‘পোয়া বারো’ কথাটি বাংলার অতি প্রচলিত একটি প্রবাদ। সৌভাগ্যের প্রসঙ্গে বারবার এই প্রবাদ উঠে আসে আমাদের মুখে। কিন্তু কোথা থেকে এই কথাটি এসেছে, তা কি জানেন? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
কারও ভাগ্যে কোনও বড় সুযোগ এলে আমরা কথায় কথায় বলেই থাকি, তার এবারে পোয়া বারো। অর্থ পরিষ্কার। উদ্দিষ্ট ব্যক্তিটির যে আসলে বিপুল সৌভাগ্য দেখা দিয়েছে, সে কথাই বুঝিয়ে দেওয়া হয় এই বাগধারাটির মধ্যে দিয়ে। কিন্তু ‘পোয়া বারো’ কথাটি তো আসলে এমন দুটি শব্দের সমষ্টি, যারা উভয়েই সংখ্যাবাচক শব্দ। তাহলে এমন শব্দের সঙ্গে ভাগ্যের আবার কী সম্পর্ক? ব্যাপারটা খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন: উপন্যাসে লেখা ছিল মস্ত জাহাজডুবির কথা, ঠিক ১৪ বছর পর সত্যিই ডুবেছিল টাইটানিক
‘পোয়া বারো’ কথাটি এসেছে আসলে একটি খেলা থেকে। হ্যাঁ, একটি সাধারণ ইন্ডোর গেম-ই ছিল এই কথার উৎস। এমন এক খেলা, যা এককালে বহুল প্রচলিত হলেও বর্তমানে প্রায় বিলুপ্ত। যার নাম পাশা। কথায় বলে, তাস দাবা পাশা, তিন সর্বনাশা। আর বলবে নাই বা কেন! পাশা খেলাকে বস্তুত একরকমের জুয়া বললেও ভুল হয় না। মহাভারতের গল্প যাঁরা জানেন, তাঁদের কাছে পাশা খেলার নাম একেবারেই অপরিচিত নয়। পাণ্ডবদের বনবাসের মূলে ছিল এই খেলাটিই। ধূর্ত শকুনির কাছে পাশা খেলায় হেরে গিয়েছিলেন জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব যুধিষ্ঠির। আর খেলার পণ হিসেবে তাঁর সমস্ত সম্পত্তি, ধনদৌলত, এমনকি বাকি চার পাণ্ডব, দ্রৌপদী এবং খোদ যুধিষ্ঠিরকেও জিতে নিয়েছিলেন কূটচক্রী শকুনি। তারপর কী হয়েছিল, সে গল্প তো সকলেই জানে।
আরও শুনুন: উচ্চতা ৬ ফুট ৯ ইঞ্চি, তাতেই বেসামাল পুরুষসঙ্গীরা! আজব সমস্যায় বিশ্বের সবথেকে লম্বা মডেল
কিন্তু এই যে শকুনির এমন পোয়া বারো হয়েছিল সেই খেলায়, তার মূলে ছিল ভাল চাল পড়া। লুডো খেলার ছক্কার মতো পাশাতেও আছে তিনটি গুটি। গুটিগুলো যখন চালা হয় সেটাকে বলে দান। প্রতি দানে তিনটি গুটিই একসঙ্গে ফেলা হয়। আর প্রত্যেকটি গুটিতে ১, ২, ৫ ও ৬ নম্বর থাকে। লুডোতে ছক্কা পড়লে গুটি ঘর থেকে বেরোয়, আর পাশা খেলায় তিনটি গুটি মিলিয়ে ৯ উঠলে খেলা শুরু হয়। পাশা খেলায় এই ১-এর পোশাকি নাম পোয়া। এই খেলায় সবচেয়ে বড় দান হল দুই ছক্কা আর পুট, থুড়ি পোয়া। অর্থাৎ দুটি ৬ মিলে বারো, সঙ্গে একটি ১, সব মিলিয়ে হল ১৩। এটি সবচেয়ে দামি চাল, সবচেয়ে দুর্লভও বটে। আর সেইজন্যই পাশা খেলায় সৌভাগ্যের দান পোয়া বারো।
মজার কথা হল, বিলিতি মতে ১৩ সংখ্যাটি অশুভ, যেহেতু যীশুর শেষ ভোজনের সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ১৩ জন শিষ্য। সেই সূত্র ধরেই অনেকেই আনলাকি থার্টিন-এর মতে বিশ্বাসী। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, প্রাচীন ভারতে ১৩ সংখ্যাটি মোটেই অশুভ বলে চিহ্নিত ছিল না, বরং তা ছিল বিপুল সৌভাগ্যেরই প্রতীক। না হলে কি আর ‘পোয়া বারো’ প্রবাদটি এতদিন ধরে বেঁচে থাকে!