মাঝেমধ্যেই মৃত্যু এসে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলে যায়। তবে কুছ পরোয়া নেহি। যে বিষধরদের দেখেই আতঙ্কে শিউরে ওঠেন আমজনতা, তাদের সঙ্গেই যেন যত ভাব এই ব্যক্তির। কোথাও সাপের দেখা মিললেই বনদপ্তরের আগে ফোন যায় তাঁর কাছে। পৌঁছে যান তিনি। সাপেদের উদ্ধার করাই যে তাঁর নেশা। বহু বছর ধরে এই কাজেই মনপ্রাণ সঁপেছেন কেরলের এই ব্যক্তি। কতবার যে শরীরে বিষ ঢুকেছে, ছোবল লেগেছে, তার ইয়ত্তা নেই। তবু সাপ উদ্ধারই তাঁর ব্রত। সেই কাজটাই করে যেতে চান আমৃত্যু। আসুন, শুনে নিই কেরলের সেই ‘স্নেকম্যান’-এর গল্প।
আক্ষরিক অর্থেই তিনি ‘স্নেকম্যান’। সাপেদের বিষয়ে তাঁর মতো করে জানেন, এমন লোক বোধহয় খুব কমই আছেন ভারতবর্ষে। সেই কোন ছোট বয়স হাত পাকিয়েছিলেন সাপ ধরায়। তার পর সেই কাজকেই ধ্যানজ্ঞান করে ফেলেছেন কেরলের বাসিন্দা ভাবা সুরেশ। বনদপ্তরের ফোন যাওয়ার আগে ফোন আসে সুরেশের কাছে। সাপের খবর পেলেই ছুটে যান তিনি। সাপটিকে উদ্ধার করে তুলে দেন বনদপ্তরের হাতে। তবে এ কাজের জন্য যাতায়াতের খরচ বাদ দিয়ে এক পয়সাও পারিশ্রমিক নেন না সুরেশ। সম্প্রতি সেই নেশাই টেনে নিয়ে গিয়েছিল মৃত্যুর মুখে। কিন্তু সুরেশের সাহসের কাছে হার মেনেছে মৃত্যুও। বেশ কয়েক দিন ভেন্টিলেশনে থাকার পরে অবশেষে বাড়ি ফিরেছেন ভারতীয় এই ‘স্নেকম্যান’।
আরও শুনুন: সারমেয়দের জন্য ‘মন্দির’, নিশ্চিন্তে থাকে বহু কুকুর, কোথায় আছে এই ব্যবস্থা?
সারা জীবনে ৪০ হাজারেরও বেশি সাপকে উদ্ধার করেছেন সুরেশ। তার মধ্যে দুশোরও বেশি রয়েছে কিং কোবরা বা শঙ্খচূড়। খালি হাতেই কোনও রকম সুরক্ষা-সামগ্রী ছাড়াই এত বছর ধরে সাপ ধরে আসছেন ৪৭ বছরের সুরেশ। এর জন্য বনদপ্তরের আধিকারিকেরা একাধিক বার সতর্ক করেছেন সুরেশকে। তবে সে সব বিশেষ গায়ে মাখেননি তিনি। তার ফলাফলও পেয়েছেন হাতে নাতে। এখনও পর্যন্ত হাজার তিনেক বার নানাবিধ সাপের কামড় খেয়েছেন সুরেশ। তার মধ্যে বেশ কয়েকবার রয়েছে শঙ্খচূড়ের ছোবলও। হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছে বেশ কয়েকবার। বার তিনেক থাকতে হয়েছে ভেন্টিলেশনেও। প্রতিবারই হাসপাতাল থেকে ফিরে প্রতিজ্ঞা করেছেন, এবার থেকে সতর্ক হবেন। তবে লাভের লাভ কিছু হয়নি। ফের খালি হাতেই সাপেদের উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সুরেশ। সাপ ধরার আঁকশি একটা সঙ্গে রাখেন বটে। তবে সেটা দিয়ে শিশিতে সাপ ঢোকানোর কাজ ছাড়া আর কিছুই করেন না। পুরোটাই হাতের কৌশল তাঁর।
সাপে কাটলেও বেশিরভাগ সময়ই ব্যাপারটিকে বিশেষ গুরুত্ব দেন না সুরেশ। সাপটিকে বনদপ্তরের সুরক্ষিত হাতে তুলে না দেওয়া পর্যন্ত যেন তাঁর স্বস্তি নেই। এই অবহেলার জেরে বাদ গিয়েছে হাতের দুটো আঙুল। এমনকি প্রায় অকেজো হয়ে গিয়েছে ডান হাতটিও। সুরেশের সাপ ধরার কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক বিশেষজ্ঞই। তবে কেরলবাসীদের কাছে তিনিই মসিহা। তাঁরা আজও সাপ দেখলেই শরণাপন্ন হন সুরেশের।
আরও শুনুন: হ্রদের জল ছুঁলেই নেমে আসে অভিশাপ! পাথর হয়ে যায় জীবন্ত প্রাণীরা
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ও অ্যানিম্যাল প্ল্যানেটের মতো বহু আন্তর্জাতিক চ্যানেলেই তুলে ধরা হয়েছে সুরেশের গল্প। সাপ ধরার জন্য ‘কিং কোবরা’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপও রয়েছে তাঁর। যার মাধ্যমে সুরেশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন সাধারণ মানুষ। তাছাড়া স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেলে ‘স্নেক মাস্টার’ নামে একটি অনুষ্ঠান করেন সুরেশ। একবার তো কেরলের একটি খুনের ঘটনায় পুলিশকে সাহায্য করেছিলেন সুরেশ। সেই মামলায় এক ২৫ বছরের তরুণীকে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে। স্ত্রীকে মারার জন্য বাজার থেকে একটি শঙ্খচূড় কিনেছিলেন অপরাধী। পরে সুরেশের সাহায্য নিয়ে ওই রহস্যের সমাধান করে পুলিশ।
বাকি অংশ শুনে নিন।