বাচ্চাদের পুরনো খেলনা, ভেঙে যাওয়া গাড়ি, খারাপ হয়ে যাওয়া বাইসাইকেল- এসব নিয়ে কী করেন? বেশিরভাগ সময়েই ফেলে দেন নিশ্চয়ই। হয়তো ফেরিওয়ালার কাছে বেচেও দেন অনেকে। কখনও কি ভেবে দেখেছেন এইসব জিনিসগুলোও কিন্তু কাজে লাগতে পারে। ধরুন, আপনার বাচ্চার ফেলে দেওয়া খেলনার দৌলতেই ফের হাঁটাচলার ক্ষমতা ফিরে পেল দুর্ঘটনায় পা হারানো কোনও কুকুর বা বিড়াল। এমনটাও কিন্তু সম্ভব। আর সেই কাজই করে দেখিয়েছেন একটি পশু উদ্ধার সংস্থার কর্মীরা। শুনে নিন সেই গল্প।
হাত-পা বা কোমর ভাঙলে মানুষের জন্য ক্রাচ আছে, আছে হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা। আছে আরও হাজারটা মেডিক্যাল সামগ্রী। কিন্তু আহত পশুপাখিদের জন্য তেমন কোনও সুবিধা নেই।
কত সময়েই তো দুর্ঘটনায় জখম হয়ে পা হারায় কুকুর-বিড়ালেরা, কখনও বা প্যারালাইজড হয়ে চলা-ফেরা একেবারে বন্ধ হয়ে যায় প্রাণীগুলোর। তাদের জন্য তেমন কোনও মেডিক্যাল প্রস্থেটিকের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।
তবে সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন প্যালেস্তাইনের গাজা শহরের একটি পশু উদ্ধার সংস্থার কর্মীরা। তা-ও আবার সব ফেলে দেওয়া খেলনা দিয়ে। সুলালা রেসকিউ সোসাইটি নামে ওই সংস্থাটি ইতিমধ্যেই ৩২টি কুকুর ও বিড়ালের জন্য কৃত্তিম অঙ্গ কিংবা হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। পুরনো ফেলে দেওয়া কাঠ এবং ধাতব জিনিসকে রিসাইকেল করেই তৈরি হয়েছে সেসব জিনিস।
আরও খবর: দুধের শিশুকে পাঠাতে হবে পার্সেল করে, কেন এমন আজব দাবি করেছিলেন মহিলা?
ওই উদ্ধারকেন্দ্রের প্রধান কর্মকর্তা ইসমাইল আল এইর জানাচ্ছেন, প্যারালাইজড বা পা হারানোর পরে ভয়ঙ্কর রকমের অবসাদের মধ্যে চলে যেতে শুরু করে প্রাণীগুলো। বারবার চেষ্টা সত্ত্বেও উঠতে, চলতে বা দৌড়তে না পারাটা ক্রমাগত হতাশার দিকে ঠেলে দেয় তাদের। সেই জায়গা থেকেই ওদের নকল পা দেওয়ার চেষ্টা শুরু। যাতে তারাও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।
ছোটদের বাতিল হয়ে যাওয়া বাই সাইকেলে এক ধরনের রাবারের চাকা ব্যবহার হয়, সেই দিয়েই ওঁরা বানিয়ে ফেলেছেন কুকুরের জন্য দিব্যি একটি হুইলচেয়ার। একটি ধাতব ফ্রেমে চাকা লাগিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। পথদুর্ঘটনায় প্যারালাইজড হয়ে পড়া একটি কুকুরের জন্যই এমন ব্যবস্থা। হার্নেসের সাহায্যে কুকুরটির শরীরের উপরের দিকটিকে তুলে দিব্যি সেট করে দেওয়া হয়েছে হুইল চেয়ারটিকে। আর সেটির সাহায্যে অনায়াসে চলাফেরাও করতে পারছে কুকুরটি। ইসমাইলই নিজেই ডিজাইন করেছেন হুইল চেয়ারটির। একটি খেলনা রেস কারের বাতিল চাকা দিয়েও এমনই আরও হুইলচেয়ার বানিয়েছেন তিনি।
আরও খবর: স্বয়ংক্রিয় মোডে চলল গাড়ি, চালকের আসনে বসেই সন্তানের জন্ম দিলেন মালকিন
এমনিতেই যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা। আপাতত হামাস জঙ্গিগোষ্ঠির দখলে রয়েছে শহরটি। ইজরায়েলি সেনার সঙ্গে দিনরাত যুদ্ধ লেগেই রয়েছে সীমান্তে। আহত মানুষের কৃত্তিম হাত পা জোগান দিতেই হিমশিম খায় শহরের দুটি প্রস্থেটিক সেন্টার। সেখানে আবার পশুপাখিদের জন্য নকল হাত পা- তৈরি, এসবই বিলাসিতার মতোই শোনায়। গাজায় পশুপাখিদের জন্য তেমন কোনও মেডিক্যাল সেন্টারও নেই। ভরসা বলতে ইসমাইলদের এই পশু উদ্ধার কেন্দ্রটিই। সবচেয়ে বড় কথা, শুধু পশুপাখিদের চিকিৎসার ব্যবস্থাই করে তা নয়, তাদের আশ্রয়ও দেয় ইসমাইলদের এই সংস্থা। অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা মাঝেমধ্যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। সেখান থেকেই কোনও মতে চলে এই কেন্দ্র।
গাজায় পশুপাখিদের জন্য আসল প্রস্থেটিকের ব্যবস্থা করা যে সম্ভব নয়, তা জানেন ইসমাইলরা। তাই বলে ভাল কাজ কি থেমে থাকে কখনও! ফেলে দেওয়া, নষ্ট হয়ে যাওয়া খেলনা থেকেই সেই ব্যবস্থা করে ফেলেছেন তাঁরা। শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারিয়ে ফেলার পরেও যাতে বেঁচে থাকার ইচ্ছে না হারিয়ে ফেলে প্রাণীগুলো, সেটুকুই চেষ্টা ইসমাইলদের।