প্রতিদিন মৃত্যুর দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন ওঁরা। নিজেদের কোনও ব্যক্তিগত কারণে নয়, নিজের প্রাণ বন্ধক রাখেন দেশের জন্য। দেশকে বাঁচানোর জন্য, আমাদের রক্ষা করার জন্য। কিন্তু দেশের বাইরের আক্রমণ সামলাতে সামলাতে এই সেনারা যখন দেখেন দেশের ভিতরেই বাধছে লড়াই, কী মনে হয় ওঁদের? মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে সে কথাই জানালেন এক সেনা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সীমান্তে তাঁরা অতন্দ্র প্রহরী। ঝোড়ো আবহাওয়াই হোক কি গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহ কিংবা তুষারপাত, তাঁরা কর্তব্যে অচল। তাঁরা যে সৈনিক। বাইরের শত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার ভার যে তাঁদের কাঁধেই। আর তার জন্যই ব্যক্তিগত সাধ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছেন তাঁরা। বাড়ি যাওয়ার ছুটি মেলে কালেভদ্রে। প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হয় মাসের পর মাস ধরে। দেশের সুরক্ষার কথা ভেবে এই সব কিছুই সহ্য করে নেন ভারতীয় সেনারা। এমনকি দেশের জন্য শহিদ হতেও তাঁরা পিছপা নন। কিন্তু বাইরের শত্রুর সঙ্গে প্রাণপণ লড়াই করে যে দেশকে রক্ষা করার ব্রত নিয়েছেন তাঁরা, সেই দেশের ভিতরেই যখন লড়াই বাধে? হয়তো গুলিগোলার লড়াই নয়। কিন্তু দেশের মানুষ যখন একে অপরের বিরুদ্ধে ঘৃণার অস্ত্র শানায়, তখন রক্তক্ষরণ ঘটে তাঁদের বুকের ভিতর। এমনটাই জানালেন এক মৃত্যুপথযাত্রী সেনা।
আরও শুনুন: বাজল বাজনা, ঘর সাজল বিয়েবাড়ির মতো, কফিনবন্দি তরুণ জওয়ানের জন্য আয়োজন মা-বাবার
কাশ্মীরে পোস্টিং ছিল ওই সেনার। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সেখানেই তুষারপাতের কবলে পড়ে মৃত্যু হয় ৩৭ বছরের জওয়ানের। আর তার পরেই প্রকাশ্যে এসেছে মৃত্যুর আগে তাঁর পাঠানো একটি ভয়েস মেসেজে বলা এই কথাগুলি। বন্ধুকে পাঠানো ওই বার্তায় সকলের কাছে নিজেদের মতপার্থক্য সরিয়ে রাখার আরজি জানিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, “ভাল থেকো। ধর্ম কিংবা জাতপাতের নামে লড়াই কোরো না। তোমরা যাতে ভাল থাকো, নিরাপদে থাকো, সেইজন্যই আমাদের জওয়ানরা এখানে লড়ছে, নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছে। নিজেদের জাতির কথা ভাবো। আর সন্তানদেরও সেই শিক্ষাই দাও।”
আরও শুনুন: ১৪৪ জন শহিদের জন্মস্থান থেকে মাটি সংগ্রহ, শহিদের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখাই ব্রত অধ্যাপকের
মৃত জওয়ান আলতাফ আহমেদ-এর বাড়ি কর্নাটকে। যেখানে কিছুদিন আগেই ঘটে যাওয়া হিজাব বিতর্কের আঁচ এসে পড়েছিল গোটা দেশের উপরেই। শুরু হয়েছিল ধর্মের কারণে একে অন্যকে দোষারোপ করা। আর তার প্রেক্ষিতেই এই কথাগুলি বলেছিলেন ওই জওয়ান। স্পষ্ট করেই জানিয়েছিলেন, এমন ঘটনার সামনে দাঁড়িয়ে সেনারা আহত বোধ করেন। আসলে জাত কিংবা ধর্মের আগে দেশের কথা ভাবা উচিত আমাদের।
দেশের কাজ করতে করতেই প্রাণ দিয়েছেন আলতাফ। দেশের যে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তাঁরা প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছেন, অন্তর্কলহে জড়িয়ে পড়ে সেই সার্বভৌমত্বকে আমরা ক্ষুণ্ণ করছি কি না, তা দেখার ভার কিন্তু আমাদের উপরেই।