ঘরের কাজে মহিলাদের শ্রম এখনও মূল্যের নিরিখে বিচার হয় না। তা নিয়ে চর্চা চলে। দেখা যাচ্ছে, জলের জোগান সেই সমস্যাটিকেই যেন অনেকখানি কমিয়ে দিচ্ছে। যেহেতু মহিলারা কাজে যোগ দিচ্ছেন, তাই সামগ্রিক অর্থনীতির ক্ষেত্রেও তাঁদের শ্রমের ভূমিকা স্বীকৃত হচ্ছে।
ঘরে ঘরে পৌঁছচ্ছে জল। প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় তাতে সুবিধা হচ্ছে দুটো। এক তো পানীয় জলের সমস্যা মিটছে। অন্যদিকে, এর দৌলতেই অন্যান্য কাজে যোগ দিতে পারছেন মহিলারা। বলা যায়, জলের কল্যাণেই বাড়ছে কর্মরতার সংখ্যা। এই দ্বিতীয় বিষয়টি এক উল্লেখযোগ্য সামাজিক পরিবর্তন হিসাবেই ধরা দিয়েছে বিশেষজ্ঞদের কাছে।
সরকারি প্রকল্প ‘জল জীবন মিশন’। উদ্দেশ্য ছিল, গ্রামীণ এলাকার ঘরে ঘরে ট্যাপে জল পৌঁছে দেওয়া। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী যখন এই প্রকল্পের সূচনা করেন, তখন ১৭ শতাংশ গ্রামীণ ঘর এই জলের সুবিধা পেত। অক্টোবর ২০২৪-এ এসে তা বেড়ে হয়েছে ৭৮.৬২ শতাংশ। অর্থাৎ, আগে যেখানে ৩.২৩ কোটি গ্রামীণ ঘরে জল পৌঁছত, এখন সেই সংখ্যাটি হয়েছে ১৫.২০ কোটি। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক এই রিপোর্ট মোতাবেক, এই প্রকল্পের দরুন উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে কর্মরত মহিলার সংখ্যা। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কাছে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কাউন্সিল যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, সেখানেও এই তথ্যটি গুরুত্বের সঙ্গেই জানানো হয়েছে। কর্মী মহিলার সংখ্যা বেড়েছে গ্রামে গ্রামে। কারণ, একটাই জলের জন্য মহিলাদের প্রতিদ্দিন যে সময় ব্যয় করতে হত, এখন তা আর হচ্ছে না। যেহেতু ঘরে জল পৌঁছে যাচ্ছে, তাই বাঁচছে জল আনার সময়। সেই সময় মহিলারা ব্যয় করছেন নানা কাজে। যে পরিবারের পেশা মূলত কৃষি, সেখানে বাড়ির কাজে অর্থাৎ কৃষিকাজে অংশ নিচ্ছেন তাঁরা। ফলত মজুরের খরচ বেঁচে যাচ্ছে। অর্থাৎ গোটা পরিবারই এর দরুন অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছে। তবে, তাতে ব্যক্তিগত ভাবে একজন মহিলা কতখানি অর্থনৈতিক ভাবে স্বনির্ভর হয়ে উঠছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে, নিঃসন্দেহে এ কথা বলা যায় যে, জল হাতের নাগালে পাওয়ার দরুন তাঁরা অন্যান্য কাজে যোগ দিতে পারছেন। শুধু কৃষি নয়, নানারকম কাজের সুযোগ হাতছাড়া করছেন না গ্রামীণ মহিলারা। ২০১৭-১৮ থেকে ২০২২-২৩ এই সময়পর্বকে বিবেচনা করে দেখলে দেখা যাবে, নগরজীবনে মহিলাদের কাজে অংশগ্রহণের থেকেও গ্রাম অঞ্চলে মহিলাদের কাজে অংশ নেওয়ার হাত তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বেশি। এসবিআই-এর তথ্য মোতাবেক, জল আনার হার যদি হাত শতাংশ কমে, তাহলে সেই প্রেক্ষিতে মহিলাদের কাজে যোগ দেওয়ার হার প্রায় ৭.৪ শতাংশ। তথ্য থেকে স্পষ্ট যে গৃহস্থালির কাজ, বিশেষতজল আনার মতো মহিলাদের অনেকটাই ঘরের গণ্ডিতে বেঁধে রেখেছিল। সেই সমস্যা মিটতেই তাঁরা কাজে যোগ দিতে প্রেছেন। যা উল্লেখযোগ্য এক সামাজিক পরিবর্তন।
ঘরের কাজে মহিলাদের শ্রম এখনও মূল্যের নিরিখে বিচার হয় না। তা নিয়ে চর্চা চলে। দেখা যাচ্ছে, জলের জোগান সেই সমস্যাটিকেই যেন অনেকখানি কমিয়ে দিচ্ছে। যেহেতু মহিলারা কাজে যোগ দিচ্ছেন, তাই সামগ্রিক অর্থনীতির ক্ষেত্রেও তাঁদের শ্রমের ভূমিকা স্বীকৃত হচ্ছে। ফলত প্রকল্পের গুরুত্ব অস্বীকারের কোনও জায়গা নেই। জলকে জীবন বলা হয়, তা যে জীবনের অভিমুখ ঘুরিয়ে দিতে পারে, এই তথ্য যেন সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।