‘বিয়েটা করছ কবে?’ – অযৌক্তিক প্রশ্নে তিরবিদ্ধ মেয়েরা। বিয়ের মতো একটি বিষয়কে আর বাধ্যবাধকতার তালিকায় ফেলেন না তাঁরা। কিন্তু দেরিতে বিয়ের নেপথ্যে লুকিয়ে আছে কোন কারণ? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কবে বিয়ে? – এই অযৌক্তিক প্রশ্নকেই এখন প্রাসঙ্গিক করে তুলেছেন এই সময়ের মেয়েরা। বিয়ের মতো একটি বিষয়কে আর বাধ্যবাধকতায় আটকে রাখতে নারাজ তাঁরা। ফলত, সব সময় যে এ প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন তা নয়। তবে কাজে বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে, বিয়ের প্রশ্নে তাঁরা আর বাঁধা নেই। অনেক সময়ই যাঁরা এমন সিদ্ধান্ত নেন, তাঁদের ‘নারীবাদী’ বলে দাগিয়ে দেওয়ার প্রবণতা আছে সমাজে। তবে সেটুকুই কিন্তু সব নয়।
কেন বিয়ের মতো একটি বিষয়কে জীবনে খানিকটা সরিয়েই রাখছেন এখনকার তরুণীরা? আসলে, এর পিছনে আছে মহিলাদের যাপনের দীর্ঘ ইতিহাস। সেই বাল্যবিবাহের সময় থেকে শুরু করে এক প্রজন্ম আগে পর্যন্ত, বিয়ে ব্যাপারটা মহিলাদের যেন শাসনের বাঁধনেই বেঁধে রেখেছিল। এক কালে ছোটো বয়সেই কিছু ভেবে ওঠার আগেই তাঁদের বেঁধে দেওয়া হত বৈবাহিক বন্ধনে। পরে সামাজিক সংস্কারে বন্ধ হল বাল্যবিবাহ। তবে বিয়ের তাৎপর্য তাঁদের জীবনে খুব একটা বদলাল না। পরবর্তী সময়ে মেয়েদের শিক্ষাদান করা হত শুধুমাত্র বিয়ের জন্য। এবং মহিলাদের অনেকে বিশ্বাস করেও ফেলতেন যে , পৃথিবীতে যেন তাঁর জন্মই হয়েছে সংসার ধর্ম পালন করার জন্য। সময় বদলেছে। যুগ বদলেছে। আর দীর্ঘদিন চলে আসা বিয়ের এই শাসন প্রভাব ফেলেছে এখনকার সিদ্ধান্তে।
আরও শুনুন: মুক্তি রং দু’হাতে… বিয়ের মেহেন্দি যখন শোনাল বিচ্ছেদের গল্প
কী সেই প্রভাব? বিয়ের গুরুত্ব খাটো করছেন না এখনকার তরুণী। তবে তা নিয়মাবলির মতো পালন করতে তাঁরা নারাজ। বরং তাঁদের বক্তব্য, আরও অনেক কিছুর মতোই এটাও হয়ে উঠুক চয়েস। বিয়ে মানে আর কেবল সামাজিক স্বীকৃতির সিলমোহর নয় তাঁদের কাছে। বরং বিয়ে উঠুক জীবনের পথচলা। একজন উপযুক্ত সঙ্গীর সঙ্গে হাতে হাত রেখে এগোনো। বিয়ের গায়ে আগে যে বাধ্যতার ট্যাগ ছিল, তা সরিয়ে দিতে পেরেছেন এই প্রজন্মের নারীরা।
কীভাবে তা সম্ভব হল? প্রথমত, শিক্ষার ক্ষেত্রটি প্রসারিত হয়েছে। নিজেদের ইচ্ছামতো যতদূর সাধ্য এবং সম্ভব পড়াশোনা করতে পারছেন। এর হাত ধরেই এসেছে চাকরি-বাকরি, অর্থাৎ আর্থিক স্বাধীনতাও। উপার্জন যে নিরাপত্তা বয়ে এনেছে, তা জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিও অনেকখানি পালটে দিয়েছে। জীবনে কোনটা জরুরি, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন তাঁরা। সেখানে বিয়ে কি একান্ত জরুরি বিষয়? যদি কেউ তা মনে করেন, তিনি বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন। তবে, একই সঙ্গে কেউ তা মনে নাও করতে পারেন। তিনি তাঁর জীবনের প্রায়োরিটি অনুযায়ীই বিয়ের সময় ঠিক করবেন। এবং এ ব্যাপারে তাঁরা যে কারও মুখাপেক্ষী নন, সেটা তাঁদের দৃঢ় সিদ্ধান্তেই বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
আরও শুনুন: ‘খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার’, নারীরা সুরক্ষিত কোথায়? প্রশ্ন তুলল রাষ্ট্রপুঞ্জের নয়া সমীক্ষা
আর এখানেই বাধছে গোলমাল। এই সমাজ মুখে যতই প্রোগ্রেসিভ হোক না কেন, তলায় তলায় এখনও অনেকটাই রক্ষণশীল। এবং পুরুষতান্ত্রিক। ফলত কোনও তরুণী বিয়ের বিষয়ে তেমন গুরুত্ব না দিলে, তাঁকে নারীবাদী বা নাক উঁচু এরকম বিবিধ ট্যাগ দিয়ে দেওয়া হয়। যাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাঁরা কি সমাজের চলতি ধারণাতেই আঘাত হানছেন? তা খানিকটা তো বটেই। কেননা এই তরুণীরা সবার আগে বোঝাচ্ছেন যে, তাঁরা সমঝোতার প্রত্যাশী নন। বরং তাঁদের জন্য যেটা সুবিধার সেটাই তাঁরা বেছে নেবেন। তাঁরা পরিবারের ধারণারও বিরোধী নন। তবে ধারণার পরিবার ঠিক আগের মতো নয়, এবং সেখানে মহিলাদের ভূমিকাও আগের মতো নির্দিষ্ট নন। অতএব বলা যায়, জীবনের এই সিদ্ধান্তের সূত্রেই তাঁরা যেন এই সমাজটাকে নতুন করে গড়ে নিতে চাইছেন। তা সহজ হচ্ছে না সব ক্ষেত্রে। তবে, সাম্প্রতিক ট্রেন্ড বলছে সিঙ্গল থাকার চয়েসকে প্রতিষ্ঠাই দিতে পেরেছেন এই সময়ের তরুণীরা। আর সেই সূত্রেই সমাজের দৃষ্টিও বদলানো উচিত বইকি! যে কোনও কিছুতেই মহিলাদের দোষারোপ করার রীতি মেনেই যেন এই সময়ের মহিলাদের দিকে খানিক কটাক্ষের বিশেষণ ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু যে জীবনশৈলী মহিলারা গড়ে তুলছেন অনেকে, সমবেত ভাবে, তাকে গ্রহণ করে নিলেই এই সমাজের প্রগতিশীলতা স্বীকৃত হবে।
নতুন বছরে আমরা সেই কথাটা আর একবার ভেবে দেখব কী?