সারমেয়দের মন্দির। এ মন্দিরে পূজিত হন কুকুরেরা। কার্যত এই ভাবনা থেকেই পথচলার শুরু। তবে খাতায় কলমে পুজোঅর্চনা নয়, বরং সারমেয়কুলকে ভাল রাখা, যত্নআত্তি করা, এবং তাদের জন্য পাকাপাকি আশ্রয়ের ব্যবস্থা করাই উদ্দেশ্য এই ‘ডগস টেম্পল’-এর। কোথায় রয়েছে এমন আজব মন্দির? শুনে নিন।
রাজস্থানে ইঁদুরদের জন্য রয়েছে মন্দির। সেখানে দেবজ্ঞানে পূজিত হয় মূষিক সম্প্রোদায়। বাংলার ষষ্ঠীদেবীর বাহন বলে নামডাক রয়েছে বিড়ালদেরও। আর গরুদের কথা তো এ দেশে বলাই বাহুল্য।
প্রিয় পোষ্যের তালিকায় উপরদিকে থাকলেও কুকুরদের মধ্যে দেবত্ব আরোপের চেষ্টা এ ভারতে অন্তত তেমন ভাবে দেখা যায়নি।
তাই অনেক সময়েই নানাবিধ রকমের দুঃছাই সহ্য করতে হয় সারমেয়কুলকে। বিশেষত রাস্তার কুকুরদের তো বটেই। অনেক ক্ষেত্রেই কুকুরদের একটা সময় পরে তাড়িয়ে দেন মালিকেরা। খাবারদাবারের অভাবে রোদে জলে কষ্ট পেতে হয় সে সব পরিত্যক্ত পোষ্যদের। এদিকে, এই প্রাণীটির কিন্তু তাঁদের মনিবদের জন্য বিশ্বাস, ভালবাসায় ফাঁক পাবেন না এতটুকুও। অথচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার দাম পায় না এই অবোলারা। অনেকেই আবার এই কুকুর প্রাণীটিকে বিশেষ পছন্দ করেন না। মারধর, বিষ দিয়ে মেরে ফেলা, এসব ঘটনাও তাই খুব একটা বিরল নয়।
আরও শুনুন: দেবতাজ্ঞানে পুজো করা হয় ইঁদুরকে, দেশের কোথায় আছে এমন মন্দির?
এই সারমেয়কুলের জন্যই গোয়ায় রয়েছে এক আজব মন্দির। আরামবোল অঞ্চলের মান্দ্রেম এলাকার এই মন্দিরটির কিন্তু বেশ নামডাক। আর তা খ্যাত ‘ডগস টেম্পল’ বলেই। কী ভাবছেন? এখানে দেবতা হিসেবে পূজিত হয় কুকুরেরা? আজ্ঞে না। পুজো অর্চনার কোনও বিষয়ই নেই এখানে। বরং রয়েছে এক কুকুরপ্রেমীর সামান্য প্রচেষ্টা।
সমুদ্র সৈকতের ধার ঘেষেই রয়েছে এই ডগস টেম্পল। কম করে হলেও একোশোটির কাছাকাছি কুকুরের পাকাপাকি বসতবাড়ি সেটা। তাদের বেশিরভাগই পরিত্যক্ত কুকুর। আবার তার মধ্যে স্ত্রী কুকুরের সংখ্য়াটা আশ্চর্যজনক ভাবে বেশি। কারণ স্ত্রী কুকুরদের পুষতে অনীহা রয়েছে অনেকেরই।
অনেকেই দেখতে আসেন গোয়ার এই বিখ্যাত ডগস টেম্পল। না, পুজো দিতে নয়, বরং কুকুরদের টানেই এখানে আসেন বহু সারমেয়প্রেমী। বছর পাঁচেক আগে শুরু হয়েছিল এই কর্মকাণ্ড। নেপথ্যে ছিলেন জার্মানির বাসিন্দা ইনগো। গোয়ায় এসে তিনি পাকাপাকি ভাবে তৈরি করেছিলেন এই বিশেষ সারমেয়-হোমটি। সেই থেকেই অসহায় কুকরদের উদ্ধার করার কাজটি করে চলেছেন ইনগো। তার মধ্যে কোনও কুকুর অন্ধ, কেউ বা স্থানীয় মানুষের হিংসার শিকার, কোনওটাকে আবার তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
তাদের নিয়মিত খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা থেকে সমুদ্র সৈকতে হাঁটাতে নিয়ে যাওয়া সবটাই করেন ইনগো নিজের হাতে। প্রতিদিন সকাল ন-টা থেকে সাড়ে ন-টার মধ্যে বাসিন্দাদের জন্য খাওয়ার আয়োজন সেরে ফেলেন তিনি। তাদের ভ্যাকসিন থেকে শুরু করে চিকিৎসা, সব দায়িত্বই হাসিমুখে পালন করেন ইনগো।
আরও শুনুন: রহস্যভেদে গোয়েন্দাদের পছন্দ বিশেষ প্রজাতির সারমেয়, কী তাদের গুণ জানেন?
সমুদ্রসৈকতে ইনগোর সারমেয়বাহিনীকে দেখে অনেক সময়েই আপত্তি প্রকাশ করেছেন মৎস্যজীবীরা। তবে তাতে লাভের লাভ কিছু হয়নি। বরং অনেকেই আজকাল ইনগোর কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। বাড়ি থেকে কুকুরদের জন্য রান্না করা খাবার নিয়ে এসেছেন। কুকুরদের সঙ্গে খেলাধুলোও করেছেন। তবে করোনার সময় ঝুঁকি এড়াতে বেশ কিছু বিধিনিষেধ ছিল ইনগোর ‘ডগস টেম্পল’-এ। তাঁর আশ্রয়ে কুকুরদের গলায় চেন বাঁধার নিয়ম নেই। তবে ইদানীং অনেকেই ভালবেসে সারমেয়দের জন্য কলার, নানারঙের খেলানা, বিছানা, বালিশ এসব দিয়ে যান। বাচ্চারা আসে কুকুরদের সঙ্গে খেলতে। এসব দেখে ভাল লাগে ইনগোর।
আপাদমস্তক কুকুরপ্রেমী জার্মান এই যুবক। দিনের সমস্ত সময়টাই তিনি ব্যায় করেন এই কুকুরদের জন্য। তাদের যত্নে এতটুকু ত্রুটি কোনও মতেই বরদাস্ত করতে চান না ইনগো। তাঁর মন্দিরে সমস্ত ক্ষণ চলে সেই সাধনাই। সত্যি সত্যিই কুকুরদের দেবতা কোথাও থেকে থাকলে সম্ভবত তিনি রয়েছেন গোয়ার এই মন্দিরেই। কারণ ইনগো খুব যত্নে গড়ে তুলেছেন এখানে কুকুরদের স্বর্গ। আর সেই স্বর্গ নিজের চোখে দেখতে চাইলে একবার ইনগোর এই মন্দিরে কিন্তু ঘুরে আসতেই হবে পর্যটকদের।