হাতে ভরাট মেহেন্দিতে নেই জমকালো আলপনা। তাতে আঁকা আছে বিচ্ছেদের মর্মান্তিক নকশা। এমনই আশ্চর্য ঘটনা ঘটিয়েছেন উর্বশী ভোরা শর্মা। যে মেহেন্দির রং ঘিরে নারীর জীবনের এতখানি আবেগ, সেই শিল্পেই যেন বেমানান বেখাপ্পা ছবির অনুপ্রবেশ! কিন্তু কেন? আসুন, শুনে নিই।
বিয়ে আনন্দরঙিন মুহূর্ত শুধু নয়, বিচ্ছেদের ধূসরতাতেও জায়গা করে নিতে পারে মেহেন্দির রং। আর তাই এ দেশের এক নারীর হাত ভরেছে মেহেন্দি রঙে, তবে বিচ্ছেদের ছবিতে। কখনও সেই ছবিতে আছে জুতো পরা পায়ের তলায় পিষে যাচ্ছে একটি মেয়ের মুখ। কখনও আবার আছে ক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে একে অপরের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে স্বামী-স্ত্রী। মাঝখানে আছে বাড়ির বউটির সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির অসহযোগিতার কথা।
যে মেহেন্দির রং ঘিরে নারীর জীবনের এতখানি আবেগ, সেই শিল্পেই যেন বেমানান বেখাপ্পা ছবির অনুপ্রবেশ! এমনই আশ্চর্য ঘটনা ঘটিয়েছেন উর্বশী ভোরা শর্মা। বিয়ে যে জীবনের অন্যতম একটি ঘটনা তা অনস্বীকার্য। তবে, ভারতীয় নারীদের ক্ষেত্রে সেই বিয়ে নানা মাত্রা নিয়েই হাজির হয়। বিয়ের বয়স, বাড়ির অবস্থা,পণ দেওয়া-নেওয়া ইত্যাদি নানাবিধ অনুষঙ্গ জড়িয়ে আছে, যা কিনা একজন নারীর জীবনকে একেবারে অন্য খাতে বইয়ে দিতে পারে। বিয়ের সামাজিক নিয়ম-কানুন, যাবতীয় রীতিনীতির মধ্যে এমন অনেক কিছুই এখনও বহাল তবিয়তে আছে, যাতে পুরুষতন্ত্রের প্রভাব প্রকট। ফলত তার ভিতর যেন লুকিয়ে আছে একপেশে ভাবে মেয়েদের জন্য অসম্মান। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেই এসে এই বিষয়গুলো নিয়েই তাই ঘনিয়ে উঠেছে নারীবাদী স্বর। তবু সমাজের মরচে পড়া শিকল যেন যেতেও যেতেও যায় না।
আরও শুনুন: স্বর শুনলে কামনা জাগবে পুরুষের! নারীর কথা বলাতেই ফতোয়া জারি তালিবানদের
আর এই সবকিছুর মধ্যে যদি মেয়েটি তাঁর দাম্পত্যকে বাঁচিয়ে রাখতে না পারে তাহলে তো কথাই নেই! হাজারটা আঙুল অনায়াসে উঠবে তাঁর বিরুদ্ধে। খুঁচিয়ে বের করা হয় তাঁর স্বভাব চরিত্র, আচার-ব্যবহারের কথা। বিচারের দাঁড়িপাল্লায় ওঠে তাঁর চরিত্র। এককাট্টা পরিবেশ পরিস্থিতির জল এমন ভাবে গড়িয়ে যায় যে, এ সমাজে মেয়েটিই হয়ে পড়ে কোণঠাসা। একলা ঘর আর অবসাদ হয় তাঁর সঙ্গী। কোনও কোনও সময় এই জল গড়ায় আরও গভীরে। অসহায় হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয় কেউ কেউ।
তবে হার না মেনে কেউ কেউ চ্যালঞ্জ ছুড়ে দেয় সমাজনির্মিত আদর্শবাদের দিকে। উর্বশী ভোরা শর্মা সেই ব্যতিক্রমীদের একজন। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর সামাজিক বিবাহের আগল থেকে আইনি বিচ্ছেদ পেয়েছেন তিনি। আর ডিভোর্স পাওয়ামাত্র সেই মুক্তিকে দু’হাতে জড়িয়ে নিয়েছেন। মাধ্যম হিসেবে বেছেছেন মেহেন্দির রং। তাতে এঁকেছেন তাঁদের বিচ্ছেদের ভাঙাচোরা ছবি। দাম্পত্যে থাকাকালীন টানাপোড়েন, বিচারব্যবস্থার প্রতীকী ছবি। গোটা গোটা হরফে লিখছেন স্বস্তির কথা। ‘অবশেষে মুক্তি’। আর সবটুকুই ভিডিওবন্দি করে আপলোড করেছেন নেটদুনিয়ায়।
আরও শুনুন: ‘খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার’, নারীরা সুরক্ষিত কোথায়? প্রশ্ন তুলল রাষ্ট্রপুঞ্জের নয়া সমীক্ষা
বোঝাই যাচ্ছে একা হলেও একলা নন তিনি। মনের জোরের দিক থেকে তাঁর কাছে রয়েছে শতাধিক লোকের বল। তাই মেহেন্দির নকশায় ফুটিয়ে তুলেছেন মর্মস্পর্শী প্রতিবাদ।
নারীর সাজসজ্জা নিয়ে যে স্টিরিওটাইপ ধারণা রয়েছে তার বিরুদ্ধে উর্বশীর পদক্ষেপটি এক জোরালো অভিঘাত। তাঁর চিন্তায় নারীবাদী রাজনীতির সূক্ষ্ম প্রলেপ নেই, বরং আছে স্বতন্ত্র বিরুদ্ধাচারণ। তাই উর্বশীকে দেখে আরও অনেকেই ভবিষ্যতে তাঁদের ইচ্ছে ডানায় ভর দিয়ে এগিয়ে আসতে পারে, একথা সুনিশ্চিত করেই বলা যায়।