মেয়েদের নিজস্ব উপার্জনের ব্যবস্থা, চাকরি করার অধিকার এবং সুযোগ নিয়ে বর্তমানে আলোচনা উঠছে বারেবারেই। কিন্তু নারীর উন্নয়ন নিয়ে যত কথা, যত আলাপ-আলোচনাই হোক, আদতে কতখানি স্বীকৃতি পাচ্ছে নারীর অধিকারের সংজ্ঞা? সম্প্রতি এক সমীক্ষায় উঠে এল সেই কথাই।
অর্থকরী চাকরিতে ভারতীয় মেয়েদের অংশগ্রহণের হার কেন এত কম? এর কারণ খুঁজতেই সম্প্রতি আয়োজন করা হয়েছিল এক সমীক্ষার। সত্যি বলতে, একুশ শতকে দাঁড়িয়েও মেয়েদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশ যে অনেকটাই পিছিয়ে, সে কথা তো অস্বীকার করবার জো নেই। এখনও এ দেশে বাঁচার অধিকারটুকু পর্যন্ত পায় না বহু মেয়ে। কন্যাভ্রূণ হত্যা সম্পূর্ণ রুখে দেওয়া সম্ভব হয়নি এখনও পর্যন্ত। আর শিক্ষা, কর্মসংস্থান এসবের কথা তো আরও পরে। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও, কন্যাসন্তানকে স্কুলে পাঠানোর প্রয়োজনীয়তাটাই এখনও এ দেশের বহু অভিভাবক বুঝে উঠতে পারেন না। বলাই বাহুল্য, যে, এত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে কর্মজগতের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়ানোর সুযোগ ঘটে স্বল্পসংখ্যক মেয়েরই। দেখা যাচ্ছে, এ দেশে কর্মক্ষম বয়সে থাকা ৫ জন মেয়েদের মধ্যে মাত্র একজন এমন কাজ করেন, যা তাঁকে পারিশ্রমিক দেয়। কিন্তু অর্থকরী চাকরিতে মেয়েদের অংশগ্রহণের হার কেন এত কম, সে বিষয়টি আদতে আরও জটিল- এমনটাই জানাচ্ছে এই সমীক্ষা।
আরও শুনুন: মণিপুর থেকে কান… কেন নগ্নতাকেই প্রতিবাদের হাতিয়ার করে তোলেন নারীরা?
এই সমীক্ষা অনুযায়ী, মেয়েদের অর্থকরী পেশায় কম অংশগ্রহণের কারণ খতিয়ে দেখতে গেলে কেবলমাত্র তাঁদের বেড়ে ওঠার দিকে নজর দিলে চলবে না। উপরন্তু, তাঁদের বিবাহ-পরবর্তী পারিবারিক জীবনের দিকে নজর দেওয়াটাও সমান জরুরি। এ দেশের অল্পবয়সি কোনও মেয়ে সারাদিন কীভাবে কাটায়, আর বিয়ের পরে কীভাবে সেই দিনযাপনের ধরন বদলে যেতে থাকে, মনে রাখতে হবে সেই দিকটিও। প্রতিদিনের সময়কে মেয়েরা কীভাবে ব্যবহার করছে, সেইদিকটি খতিয়ে দেখেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন সমীক্ষকেরা। ২০১৯-২০ সালে ২০ থেকে ২৯ বছর বয়সি মহিলাদের উপর ভিত্তি করে এই সমীক্ষা করা হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছে, বাড়ি এবং পরিবারের দেখভাল করা মেয়েদের ক্ষেত্রে একটি পূর্ণসময়ের কাজ। যদিও এই কাজের জন্য কোনও নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক নেই। তবুও, যাঁরা গৃহবধূ, তাঁদের দিনের অন্তত ৮ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় গৃহকর্ম সারতেই কেটে যায়, এমনটাই বলেছে ওই সমীক্ষা। এর উপরে যদি তিনি কোনও অর্থকরী পেশায় যুক্ত থাকেন, সেক্ষেত্রে কাজের সময় আরও বেড়ে দাঁড়াচ্ছে অন্তত ১০ ঘণ্টা, কখনও কখনও তার চেয়েও অনেকটা বেশি। বিশেষ করে সন্তান এবং সংসার সামলানোর কাজ সাধারণত সারাদিন ধরেই অল্পবিস্তর চলতেই থাকে, ফলে তাকে নির্দিষ্ট সময়ের গণ্ডিতে বাঁধাও মুশকিল। অবিবাহিত মেয়েদের মধ্যে যেমন নিজেদের পেশায় বেশি সময় দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা গিয়েছে, তেমন বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে কাজের বেশি সময় সংসারে দিতেই দেখা গিয়েছে বলেও জানিয়েছে ওই সমীক্ষা। পাশাপাশি, ঘর এবং বাইরের কাজ সামলাতে গিয়ে টান পড়েছে তাঁদের নিজস্ব অবকাশে, সর্বোপরি ঘুমের সময়েও।
আরও শুনুন: ২০২২-এও বদলায়নি অবস্থা, প্রায় সব ক্ষেত্রেই হাত বাঁধা মেয়েদের, বলছে মানবাধিকার কমিশন
সব মিলিয়ে দেখা গিয়েছে, অনেক মহিলাই বিয়ের পরে পূর্ণসময়ের চাকরি ছেড়ে আংশিক সময়ের কাজের দিকে ঝুঁকছেন। আকস্মিকভাবে গৃহকর্মের পরিমাণ অনেকখানি বেড়ে যাওয়াই এর জন্য দায়ী, এমনটাই মত গবেষকদের। অথচ ঘরের কাজের পরিমাণ ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করা গেলে পরিস্থিতি বদলাতে পারে অনেকাংশেই। আর তার জন্য প্রয়োজন সামগ্রিকভাবে সামাজিক মনোভাবের বদল। অন্যথায় এ দেশে অর্থকরী কাজে মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বাড়বে না আদৌ- এমনটাই মনে করছে সমীক্ষা।