রোনাল্ডোর ন্যাড়া মাথার সামনে একগুচ্ছ চুল, কিংবা লাসিথ মালিঙ্গার ঝাঁকড়া চুলের হেয়ারস্টাইলের কথা মনে আছে তো? কিংবা ডেভিড বেকহ্যাম? কখনও সোনালি চুলে হেয়ারব্যান্ড, কখনও পনিটেল, কখনও ন্যাড়া মাথা, কখনও ন্যাড়া মাথার দুদিকে দু-তিনটে করে লাইন, নিত্যনতুন চুলের কায়দায় চমকে দিতেন এই ফুটবলার। কিন্তু কেশসজ্জার প্রতিযোগিতা হলে তাঁদেরকেও বোধহয় হারিয়ে দেবেন এই বিশেষ উপজাতির মানুষেরা। মাথার চুল তাঁদের কাছে কেবল সাজের বিষয় নয়, তাঁদের একরকম আইডেন্টিটি কার্ডও বটে।
পছন্দের পুরুষ কিংবা নারীটি বিবাহিত কি না, বুঝতে পারছেন না? এদিকে না বুঝে প্রেমের প্রস্তাব দিলে রীতিমতো বিড়ম্বনায় পড়ার ভয়। সহজ সমাধান বাতলে দিয়েছেন এই উপজাতির মানুষেরা। কথায় বলে, বিয়ে হওয়া মানেই নাকি টুপি পরা, অর্থাৎ বোকামি করা। তা এই টুপিটা বাস্তবে পরলে কেমন হয়? ঠিক সেটাই করেছেন এঁরা। এই গোষ্ঠীর বিবাহিত পুরুষদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে একরকমের টুপি, আর মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে পরতে হয় ছাগলের চামড়ার তৈরি একরকমের মুকুট, যার নাম ‘এরেম্বে’। টুপি তো দুপক্ষকেই পরতে হয়, তাই না?
আরও শুনুন: টগবগ করে দিনরাত ফোটে এ হ্রদের জল! জানেন কোথায় আছে এই ফ্রাইং প্যান লেক?
ভাবছেন, এঁরা আবার কারা? তাহলে খুলেই বলা যাক।
বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশগুলির মধ্যে অন্যতম নামিবিয়া। আফ্রিকায় অবস্থিত এই দেশটিতেই বাস করে হিম্বা নামে একটি জনজাতি। কথা হচ্ছে এঁদের নিয়েই। হিম্বা সমাজের নিয়মে প্রতিটি মানুষকেই চুল বাঁধতে হয় তার সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী। নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধ প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে চুল বাঁধার নির্দিষ্ট নিয়মকানুন। কোনও ছেলে বা মেয়ে বিবাহিত কি না, তাও বোঝা যায় হেয়ারস্টাইল দেখেই।
আরও শুনুন: নড়েচড়ে, আকারে বাড়ে, করে বংশবিস্তারও! জানেন কোথায় মেলে এমন ‘জীবন্ত’ পাথর?
পুরুষদের ক্ষেত্রে অবশ্য সাজের বৈচিত্র্য কম। ছেলে বুড়ো সকলের একই ফ্যাশন, ন্যাড়া মাথার মাঝে একখানা বেণী। অবিবাহিতরা তো বটেই, বিপত্নীক পুরুষদেরও কিন্তু টুপি পরার অনুমতি নেই। কেবল বিয়ে করলে তবেই আসে টুপি পরার সুবর্ণ সুযোগ। প্রকাশ্যে এই টুপি খোলার নিয়ম নেই। একমাত্র কারও মৃত্যু হলে শোকসভায় টুপি খুলতে হয়।
মেয়েদের বেলায় কিন্তু কায়দাকানুনের শেষ নেই। বিনুনি তো আছেই, তার উপর রয়েছে মাটিজাতীয় একটি উপাদানের পাকাপোক্ত প্রলেপ। পাথুরে লাল মাটি, মাখন ও স্থানীয় একরকম গাছ থেকে পাওয়া আঠালো রস মিশিয়ে তৈরি এই রূপটানের নাম ‘ওজিস’। একেবারে ছোটবেলায় মেয়েদের চুলে দুটি বেণী, আর যমজ হলে একটি বিনুনি বেঁধে কাজ মেটে। কিন্তু যৌবন আসা মানেই নিজেকে সাজিয়ে তোলার পালা। কিশোরী বয়স থেকে যুবতি হয়ে ওঠা পর্যন্ত বিনুনির সংখ্যা কেবলই বাড়তে থাকে, আর চুলে ওজিসের প্রলেপ লাগানো শুরু হয়। বেণীর শেষে জুড়ে দেওয়া হয় একগুচ্ছ ছাগলের লোমও। এই সব সাজসজ্জার উদ্দেশ্য একটাই, সঙ্গী নির্বাচন। বালিকাদের বেণী থাকে সামনের দিকে, কিশোরীদের তো মুখের অধিকাংশই চুলে ঢেকে রাখতে হয়, কিন্তু যুবতিদের বেণী হয় মাথার পিছনে। আর এই চিহ্ন দেখেই বুঝে নেওয়া হয় মেয়েটি বিবাহযোগ্যা কি না।
হিম্বাদের কেশসজ্জার কথা নাহয় শোনা গেল। এদিকে বলুন তো, আধুনিক পার্লারে চুলের পুষ্টির জন্য কতরকমেরই না প্রলেপ লাগানো হয়ে থাকে। হার্বাল উপাদানের চাহিদা তো আরই বেশি। তা, ‘ওজিস’-এর কথা একবার বিবেচনা করে দেখবেন নাকি?