ঢেলে অভিনয়ই সে করেনি, নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়েই এই চরিত্রে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছে সূর্য।
আরও শুনুন: যোগ দিতে চান সেনাবাহিনীতে, চাকরি শেষে রোজ ১০ কিমি দৌড়ে প্র্যাকটিস তরুণের
ছবির পরিচালক সুরেশ ত্রিবেণী বলছেন, সংবেদনশীলতার প্রশ্নে আমাদের আরও অনেকটা এগিয়ে যেতে হবে। গোটা দেশকেই আরও সূক্ষ্মতার সঙ্গে বিষয়টিকে দেখতে হবে। কাউকে অন্য চোখে দেখা নয়। বরং যে যেমন তাকে সেভাবেই গ্রহণ করতে যেন শিখে নিই আমরা। এমনটাই আশা ও বিশ্বাস পরিচালকের। শুধু কথার কথা নয়। নিজের কাজেও তা প্রমাণ করেছেন তিনি। সূর্যের অভিনয় শুধু প্রশংসা পেয়েছে তা নয়, সূর্যকে যেভাবে ইন্ডাস্ট্রির আপনজন নেওয়া হয়েছে, তা এক দৃষ্টান্ত। বিশেষত প্রতিবন্ধকতা বা তৃতীয় লিঙ্গের চরিত্রে রূপদান করার ক্ষেত্রে এখনও অন্য অভিনেতাদের দিয়েই কাজ চালাতে অভ্যস্ত সিনে-ইন্ডাস্ট্রি। সেক্ষেত্রে সূর্যের অন্তর্ভুক্তি একটা অন্য দরজা খুলে দিল বলা যায়। পাশাপাশি সূর্যের এই কাজ বহুজনকে অনুপ্রেরণাও জোগাবে।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত সূর্যের বাস টেক্সাসে। সেই চার বছর বয়স থেকেই অভিনয় করার স্বপ্ন তার। তার নিজের একটি ইউ-টিউব চ্যানেল আছে। যেখানে সে নিজের গান, নাচের ভিডিও পোস্ট করে। বহুমুখী এই খুদে অভিনেতা সমৃদ্ধ করুক ভারতীয় সিনেমাকে, এমনটাই প্রার্থনা দর্শকের।