গাছ থেকে মাটিতে খসে পড়ে আপেল। আর বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের মাথায় খেলে গেল বিদ্যুৎ। মহাকর্ষ সূত্র আবিষ্কারের গোড়ার গল্প হিসাবে অনেকেই এই কাহিনিটিকে বিশ্বাস করেন। আবার এ নিয়ে মতভেদও আছে। সে যাই হোক, কথা হল, নিউটন সাহেবের আগেই এর হদিশ দিয়েছিলেন একজন ভারতীয় বিজ্ঞানী। সত্যি বলতে আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা বহু জিনিসই আবিষ্কৃত হয়েছে ভারতে, যা আমরা তেমন করে মনে রাখিনি। আসুন আজ সেই সব গল্প শুনে নেওয়া যাক।
ভারতবর্ষের জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চার ইতিহাস বহু প্রাচীন। এই দেশের মাটিতে একদিকে যেমন আধ্যাত্মিক সাধনা হয়েছে, সমান্তরাল ভাবেই এগিয়েছে বিজ্ঞান চর্চাও। দুই স্রোতের ধারাই সমান সমৃদ্ধ। আজ এমরা এমন বহু জিনিসের সঙ্গে পরিচিত যার সূত্রপাত বিদেশে বলে ভুল করি আমরা। তবে উৎসের খোঁজে বেরোলে সেই ভুল ভাঙতে বাধ্য। যেমন এই মহাকর্ষ সূত্র দিয়েই শুরু করা যাক। এর সঙ্গে নিউটন সাহেবের নাম ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। তবে তাঁর আবিষ্কারের ঢের দিন আগেই এমন এক তত্ত্বের হদিশ পেয়েছিলেন মহাগণিতজ্ঞ আর্যভট্ট। পৃথিবী ঘুরছে, অথচ কই কোনও জিনিস ছিটকে বেরিয়ে যাচ্ছে না তো! তবে নিশ্চয়ই এমন কোনও শক্তি রয়েছে, যা সমস্ত জিনিসকে আটকে রাখছে পৃথিবীর সঙ্গে। ব্যাখ্যা করেছিলেন আর্যভট্ট। অর্থাৎ খতিয়ে দেখতে গেলে, মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব আবিষ্কারের সঙ্গে এই ভারতভূমিরও যোগাযোগ আছে।
আরও শুনুন: একসঙ্গে চার্জ দেওয়া সম্ভব ৫০০০ ফোনে, দৈত্যাকার পাওয়ার ব্যাঙ্ক বানিয়ে তাক লাগালেন যুবক
আবার এই যে ধরুন, চোখে ছানি পড়লে অপারেশন করা হয় – এর সূত্রপাত হয়েছিল ভারতেই, তৃতীয় শতকে আচার্য সুশ্রুতের হাত ধরে। তাকে শল্যচিকিৎসার জনকও বলা হয়। জবামুখী শলাকা নামক বিশেষ এক ধরনের সুচ দিয়ে অস্ত্রোপচার করতেন তিনি। তবে সে সময় বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল এই সার্জারি। তাই খুব প্রয়োজন না হলে অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নিতেন না।
ইদানিং তো প্লাস্টিক সার্জারির বহুল চল। পছন্দসই নাক, মুখ কিংবা চিবুক পেতে প্রায়শই অস্ত্রোপচারের সাহায্য নেন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। এই ব্যাপারটিরও উদ্ভব কিন্তু সুশ্রুতের হাত ধরেই। খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ শতাব্দীতে এই ব্যাপারটির সূচনা। সে সময় দাগী অপরাধীদের শাস্তিস্বরূপ মুখ বিকৃত করে দেওয়া হত, যাতে সাজা অতিক্রান্ত হলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে না পারে তারা। তবে সেই অপরাধীদের সামাজিক জীবন ফিরিয়ে দিতেই সুশ্রুত শুরু করেছিলেন এই বিশেষ অস্ত্রোপচার। যা এখন পরিচিত প্লাস্টিক সার্জারি নামে।
আরও শুনুন: মুক্তিযুদ্ধের দরুন পাওয়া গেল ORS, বিশ শতকের সেরা আবিষ্কারের কৃতিত্ব তিন বাঙালির
তারপর ধরুন, চুলের যত্ন নিতে আমরা কে না শ্যাম্পু ব্যবহার করি! কখনও ভেবেছেন প্রথম কোথায় কীভাবে সূত্রপাত হয়েছিল এই প্রসাধনী দ্রব্যটির? এবারও আমাদের ফিরে তাকাতে হবে ভারতের দিকেই। শ্যাম্পু শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ ‘চ্যাপ্যাথি’ থেকে। এই শ্যাম্পুর শুরুটা হয়েছিল ষোড়শ শতকে গুরু নানকের হাতে। আমলা, শিকাকাই ও জবার রস দিয়ে একটা মিশ্রণ বানিয়ে সেসময় তা মাথা পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার করা হত। পরবর্তীকালে সেই ধারণাকেই কাজে লাগিয়ে আধুনিক শ্যাম্পু তৈরি করেন ব্রিটিশরা।
বাকি অংশ শুনে নিন।