গুপ্তচর এক রাজকন্যা। একদিকে টিপু সুলতানের বংশধর, একদিকে বিদেশি মায়ের মেয়ে। মহাত্মা গান্ধীর অনুগামী, আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের বিপক্ষের চরও। নুর এনায়েত খানের জীবনটা নিজেই যেন একটা রুদ্ধশ্বাস নাটক। শুনে নেওয়া যাক এই সাহসী মেয়ের গল্প।
জেলের ছোট্ট সেলের ভিতরে আলো আসে না। দুই দেওয়ালের মধ্যে ব্যবধান এতটাই কম যে সোজা হয়ে হাত পা মেলে শোয়ার পর্যন্ত জায়গা মেলে না। দুপুরে আর রাতে গরাদের নিচ দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় একবাটি খাবার। অখাদ্য। পালানোর কোনও উপায় নেই, তবুও বন্দির হাতে পায়ে ভারী শিকল।
এত সতর্কভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে কাকে? নিশ্চয়ই কোনও বিপজ্জনক কয়েদি? ভয়ংকর অপরাধের আসামি?
আরও শুনুন: পরমবীর চক্রের নকশা বানিয়েছিলেন এই বিদেশিনী, চেনেন তাঁকে?
হ্যাঁ। বিপজ্জনক তো বটেই। তিন মাস ধরে মানুষের ত্রাস নাৎসি বাহিনীর খবরাখবর যে মেয়ে একা হাতে পাচার করে গিয়েছে মিত্রপক্ষের হাতে, সে ভয়ংকর শত্রু নয়? সাক্ষাৎ শমন যে গেস্টাপো বাহিনী, তাদের কবল থেকে পর্যন্ত পালানোর চেষ্টা করেছে দুবার। তাই কনডেমড সেলে একা একা বন্দি সেই মেয়ে। বংশপরিচয়ে যে কিনা সুদূর ভারতের এক রাজকন্যা।
হ্যাঁ। জন্ম রাশিয়ার মস্কো শহরে। কিন্তু বংশলতিকা জানায়, ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামা দাক্ষিণাত্যের বীর শাসক টিপু সুলতানের নাতনির নাতির মেয়ে ইনি। গায়ক এবং সুফিবাদের প্রচারক এনায়েত খান আর ওরা রে বেকারের প্রথম সন্তান, নুর এনায়েত খান। শান্তির মন্ত্রে বিশ্বাসী এক পরিবার পেয়েছিলেন নুর, আর যুদ্ধের আবহে টালমাটাল এক পৃথিবী। জন্মের মাত্র সাত মাস পরেই শুরু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, আর সেই থেকেই তাঁর ঠাঁইনাড়া হওয়ারও শুরু। যুদ্ধ এড়াতে প্রথমে রাশিয়া থেকে লন্ডন, আরও পরে প্যারিসে গিয়ে পৌঁছায় তাঁর পরিবার। তেরো বছর বয়সেই বাবাকেও হারান নুর।
আরও শুনুন: নারীপ্রগতির মশাল জ্বালিয়ে চলে গেলেন কমলা ভাসিন
যুদ্ধের কারণে নিজের শৈশব যেভাবে বিক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল, সেই ক্ষত ভুলতে পারেননি নুর এনায়েত খান। তাঁর যৌবনে ফের হানা দিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকা। এবার আর হাত গুটিয়ে বসে থাকতে চাইলেন না মেয়েটি। মানবতার শত্রু হিটলারের বিপক্ষে যাওয়ার পথটাই বেছে নিলেন তিনি। এদিকে গান্ধীর মতবাদের ভক্ত, সরাসরি সশস্ত্র সংগ্রামে যোগ দেওয়া তাঁর নীতিবিরুদ্ধ। অতএব যোগ দিলেন ব্রিটেনের গুপ্তচরের কাজে।
শুনে নিন বাকি অংশ।