অলস কিংবা লেটলতিফদের কথায় কথায় শুনতে হয় তোর তো বাপু আঠেরো মাসে বছর। কিন্তু এমন কিছু মানুষও পৃথিবীতে রয়েছেন, যাঁদের সত্যি সত্যিই তেরো মাসে বছর! না না, বিদ্রুপ করে নয়, আসলেই তাঁদের ক্যালেন্ডার আলাদা বাকিদের থেকে। জানেন কোন দেশে এমনটা হয়? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সে দেশে সময় যেন একটু বেশিই আস্তে আস্তে চলে। ক্যালেন্ডারের পাতাও বদলায় দেরিতে। অন্যান্য দেশের তুলনায় ৭ বছর ৮ মাস পিছিয়ে রয়েছে এই দেশ। তাই এ বছর ২০২২-এ নয়, সবে ২০১৩ সালে পা দিয়েছে দেশটি।
পূর্ব আফ্রিকার ইথিওপিয়া। আফ্রিকার বহু দেশের মতোই এই দেশও আর্থিক ভাবে বেশ পিছিয়ে। শুধু আর্থিক দিক থেকেই নয়, সময়ের দিক থেকেও বেশ পিছিয়ে এরা। হবে নাই বা কেন! এদের তো তেরো মাসে বছর হয়। ভাবছেন নিশ্চয়ই! এমন আবার কখনও হয় নাকি!
আরও শুনুন: উপরে আকাশ নীল, নিচে নদীর বুকে রামধনু! কোথায় দেখা মিলবে এই রঙিন নদীর?
হবে নাই না কেন? আসলে এখানকার ক্যালেন্ডারটাই যে আলাদা। পাশ্চাত্য অর্থাৎ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে যিশু খ্রিষ্টের জন্মের বছরটাকে যে ভাবে হিসেব করা হয়, তাদের থেকে একেবারে আলাদা তাঁদের অর্থোডক্স ক্যালেন্ডার তথা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। ফলে তারা পিছিয়ে রয়েছে প্রায় সাড়ে সাত বছর।
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের আগে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারকেই মেনে চলত গোটা বিশ্ব। তবে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার আসার পরে বদলে যায় সময়, দিন, মাস, বছর মাপার পদ্ধতি। তবে সেই নয়া পদ্ধতি মানতে আপত্তি জানিয়েছিল অনেক দেশই। তাদের মধ্যেই অন্যতম ছিল এই ইথিওপিয়া। আর সব দেশ পাল্টালেও কট্টোরবাদী এই দেশ কিন্তু নিজেদের ক্যালেন্ডার বদলে ফেলতে একেবারেই রাজি হয়নি।
ক্যালেন্ডার আলাদা হওয়ায় নববর্ষও পালিত হয় সেখানে অন্য ভাবে। ১১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন বছরের সূচনা হয় সেখানে। লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষের ক্ষেত্রে বছর শুরু হয় ১২ সেপ্টেম্বর থেকে। তবে ইথিওপিয়াবাসীর জন্য কিন্তু হিসেব অতটাও কঠিন নয়। প্রতি মাসে সেখানে ৩০টি করে দিন থাকে। আর তেরোতম মাসে থাকে অতিরিক্ত ছয়-সাত দিন। অর্থাৎ ইংরেজিতে যাকে বলে ‘ফরগটন ডেজ’, তার জন্য ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডারে বরাদ্দ করা হয় একটা গোটা মাস। একটা গোটা দিনকে সময়ে বেধে ফেলার ক্ষেত্রেও বেশ অন্যরকম হিসেবি তাঁরা।
আরও শুনুন: একটাও রাস্তা নেই এ গ্রামে! জানেন কীভাবে যাতায়াত করেন এখানকার মানুষ?
তবে নিজস্ব দিনপঞ্জির জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বেশ অসুবিধায় পড়তে হয় এ দেশের বাসিন্দারা। ধরুন, কেউ দেশের বাইরে বেড়াতে যাচ্ছেন, হোটেল কিংবা উড়ান বুক করতে হবে, সে সব ক্ষেত্রে বেশ নাকাল হতে হয় তাঁদের। হবে নাই বা কেন, সব ক্ষেত্রে সাড়ে সাত বছর এগিয়ে হিসেব করতে হয় যে। তবে সে যত অসুবিধাই হোক না কেন, কোনও চাপের মুখেই নতিস্বীকার করেনি ইথিওপিয়ার ক্যালেন্ডার। নিজেদের সময় মতোই নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করেন এ দেশের মানুষ।