যে দেশে মেয়েদের জন্য সব পথ বন্ধ, সে দেশেই একুশে আইনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছেন মেয়েরা। জারি রাখছেন প্রতিবাদের সুর। তালিবান অধিকৃত আফগানিস্তানেই দেখা যাচ্ছে এমন ছবি। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
নতুন করে আফগানভূমের দখল নেওয়ার পরেই দেশ জুড়ে বিধিনিষেধের দেওয়াল তুলেছে তালিবান। আর সেসব নিষেধাজ্ঞার অধিকাংশ জুড়েই রয়েছে মেয়েদের উপর চাপিয়ে দেওয়া বিবিধ কানুন। এসব নিয়মের প্রধান বক্তব্যই হল প্রকাশ্যে আসতে পারবে না মেয়েরা। তাদের বোরখা আর হিজাব পরা যেমন বাধ্যতামূলক, তেমনই শিক্ষা কিংবা কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার অধিকারও সংকুচিত। বিশেষ করে টেলিভিশনের কোনও অনুষ্ঠানে মুখ দেখানো কিংবা রেডিওর প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে দাঁড়ি টেনে দিয়েছে এই জমানা। কিন্তু এসবের মধ্যেই আশার আলো দেখাচ্ছে রেডিও বেগম।
আরও শুনুন: গার্হস্থ্যশ্রম ফেলনা নয়, বিচ্ছেদ মামলায় তাই সম্পত্তির ভাগ পেলেন মহিলা
কী এই রেডিও বেগম? এটি আসলে কাবুলেরই একটি রেডিও স্টেশন। যেখানে তুলে আনা হয় মেয়েদের স্বর। সোজা কথায়, মেয়েদের দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয় এখানে। বই পড়ার আসর, টেলি-কাউন্সেলিং, এমন বিভিন্ন ধরনের মহিলা-পরিচালিত অনুষ্ঠান দিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেছে চ্যানেলটি। এই রেডিও স্টেশনটি শুরু করেছিলেন যিনি, তিনিও মহিলা। এই রেডিও স্টেশনকে মেয়েদের কথা, মেয়েদের যন্ত্রণা, মেয়েদের সুখদুঃখ বহন করে চলার একটি মাধ্যম হিসেবে দেখেন তিনি। ৪৮ বছর বয়সি হামিদা আমন স্পষ্টই জানাচ্ছেন, হাল ছাড়ছেন না তাঁরা। তিনি মনে করেন, দেশের আমজনতাকে জানানোর প্রয়োজন রয়েছে যে ভয় করা চলবে না। আর সেই কারণেই জনমাধ্যমে নিজেদের অধিকার জারি রাখতে হবে বলেই মত তাঁর।
আরও শুনুন: বোরখা ছুঁড়ে ফেলে রঙিন পোশাকে উজ্জ্বল, তালিবানের চোখে চোখ রেখে প্রতিবাদে আফগান মহিলারা
চলতি বছরে এই স্টেশন পথচলা শুরু করেছিল ৮ মার্চ, নারীদিবস হিসেবে চিহ্নিত দিনটিতে। আর তার ঠিক পাঁচ মাস পরেই, ১৫ আগস্ট ফের আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালিবান। আপাতত তালিবান শাসকদের অনুমতি আদায় করেই চলছে এই স্টেশন। নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে নারী আর পুরুষ কর্মীদের একত্রে কাজ করা। মেয়েদের দফতরের বাইরে ঝোলানো হয়েছে মোটা, ভারী পর্দা। তবুও সেই পর্দা ভেদ করে বাইরের দুনিয়ার কাছে নিজেদের স্বর, নিজদের বক্তব্য পৌঁছে দিতে মরিয়া ‘রেডিও বেগম’-এর মেয়েরা। ‘রেডিও বেগম’ তাঁদের কাছে আর নিছক চাকরি নয়, তালিবানি পিতৃতান্ত্রিকতার সামনে প্রতিবাদের হাতিয়ারও বটে।