পুরাণ মতে, কারাগারের অন্ধকারে জন্ম হয়েছিল শিশু কৃষ্ণের। কিন্তু সেই অন্ধকারকে ছাপিয়ে গিয়েছিল তাঁর পরবর্তী জীবনের ঔজ্জ্বল্য। শুধু পুরাণে-কাহিনিতেই নয়, বাস্তবেও যে এমনটা ঘটতে পারে, সে কথাই সম্প্রতি প্রমাণ করে দিয়েছে এই কিশোরী। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
কথায় বলে, জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভাল। নিজের জীবনে সেই কথাকেই সত্যি করে তুলেছে এই মার্কিন কিশোরী। জেলের কুঠুরিতে যার জন্ম হয়েছিল, সে পা রাখতে চলেছে বিশ্বের প্রথম সারির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আর আশ্চর্যের কথা হল, সেখানে পড়ার সুযোগ মিলেছে তার এই অভিজ্ঞতার জোরেই।
শুনতে আশ্চর্য লাগছে? তাহলে বরং খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন: ছকভাঙা পথেই সাফল্য, বাইকে চড়ে ‘স্বাস্থ্যকর’ ফুচকা বিক্রি বি.টেক পাশ তরুণীর
সম্প্রতি মিডিয়াজগতে শোরগোল ফেলে দিয়েছে টেক্সাসের বাসিন্দা অরোরা স্কাই কেসনার। বিশ্বের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির অন্যতম হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছে বছর আঠেরোর এই মেয়েটি। মিলেছে স্কলারশিপও। কিন্তু তার ক্ষেত্রে এই যাত্রাপথটা যে খুব সুগম ছিল, এমনটা নয়। আর পাঁচটি শিশুর মতো পরিবারের আদরে, নিশ্চিন্ত নিরাপত্তায় জন্ম হয়নি তার। বরং জন্মের মুহূর্তে তাকে ঘিরে ছিল কারাগারের অন্ধকার। হ্যাঁ, মন্টগোমরির গ্যালভেস্টন কাউন্টি জেলে জন্ম এই কিশোরীর। কারণ এক অপরাধের শাস্তি হিসেবে সেই সময় জেলেই বন্দি ছিলেন তার মা। অবশ্য জন্মের কয়েকদিন পর সন্তানকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন তার বাবা। তারপর থেকে বাবার একার হাতেই মানুষ হয়েছে সে। পরে পড়াশোনার জোরেই স্থানীয় এলাকার একটি প্রকল্পে ঠাঁই হয় তার, যেখানে নিয়মিত তার দেখভাল করতেন একজন মেন্টর। তিনিই প্রথমবার অরোরাকে হার্ভার্ডে ঘুরতে নিয়ে যান। আর তখন থেকেই নিজের স্বপ্ন স্থির করে নিয়েছিল ওই কিশোরী।
আরও শুনুন: ৯ বছরে বিয়ে, স্বামীর হাতে ধর্ষণের শিকার… তবুও বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মুখ নুজুদ আলি
হার্ভার্ডে ভরতি হওয়ার জন্য আবেদন জানাতে গিয়ে নিজের জীবনের অতীতের কথা গোপন করেনি অরোরা। হাই স্কুলে পড়ার সময়েই এই নামী প্রতিষ্ঠানটিতে পড়ার জন্য নিয়মমাফিক আবেদন জানিয়েছিল সে। নিজের সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ লিখে জমা দিতে হয়েছিল সেই আবেদনপত্রের সঙ্গে। সেই প্রবন্ধের প্রথম লাইনেই অরোরা লেখে, ‘আমার জন্ম হয়েছিল জেলের কুঠুরিতে’। সাধারণত নিজের জীবনের অন্ধকার দিকের কথা বলতে অস্বস্তিতে পড়েন অনেকেই। কিন্তু বয়স যতই কম হোক, সত্যির মুখোমুখি দাঁড়াতে কোনও সংকোচ নেই অরোরার। আর শেষ পর্যন্ত মিলল তারই পুরস্কার।