শহর মানেই লোকের ভিড়। শহর মানেই তাদের সুযোগ সুবিধার জন্য নানারকম উপকরণ। কিন্তু জানেন কি, এই পৃথিবীতে এমন শহরও আছে যেখানে ভিড় দূরের কথা, মানুষই নেই বলা চলে। আসুন, মাত্র একজন নাগরিক নিয়ে গড়ে ওঠা এই শহরের গল্প শোনা যাক।
শহরের ভিড়, শহরের কোলাহল, ব্যস্ততা, শব্দ… সবকিছু নিয়েই কথার পর কথা হয়ে চলে। সৃষ্টিশীল মানুষেরা অনেকেই তাই শহর ছেড়ে পালাতে চান নির্জন প্রকৃতির কোলে। জোড়াসাঁকো ছেড়ে কখনও পদ্মাপাড়ের শিলাইদহ, কখনও বা লালমাটির শান্তিনিকেতনে আশ্রয় নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। রাস্কিন বন্ড থেকে গিয়েছেন পাহাড়ের নিভৃতবাসেই। অথচ পৃথিবীর বুকে নাকি রয়েছে এমনও শহর, যা দিতে পারে এহেন কাঙ্ক্ষিত নির্জনতা। কারণ সেই শহরের লোকসংখ্যা মাত্র এক। বিশ্বাস হচ্ছে না তো? তবে খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন: শহর জুড়ে লকডাউন, রাস্তার দখল নিল বিরাট কাঁকড়া-বাহিনী
আমেরিকার মধ্যভাগে নেব্রাস্কা বলে যে অঞ্চলটি রয়েছে, তার উত্তর দিকে রয়েছে একটি শহর, মনোওয়াই। আয়তনে গ্রামের মতো, তবে সরকারি খাতায় এটি একটি মিউনিসিপ্যালিটি দ্বারা পরিচালিত শহর। শহরের সুযোগ সুবিধাও রয়েছে এখানে। রয়েছে লাইব্রেরি, যেখানে কমবেশি হাজার পাঁচেক বই ও ম্যাগাজিন রয়েছে, যার অধিকাংশই আবার দুষ্প্রাপ্য। এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার খবরের কাগজের সংগ্রহ পর্যন্ত মিলবে এই প্রত্যন্ত লাইব্রেরিতে। এই শহরে রয়েছে বার ও রেস্তোরাঁ, এমনকি মেয়রও রয়েছেন। আর চমক লাগে এটা জেনেই, যে, এই সবকিছু দেখভাল করার দায়িত্ব, আলো জল রাস্তাঘাট ইত্যাদি পুর-পরিষেবা সামলানোর দায়িত্ব এবং মেয়রের দায়িত্ব, সমস্ত পালন করেন একজন মানুষই। এলসি এলার। আর তাঁর বয়স? পঁচাশি পেরিয়েছে গত বছরেই। তবুও এ শহরের নিরাপত্তারক্ষী তিনি, আর শহরের একমাত্র বাসিন্দাও। তিনি নিজেই নিজেকে নিয়মিত ট্যাক্স দেন, আবার ট্যাক্স কালেক্টরের কাজটিও করেন। যাকে বলা যায়, সব কাজের কাজি।
আরও শুনুন: ১১টার পর ১টা বাজে এই শহরের ঘড়িতে, কেন জানেন?
আসলে চেকোস্লোভাকিয়া থেকে দেশান্তরী হয়ে আসা মানুষেরা এই শহরটি গড়ে তুলেছিলেন এককালে। ১৯ বছর বয়সে বিয়ে হওয়ার পর স্বামী রুডির সঙ্গে এই শহরে এসে সংসার পাতেন এলসিও। ১৯৩০ সালে শহরের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৫০। তারপর যা হয়, কারও কারও মৃত্যু হতে থাকে, কেউ কাজের জন্য চলে যান অন্য শহরে, সব মিলিয়ে শহরের জনসংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকে। শেষমেশ রুডি আর এলসি, এই দুজন ছাড়া এখানে আর কেউই ছিল না। আর ২০০৪ সালে রুডির মৃত্যুর পর এলসি সম্পূর্ণ একা হয়ে যান। তাঁদের দুই সন্তানও থাকেন অন্য শহরে। তবুও এক অদ্ভুত মায়ায় একাই এই গ্রামে রয়ে গিয়েছেন এলসি।
যে পৃথিবীতে ছেড়ে যাওয়াটাই একমাত্র স্থির সত্য হয়ে উঠেছে, সেখানে এমন থেকে যাওয়ার গল্প বড় ভরসা জোগায়, তাই না?