ছোটবেলায় ছোট ছোট জিনিসেই আনন্দ। হয়তো কোনও হজমিওয়ালা বা ফুচকাওয়ালা একটু বেশি দিয়ে দিয়েছেন; কেউ বা আবার বিনামূল্যে খাইয়েছেন আমাদের পছন্দের জিনিসটি। এরকম কতজনই তো থাকেন! কালের নিয়মে তাঁদের ভুলে যাই আমরা, কখনও বা আবার মনে পড়ে কথায় কথায়। তবে ছোটবেলার এমন এক বাদামওয়ালাকে ভুলতে পারেননি অন্ধ্রপ্রদেশের দুই ভাইবোন। তাই সুদূর আমেরিকা থেকে ফিরে এসেছেন সেই বাদামওলার টানে। খুঁজে বেরও করেছেন তাঁর বাড়ি। তবে তত দিনে বোধহয় বেশিই দেরি হয়ে গেছে। ছোটবেলায় পাওয়া বাদামের ঋণ কীভাবে শোধ করলেন ভাই-বোন? শুনে নিন।
নেমানি প্রণব ও তাঁর বোন সুচিথা। তখন তাদের কতই বা বয়স, দশের কাছাকাছি। অন্ধ্রপ্রদেশের এই দুই ভাই বোনেরই চিনাবাদাম খুব পছন্দের। একদিন বাবার সঙ্গে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গিয়েছিল তারা। সেখানেই বাদাম খাওয়ার বায়না ধরে দুই ভাই-বোন। বাদামওয়ালার কাছে গিয়ে বাদাম-টাদাম কেনার পরে জানা যায়, বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় টাকার ব্যাগটা আনতেই ভুলে গিয়েছেন তাদের বাবা। কিন্তু ততক্ষণে তো বাদামের অর্ধেকটা খেয়েও ফেলেছে দুই ভাই-বোন।
বাদামওয়ালা অবশ্য তাতে কিছু বলেননি। উলটে বিনামূল্যে বাদাম খাইয়েছিলেন দুই ভাইবোনকে। নিজের ক্যামেরায় সেই বাদামওয়ালার ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন তারা। জানিয়েছিলেন, একদিন না একদিন ঠিক বাদামের দাম মিটিয়ে দিয়ে যাবে তারা।
আরও শুনুন: ভাঙা খেলনা ফেলনা নয়, তা দিয়েই তৈরি হচ্ছে পশুদের জন্য হুইলচেয়ার
তার পরে কেটে গিয়েছে দশ-বারো বছর। অন্ধ্রপ্রদেশ ছেড়ে ততদিনে আমেরিকাবাসী দুই ভাইবোন। ইউ কোঠাপল্লি সৈকতের সেই বাদামওয়ালা তো কবেই ভুলে গিয়েছেন সেই ভাইবোনকে। কত লোককেই তো এমন বিনামূল্যে বাদাম খাওয়ান তিনি। তাদের সকলকে কি মনে থাকে নাকি! আমেরিকা প্রবাসী সেই ভাইবোন কিন্তু সেই বাদামওয়াকে ভোলেননি মোটেই।
এর আগেও বেশ কয়েক বার দেশে ফিরেছেন প্রণব ও সুচিথা। তবে সে সময় অনেক চেষ্টা করেও বাদামওয়ালা সত্তাইয়াকে খুঁজে পাননি তাঁরা। তবে হাল ছাড়েননি। সম্প্রতি দেশে ফিরে স্থানীয় বিধায়কের দ্বারস্থ হন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। প্রণব-সুচিথার বাবার ক্যামেরায় তোলা সত্তাইয়ার সেই ছবিটি ফেসবুকে দিয়ে দেন তিনি। নিজের পিএ-কেও এ বিষয়ে খোঁজখবর করার নির্দেশ দেন বিধায়ক।
এবং অবাক কাণ্ড, একদিন সেই বাদামওয়ালাকে খুঁজেও পেয়ে যান সেই ভাইবোন। সত্তাইয়ার গ্রামের বেশ কয়েকজনের চোখে পড়েছিল বিধায়কের সেই ফেসবুক পোস্ট। তা দেখেই বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা।
আরও শুনুন: প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে হুইলচেয়ার সম্বল করেই ৫৯টি দেশে ভ্রমণ, নজির এই মহিলার
প্রণবের বয়স এখন একুশ। আমেরিকার একটি কলেজে স্নাতক স্তরে পড়ছে সে। বোন সুচিথাকে নিয়ে একদিন সত্তাইয়ার বাড়ি পৌঁছেও গেলেন প্রণব। তবে তত দিনে বোধহয় দেরি হয়ে গিয়েছে। সেখানে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, কিছু দিন আগেই মারা গিয়েছেন সত্তাইয়া।
তবে শেষ পর্যন্ত কথা রেখেছেন দুই ভাই-বোন। সত্তাইয়ার মৃত্যুর খবর শুনে তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। বাদামের দাম তো মিটিয়েছেনই, পাশাপাশি ২৫ হাজার টাকা অর্থসাহায্য করে এসেছেন সত্তাইয়ার পরিবারকে।
কথা দিয়ে কথা রাখতে ভুলে যায় তো কত লোকেই। বিশেষত সমাজের নিম্নবর্গ মানুষের কথা আর কে-ই বা মনে রাখে! আর এ ব্যাপারে ব্যাতিক্রমী আমেরিকাবাসী এই ভাই-বোন। সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশের এই ঘটনা দারুণ ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর তার পরেই সেই তরুণ-তরুণীকে কুর্নিশ জানিয়েছে গোটা নেটবিশ্ব।