তথাকথিত সৌন্দর্যের ব্যাখ্যার বাইরের গিয়ে অভিনয়ের দুনিয়ায় শুরু করেছিলেন সমান্তরাল এক ধারা। যে পথ ধরে বলিউড পেয়েছে পরবর্তীকালে একের পর এক অভিনেত্রী তথা কৌতূকশিল্পীকে। গান দিয়ে শুরু হলেও একের পর এক ছবিতে কৌতূকাভিনেতা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ভারতীয় সিনেমায় কমেডিয়ান হিসেবে মেয়েদের পথচলা শুরু হয়েছিল তাঁর হাত ধরে। উমাদেবী খাতরি তথা টুনটুন এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিলেন বলিউডে, যে পরবর্তীকালে মেয়েদের ভারী চেহারা মানেই তা হয়ে উঠেছিল টুনটুনের সমার্থক। আদৌ কি তাঁর বিপুল প্রতিভার কদর করতে পেরেছিল বলিউড?
স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ানদের জন্য আলাদা করে কোনও মঞ্চ ছিল না সেসময়। কাউকে হাসানো যে একটা পেশা হতে পারে, তা ভাবাটাও বেশ কঠিন ছিল সে সময়ে। এদিকে, বিশ্ব সিনেমায় ততদিনে পা রেখে দিয়েছেন চার্লি চ্যাপলিন। শুধুমাত্র শরীরী ভাষা দিয়ে যে কৌতুক অভিনয়ের একের পর এক দরজা খুলে দেওয়া যায় তা প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনি।
আরও শুনুন: সানাই মেয়েদের জন্য নয়! চলতি ধারণা ভেঙেছিলেন দেশের প্রথম মহিলা সানাই-বাদক বাগেশ্বরী
চার্লি চ্যাপলিনের থেকে সেসময়ে ব্যাপক ভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন নুর মহম্মদ মেমন। এত সুনিপুণ ভাবে চার্লি চ্যাপলিনকে নকল করতেন তিনি, যে তাঁর নামই হয়ে গিয়েছিল নুর মহম্মদ চার্লি। ভারতীয় সিনেমায় কমেডির নতুন ধারা শুরু হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই। সে সময় নাজির মহম্মদ বা মনোহর দীক্ষিতের মতো কৌতুকাভিনেতাদের থেকে তাঁর অভিনয় ছিল একেবারেই আলাদা। নুর মহম্মদ চার্লির দেখানো পথেই হিন্দি সিনেমা পেল জনি ওয়াকার বা মেহমুদের মতো কৌতুকাভিনেতাদের। তবে তখনও সে জগতে মেয়েদের প্রবেশ ছিল এক্কেবারে নিষিদ্ধ। তবে সেই বাধার পাহাড় ভাঙলেন এক অভিনেত্রী। চিরাচরিত সমাজ যেভাবে নারীদের দেখতে অভ্যস্ত, সেই ধারাটাকেই উল্টেপাল্টে দিলেন তিনি। কৌতুকাভিনয় আর যে কেবল পুরুষদের জায়গা নয়, তা ভাল মতোই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন এই অভিনেত্রী। বলিউড তাঁকে চিনত টুনটুন নামে।
খাতায় কলমে নাম উমাদেবী খাতরি। নেপথ্যগায়িকা হিসেবে পা রেখেছিলেন বলিউডে। তবে অভিনয়ের জন্য বেছে নিয়েছিলেন ওই ছদ্মনাম। মুখে একটি শব্দও উচ্চারণ না করেও যেভাবে শুধুমাত্র অভিনয় দিয়ে দর্শকদের অন্য ভুবনে নিয়ে যেতে পারতেন চার্লি চ্যাপলিন, সেই ঘরানাটিকেই গ্রহণ করেছিলেন উমাদেবী।
আরও শুনুন: কেবল রুপোলি পর্দা নয়, কমিকসের পাতাতেও সুপারহিরো রূপে এসেছিলেন বিগ বি
উমার জন্ম উত্তরপ্রদেশের আমরোহা জেলার একটি ছোট্ট গ্রামে। জমি নিয়ে বিবাদের জেরে খুন হতে হয়েছিল বাবা-মা-ভাইকে। তখন উমার বয়স আড়াই কি তিন। স্বজনহারা ছোট্ট মেয়েটিকে কী পরিমাণ অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে বড় হতে হয়েছে, তা আঁচ করা যায় সহজেই। এক এক্সাইজ কর্তার হাত ধরেই দেশভাগের সময় চলে গিয়েছিলেন পাকিস্তানে। তবে সেখানে মন টেকেনি তাঁর। পালিয়ে এসেছিলেন বম্বেতে। এসে সোজা চলে যান সুরকার নওশাদ আলির কাছে। উমার গান শুনে তাঁকে তৎক্ষণাৎ তাঁকে পছন্দ করে ফেলেন নওশাদ। ‘নাজির ওয়ামিক আজরা’ নামে একটি ছবিতে গান দিয়ে বলিউডে পা রাখেন উমা।
শুনে নিন বাকি অংশ।