মেয়ে বলে দলে নিতে চাইত না ছেলেরা। তাই ফুটবল খেলার জন্য ছেলে সাজতেন সারিনা ভিকমান। আর আজ মহিলাদের বিশ্বকাপে সম্ভবত সফলতম কোচ সেই মেয়েই। মহিলাদের ফুটবল বিশ্বকাপের ঠিক আগে আগে, আসুন, শুনে নেওয়া যাক সারিনা ভিকমানের কথা। লিখলেন সৌরাংশু।
২০শে আগস্ট, ২০২৩। ভারতীয় সময় সাড়ে তিনটে। ঠিক সেই সময় সিডনির অলিম্পিক স্টেডিয়াম চত্বরের ফুটবল স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হচ্ছে, প্রথমবারের জন্য মহিলাদের ফুটবল বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা ইউরোপের দুই দেশ, স্পেন ও ইংল্যান্ড। আর ঠিক সেই সময়ের আগেই, ইংল্যান্ডের কোচের একটা রেকর্ড কিন্তু করা হয়ে গেছে। ইংল্যান্ডের মহিলা ফুটবল দলের বর্তমান কোচ, ৫৩ বছর বয়স্কা প্রাক্তন ডাচ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার সারিনা পেত্রোনেলা উইগমান হলেন মহিলা ফুটবলের রানি মিডাস। মানে যাতেই হাত লাগান তাতেই সোনা ফলে। সে নেদারল্যান্ডসের হয়েই হোক বা ইংল্যান্ড। ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত সময়কালে ভিকমান নেদারল্যান্ডসের কোচ ছিলেন। ২০১৭-এর ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয় ডাচরা, ২০১৯-এর বিশ্বকাপ ফাইনালে ইউএসএ-র কাছে হারলেও উইগমানের অনবদ্য গেম রিডিং এবং খেলানোর ছক দর্শক ও বিশেষজ্ঞদের প্রশংসা পায়।
আরও শুনুন: আবেগের ধারাপাত নয়, ধারালো ব্যক্তিত্বেই সত্যিকার অধিনায়ক সুনীল
সেই উইগমানকেই ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি করে নিয়ে আসে ২০২০তে। আর তারপর থেকেই ইংল্যান্ডের মহিলা ফুটবল দলের সূর্যোদয় রোখা যাচ্ছে না। প্রথমত ২০২২-এর ইউরো। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় দেশগুলির ফুটবল টুর্নামেন্টে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আধিপত্য রেখে, সব ম্যাচে জিতে ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হয়। তার মধ্যে কোয়ার্টার ফাইনালে এ বছরের বিশ্বকাপের ফাইনালের প্রতিদ্বন্দ্বী স্পেনকে হারিয়েই। সারা টুর্নামেন্টে দাপিয়ে বেড়ান বেথ মেড, অ্যালিসিয়া রুশো, কিয়ারা ওয়ালশরা।
আর এই বিশ্বকাপের শুরু থেকেই মাতাচ্ছেন ইংলিশরা। বিশেষত ইংল্যান্ড পুরুষ দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় এবং চেলসির এ বছরের অধিনায়ক রিস জেমসের বোন লরেন জেমস। নাইজিরিয়া ম্যাচে মাথা গরম করে লাল কার্ড দেখার আগে পর্যন্ত লরেন তিনখানা গোল করে ফেলেছিলেন। অ্যালিসিয়া রুশো আর লরেন হেম্পও তিনটি করে গোল করেছেন। তবে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলতে নামার আগে ইংল্যান্ড দলকে যা সবথেকে স্বস্তি দিচ্ছে, তা হল কোচ সারিনার ট্যাকটিক্স। চোট আঘাতের জেরে প্রথম একাদশের তিনজন ছিলেন না। কিন্তু তারপরেও লরেন জেমসকে নামিয়ে দিয়ে তাঁর পরিচিত ৪-৩-৩ ছক বদলে তিন ব্যাক সিস্টেমে অনায়াসে চলে গেলেন সারিনা। মাঝমাঠ জমাট করে লরেন জেমস খেলছেন দুই ফরোয়ার্ডের সামান্য পিছনে। এমনকি প্রি-কোয়ার্টারে লরেন রেড কার্ড দেখলেন তো কোয়ার্টার ফাইনালে, সেমিফাইনালে মাঝমাঠে ভিড় বাড়িয়ে সঠিক সময়ে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ম্যাচ বার করে নিয়ে চলে গেলেন কলম্বিয়া এবং আয়োজক দেশ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে।
আরও শুনুন: ছোট্ট পনিটেল, হেডব্যান্ড আর উইম্বলডনের সেই রজার রাজার গল্প
আবার স্পেনও গ্রুপ লিগে জাপানের কাছে চার গোল খাবার পর থেকে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই ফাইনাল খেলছে। নব্বই মিনিটের খেলা, যে কোনও ফলাফলই সম্ভব। কিন্তু তারপরেও বিশ্বের সেরা মহিলা ফুটবলের কোচ হিসাবে উইগমানের ঐতিহ্য তো মোছার নয়। আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রথমে ডাচ এবং পরে ইংলিশদের দায়িত্ব নিয়ে ফিফা আয়োজিত ফিফা বেস্টের আসরে ২০১৭ থেকে তিনবার সেরা কোচ হয়েছেন তিনি, দুবার দ্বিতীয় সেরা। বিশ্বকাপটা বোধহয় সিডনি হারবারে ফেলে যেতে আসেননি উইগমান। বরং এই যে সাম্প্রতিক কালে ইংল্যান্ডের পুরুষদের ফুটবল দল ফাইনাল বা সেমিফাইনালে হেরে আসছেন আর বারবার ইংলিশ সমর্থকরা আশাহত হচ্ছেন, তাঁরা বোধহয় এবার আশায় বুক বাঁধতেই পারেন। তাঁদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য মেয়েদের দল নিয়ে তৈরি সারিনা উইগমান।