চোখ যে কথা বলতে পারে, সে আমরা জানি। মুখের ভাষার থেকেও অনেক সময় কাজের হয়ে ওঠে চোখের ভাষা। আমরা এ-ও জানি, হৃদয়ের কথা বলতেও চোখের জুড়ি মেলা ভার। এবার সেই চোখ দেখেই হার্টের অসুখ অবধি চিনে ফেলার আয়োজন করলেন বিজ্ঞানীরা। আসুন, শুনে যাওয়া যাক।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি অস্তিত্বের সংকটে ফেলে দেবে মানবসভ্যতাকে? এরকম প্রশ্ন যে উঠছে না, তা কিন্তু নয়। তবে সদর্থক ব্যবহারে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে বরং মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার কাজেই লাগানো যেতে পারে। সেই কাজেই যেন একধাপ এগোলেন বিজ্ঞানীরা। চোখ দেখেই কী করে হার্টের সমস্যা ধরা যায়, তা শনাক্তকরণে কাজে লাগালেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকেই।
আরও শুনুন – ওমিক্রনের প্রভাবে শরীর মাত্রাতিরিক্ত দুর্বল! নিজেকে চাঙ্গা রাখবেন কীভাবে?
চিকিৎসকরা বলছেন, হার্টে যদি কোনও সমস্যা হয়, তবে রেটিনার ব্লাড ভেসেলে সূক্ষ্ম পরিবর্তন ধরা পড়ে। যদি কোনোভাবে সেই পরিবর্তন আগেভাগেই ধরে ফেলে যায়, তাহলে হার্টের অসুখের ঝুঁকি এড়ানো অনেকটা সহজ হয়। বলাই বাহুল্য, রেটিনার ওই সূক্ষ্ম পরিবর্তন চিনতে পারা সহজ নয়। তা ছাড়া ব্যক্তিবিশেষে তা আলাদাও হতে পারে। তবে সাধারণ একটা প্যাটার্ন নিশ্চিতই থাকতে পারে। এই ভাবনা থেকেই কাজে নামেন ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ লিডস-এর একদল গবেষক। সেই কাজে তাঁরা সাহায্য নেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার।
আরও শুনুন: রাত জাগার কারণে দিনভর ক্লান্ত লাগে! নিজেকে তরতাজা রাখবেন কীভাবে?
হার্টের অসুখজনিত প্যাটার্নটি চিহ্নিত করার জন্য তাঁরা ৫০০০ জন ব্যক্তির হার্ট এবং রেটিনা স্ক্যানের ডেটা সংগ্রহ করেন। সহজ করে বলতে গেলে, হৃদযন্ত্রের পরিবর্তনের দরুণ রেটিনায় ঠিক কী পরিবর্তন আসতে পারে, সেই সংক্রান্ত বিপুল তথ্য হাতে পেয়ে গেলেন তাঁরা। এই তথ্য বিশ্লেষণ করেই তাঁরা একটি সিস্টেম তৈরি করেন। যা রেটিনা দেখে বলে দিতে পারে হার্টের অবস্থা। ব্যক্তিবিশেষে সামান্য তফাৎ হতেও পারে। তবে কয়েক হাজার ডেটার ভিত্তিতে তৈরি এই প্যাটার্ন অনেকটাই নিখুঁত। গবেষকদের দাবি, এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ নিখুঁত ভাবে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব। এই পুরো কাজটি যাঁর তত্ত্বাবধানে হয়েছে, তিনি হলেন অধ্যাপক অ্যালেক্স ফ্র্যাঙ্গি। তিনি বলছেন, ঠিকঠাক কাজে লাগালে এই সিস্টেম হার্টের অসুখ চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। সাধারণত, রেটিনা স্ক্যানের খরচ কম। আর চোখের দৃষ্টি পরীক্ষার কারণে বহু মানুষই তা করেই থাকেন। নিয়মিত হার্টের পরীক্ষা না করালেও, সাধারণ ভাবে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করে থাকেন অনেকেই। ফলে, যদি কারোর হার্টের সমস্যা থেকেও থাকে, তবে তা ধরা পড়ে যাবে চোখ পরীক্ষার সময়েই। এবং তাও বাড়াবাড়ি হবার অনেক আগেই। সেইমতো আরও পরীক্ষা করে চিকিৎসা করলে বড় ক্ষতি এড়ানোও সম্ভব হবে।
আরও শুনুন: শীতে খুশকির জেরে নাজেহাল! কী করে এড়াবেন এই সমস্যা?
বিজ্ঞানীদের তৈরি এই সিস্টেম হয়তো হার্টের অসুখ চিহ্নিতকরণের চূড়ান্ত পদ্ধতি নয়। কিন্তু নিয়মিত চক্ষুপরীক্ষার খাতিরে যদি হার্টের হালহকিকতও ধরা পড়ে, তবে মন্দ কী! আর সে কাজে মানুষের সহায় হয়ে উঠল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই।