মনের জোর থাকলে অতিক্রম করে ফেলা যায় যে কোনও বাধাই। প্রথমে ক্যানসারের মতো মারণ রোগ জয়, তারপর একার উদ্যোগে নিজের বাণিজ্যিক সংস্থা তৈরি করে ফেলা, একের পর এক হার্ডল টপকে সে কথাই প্রমাণ করে দিচ্ছেন কণিকা টেকরিওয়াল। সঙ্গে সাহস জোগাচ্ছেন অন্যান্য মেয়েদেরও। শুনে নেওয়া যাক তাঁর কথা।
ব্যবসাবাণিজ্যের জগতে মেয়েরা পা রেখেছেন অনেকদিনই। অনেক ক্ষেত্রে পিতৃতান্ত্রিকতার শিকার হতে হয়েছে তাঁদের, অনেক সময় কাজ করার আগেই তাঁদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কিন্তু সে সবকিছুর সঙ্গে মোকাবিলা করে তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, এত সহজে লড়াইয়ের ময়দান ছাড়ছেন না তাঁরা। এবং, সত্যিই, তাঁদের মধ্যে অনেকেই এই পেশাদার দুনিয়াতে একাধিক শিরোপা অর্জন করে ফেলেছেন। তবুও, কোনও কোনও লড়াই বুঝি আলাদা করে উল্লেখের দাবি রাখে। যেমন, কণিকা টেকরিওয়াল-এর পথচলা।
আরও শুনুন: স্টার্ট আপ থেকে পথচলা শুরু করে কোটিপতি, স্বনির্ভর মহিলাদের অনুপ্রেরণা ফাল্গুনী নায়ার
কেন বলছি এমন কথা? তবে খুলেই বলা যাক।
যখন মাত্র ২২ বছর বয়স, তখনই কণিকা জানতে পারেন তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছে মারণ রোগ ক্যান্সার। হাল ছেড়ে দেননি তিনি। বরং যতরকম ভাবে সম্ভব, লড়াই করেছেন এই ভয়ংকর রোগের সঙ্গে। অবশেষে রোগই পিছু হটেছে। আর সুস্থ জীবন ফিরে পেয়েই নতুন উদ্যমে স্বপ্নপূরণের পথে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন কণিকা টেকরিওয়াল।
কী সেই স্বপ্ন?
আরও শুনুন: তালিবানি শাসনেও মেয়েদের রেডিও স্টেশন থেকে জারি সম্প্রচার, হার মানছেন না আফগান মেয়েরা
ভারতের অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি, অর্থাৎ উড়ান বাণিজ্যের শরিক হতে চেয়েছিলেন কণিকা। ২২ বছর বয়সে ক্যান্সার ধরা পড়া, আর নিজের স্বপ্নের সংস্থা গড়ে তোলা, এই দুয়ের মধ্যে কতদিন সময় ছিল জানেন? মাত্র দুবছর সময় নিয়েছিলেন কণিকা। তাঁর সংস্থা ঠিক চলতি বিমান সংস্থাগুলির মতোও নয়। আজকাল বড় বড় শহরে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা যেমন গাড়ি ভাড়া দেয়, অনেকটা সেরকম ধাঁচেই বিমান ভাড়া দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। অর্থাৎ একটি সংস্থাই একাধিক চার্টার্ড বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে, আবার যিনি বিমান ভাড়া নিতে চান তাঁর সঙ্গেও যোগাযোগ করিয়ে দেবে। ভাড়া এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধা নির্দিষ্ট করার দায়ও ওই সংস্থারই। সোজা কথায়, উভয়ের মাঝে সংযোগের কাজটাই করবে ওই সংস্থা। বলাই বাহুল্য, এই পুরো ব্যবস্থাটাই উপভোক্তাদের জন্য অনেক বেশি সুবিধাজনক। ২০১৩ সালে মাত্র ৫৬০০ ডলার মূলধন নিয়ে নিজের কোম্পানি ‘জেটসেটগো’ খুলে ফেলেন কণিকা টেকরিওয়াল। চার্টার্ড বিমান বুক করার জন্য একটি অ্যাপ তৈরি করেন তিনি, যার মাধ্যমে কেউ নিজের চাহিদামতো বিমান বুক করে ফেলতে পারবেন ঘরে বসেই।
বর্তমানে এই সংস্থার মূলধন দাঁড়িয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৬০০০ বিমান আর ১ লাখ উপভোক্তার মধ্যে পরিষেবা দান করেছে কণিকার সংস্থা। কোভিডকালে যখন দীর্ঘ লকডাউন চলছিল, সেই সময়ে অনেক সংস্থাই তাদের কর্মচারীদের বেতন কমিয়ে দিয়েছিল। বিশ্ব-অর্থনীতিতে রীতিমতো মন্দা চলেছিল, ছাঁটাই হয়েছিলেন প্রচুর মানুষ। কিন্তু কণিকার গোটা সংস্থায় এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। তাঁর মতে, মালিক যখন সুসময়ে কর্মীদের লভ্যাংশের ভাগ দেন না, তখন দুঃসময়ে ক্ষতির ভারও তাঁর একারই বহন করা উচিত।
কেবল অভিনব ব্যবসার পথই বেছে নেননি কণিকা, ব্যবসার জগতেও অভিনব মানবিক নজির রেখেছেন তিনি। পাশাপাশি দৃষ্টান্ত রেখেছেন সেই মেয়েদের সামনেও, যারা এগিয়ে যেতে চায়। স্বপ্ন দেখতে জানলে, আর সেই স্বপ্নের সঙ্গে অধ্যবসায় জুড়ে গেলে যে স্বপ্ন সত্যি হয়েই ওঠে, সে কথাই বুঝিয়ে দিয়েছেন কণিকা টেকরিওয়াল।