গ্রামে ৩০ বছর ধরে পুরুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। তবুও অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছেন সেই গ্রামের মহিলারা। ভাবছেন গল্প? আজ্ঞে না, একেবারে নির্জলা সত্যি। কোথায় ঘটছে এমন ঘটনা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
এক-দুই নয়, গুনে গুনে তিরিশটি বছর! হ্যাঁ, ঠিক এতগুলো দিন ধরেই কোনও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের মুখ দেখেনি এই গ্রাম। এই গ্রামে কোনও পুরুষের প্রবেশ করার অধিকার পর্যন্ত নেই। গোটা গ্রাম জুড়ে থাকেন কেবল মহিলারা। অথচ সেই গ্রামেই কিনা ঘটে গ্রামবাসী মহিলাদের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার মতো ঘটনা।
আরও শুনুন: করোনা থেকে ইউক্রেনের যুদ্ধ, ভারতীয়দের উদ্ধারে বারবার বিমান উড়িয়েছেন এই বঙ্গতনয়া
হ্যাঁ, আধুনিক বিজ্ঞান যদিও সিঙ্গল মাদার কিংবা সিঙ্গল ফাদার হওয়ার পথ খুলে দিয়েছে, কিন্তু পৃথিবীর প্রান্তিক অঞ্চলগুলিতে সেই প্রযুক্তি এখনও পৌঁছায়নি। প্রাকৃতিকভাবেই সন্তানের জন্ম হয় সেখানে। এই গ্রামটিও তেমনই এক প্রত্যন্ত গ্রাম। গ্রামটির ভৌগোলিক অবস্থান দক্ষিণ আফ্রিকায়। যার অনেকখানি অঞ্চল জুড়ে এখনও বসবাস করেন আধুনিকতার ছোঁয়া না পাওয়া বিভিন্ন উপজাতির মানুষেরা। তার উপর কোনও শহরের কাছাকাছি এলাকায় নয়, এই গ্রামটি গড়ে উঠেছে ঘন জঙ্গলের মধ্যে। এমন এক দুর্গম এলাকায় কেবল মহিলাদের গ্রাম গড়ে ওঠার কারণ কী? আর কেনই বা সেখানে পুরুষের প্রবেশ নিষেধ?
আরও শুনুন: নতুন দেশের রাজা হলেন দুই বন্ধু! রেস্ত নয়, বুদ্ধি খাটিয়ে কিনে ফেললেন একটা গোটা দ্বীপ
আসলে এহেন নিষেধের পিছনে রয়েছে এক কুৎসিত ইতিহাস। কালো মানুষের দেশ আফ্রিকা বারবার শ্বেতাঙ্গ, সভ্য মানুষদের নির্মম অত্যাচারের শিকার হয়েছে। যার সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত দাসপ্রথা। এই গ্রামটিও প্রকৃতপক্ষে তেমনই এক অত্যাচারের ফসল। ১৯৯০ সালে গ্রামটি গড়ে তোলেন ১৫ জন মহিলা। ব্রিটিশ সেনাদের হাতে ধর্ষিতা, নির্যাতিতা হয়েছেন বলে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন এই ১৫ জন মহিলা। তীব্র ঘৃণায় কোনও পুরুষের সঙ্গেই আর থাকতে চাননি তাঁরা। সেই কারণেই তাঁরা এই গ্রাম গড়ে তোলেন, এবং সেখানে পুরুষদের প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দেন। এই গ্রামে অত্যাচারিতা মহিলাদের আশ্রয় দিতেও শুরু করেন তাঁরা। বর্তমানে প্রায় আড়াইশো মহিলা রয়েছেন উমোজা নামের এই গ্রামে।
কিন্তু ঘটনা হল, পুরুষ প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও গর্ভধারণ করছেন গ্রামের মহিলারা। না, কোনও অলৌকিক উপায়ে নয়। আসলে গ্রামের আশপাশের অঞ্চলের পুরুষদের মধ্যে থেকেই নিজেদের পছন্দমতো সঙ্গী নির্বাচন করেন তাঁরা। কিন্তু গর্ভধারণের পরই আর সেই পুরুষের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখেন না। এই গ্রামে সন্তানের অধিকার একান্তভাবেই মায়ের। একাই সন্তানকে বড় করার ভার নেন তাঁরা। আর এইভাবেই, নিঃশব্দেই এক আন্দোলন জারি রেখেছেন প্রত্যন্ত পৃথিবীর এই মানুষেরা।