সে দেশে মেয়েদের পায়ে পায়ে বাধা। বাইরের জগতে পা রাখা তো দূর, চার দেওয়ালের বাইরে বেরনোটুকুই তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না অনেক ক্ষেত্রে। তবুও স্বপ্ন দেখছেন সৌদি আরবের মেয়েরা। আর সেই স্বপ্নের ডানায় ভর করেই এবার বড় উড়ান দিলেন তাঁরা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
কেবলমাত্র মহিলা কর্মীদের নিয়েই আকাশে উড়ল বিমান। সৌদি আরবের ইতিহাসে এই প্রথমবার। যে দেশে মেয়েরা গাড়ি চালালে পর্যন্ত জরিমানা নেওয়ার ঘটনা শোনা গিয়েছে, সে দেশ থেকেই সমস্ত রক্ষণশীলতার নাগাল এড়িয়ে এমন উড়ান দিলেন মেয়েরা। যা স্বপ্ন দেখতে শেখাচ্ছে সৌদি আরবের ঘরবন্দি মেয়েদেরও।
আরও শুনুন: হার মানেননি রক্ষণশীলতার কাছে, সৌদি আরবের প্রথম মেয়ে হিসেবে এভারেস্ট জয় তরুণীর
সম্প্রতি রাজধানী রিয়াধ থেকে লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত শহর জেড্ডার দিকে উড়াল দিয়েছিল বিমানটি। তার সাতজন কলাকুশলীর সবাই যে মেয়ে শুধু তাইই নয়, তাঁরা অধিকাংশই জন্মসূত্রে সৌদি আরবেরই কন্যা। এমনকি ফার্স্ট অফিসার নিজেও এই দলেই পড়েন। কেবল প্লেনের ক্যাপ্টেন ছিলেন এক বিদেশি মহিলা, বলে জানিয়েছেন আধিকারিকেরা।
বিগত কয়েক বছরে বিমান চালানোর ক্ষেত্রে বারেবারেই নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন সৌদি মেয়েরা। এই ঘটনার জের টেনে সেদিকেই নজর ফিরিয়েছে দেশের সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি। ২০১৯ সালে প্রথমবার এমন একটি বিমান ছেড়েছিল তারা, যেখানে সহকারী পাইলট ছিলেন কোনও সৌদি মহিলা। ক্রমশ এই ক্ষেত্রটিকে আরও বাড়ানোর স্বপ্ন দেখছে সৌদি আরবের দেশীয় এয়ারলাইন্স। বিশেষ করে দেশের বর্তমান শাসক মহম্মদ বিন সলমন মসনদে বসার পর দেশের অবস্থা সামান্য হলেও বদলেছে। দেশে বহুদিন ধরে যে কুপ্রথাগুলি চলে আসছে, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য যে রক্ষণশীলতার বেড়া তোলা আছে, সেইসব রীতিগুলি নিয়ে খানিক বিবেচনা শুরু হয়েছে এখন।
আরও শুনুন: ‘হিজাব আমার প্রতিভাকে ঢাকতে পারবে না’, বিশ্ব কাঁপাচ্ছেন এই পাক র্যাপার
সৌদি আরবের গোঁড়ামির বিভিন্ন ছবি বারবার বিশ্বের সামনে উঠে এসেছে। এ এমন এক দেশ, যেখানে মেয়েদের উপরে জারি করা রয়েছে হাজারটা ফতোয়া। মেয়েরা সেখানে বাড়ির বাইরে পা রাখতে গেলেও বাবা কিংবা স্বামীর অনুমতি লাগে। আর পুরুষসঙ্গী ছাড়া কোথাও যাওয়া? নৈব নৈব চ। মেয়েরা গাড়ি চালাতে গেলে পুলিশ ধরে। ফুটবল খেলতে চাইলে জোটে চাবুক। এমন এক দেশে যখন কেবলমাত্র মহিলা ক্রুদের নিয়েই কোনও বিমান তার উড়ান শেষ করে, সে কৃতিত্বের ভার সহজেই অনুমান করা যায়। সৌদি আরবের মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বড় মাইলস্টোন হয়ে থাকবে এই ঘটনা, এ কথা নিঃসন্দেহেই বলা যায়।