ধর্ষণের ঘটনা সাজাতে হবে। বিনিময়ে মিলবে মোটা টাকা। এমনই লোভ দেখিয়ে কাজে লাগানো হচ্ছে গরিব ঘরের সুন্দরী মেয়েদের, দাবি গোয়া পুলিশের। দেশজুড়ে চলা এই র্যাকেট হয়তো আরও একবার বুঝিয়ে দিল মেয়েদের অসহায় অবস্থাটিকেই। যেখানে সত্যি ধর্ষণ হোক কি সাজানো ঘটনা, শিকার সেই মেয়েরাই।
তর্কের খাতিরে যতই বলা হোক, মেয়েদের সম্মান যোনিতে থাকে না, কিন্তু সমাজের ধারণা কি আদৌ বদলেছে? সেখানে তো এখনও ধর্ষণ মানেই কোনও নারীর সম্মান নিয়ে টানাপোড়েন। একদিকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া শারীরিক অত্যাচার, যেখানে তার বাধা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না, আরেকদিকে চারপাশের কানাকানি ফিসফাসে মিশে থাকা অপমান- দুদিক থেকেই ক্রমাগত গুটিয়ে যেতে হয় ধর্ষিতা মেয়েদের। এই কথাগুলো নতুন কিছু নয় হয়তো। তবে সম্প্রতিই ধর্ষণের সঙ্গে জড়িয়ে নতুন এক অপরাধচক্রের হদিশ পেয়েছে গোয়া পুলিশ। গোয়াতে হদিশ মিললেও, তার জাল অবশ্য ছড়ানো গোটা দেশ জুড়েই। পুলিশের দাবি, গরিব ঘর থেকে সুন্দরী মেয়েদের নিশানা করে এই চক্রের মাথারা। তাদের সামনে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বিপুল টাকার টোপ। শর্ত একটিই, অভিযোগ করতে হবে ধর্ষণের। অর্থাৎ মিথ্যে ধর্ষণের অভিযোগ সাজিয়েই টাকা হাতিয়ে চলেছে চক্রটি। আর সেই কাজেই তাদের হাতিয়ার ওই গরিব মেয়েরা।
আরও শুনুন: ৭০ ঘণ্টার থেকেও বেশি কাজ করে মেয়েরা, কথা হয় না তো! কটাক্ষ রাধিকার
সম্প্রতি বছর ২৩-এর এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল গুজরাটের এক ব্যক্তিকে। ওই ব্যক্তির দাবি, গোয়া আসার পথে বিমানেই তাঁর সঙ্গে ওই তরুণীর আলাপ হয়েছিল। আবার কালাঙ্গুটে থানাতেও এক তরুণী মহারাষ্ট্রের এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করতে যান। কিন্তু অভিযোগে সই করার কথা উঠতেই পিছিয়ে আসেন তিনি। এই দুই ঘটনার সূত্র ধরে ওই চক্রের খোঁজ পেয়েছে গোয়া পুলিশ। ইতিমধ্যেই চক্রের সঙ্গে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যার মধ্যে গুজরাটের এক ব্যক্তির কাজই ছিল গরিব পরিবার থেকে ওই মেয়েদের সংগ্রহ করে আনা। জানা যাচ্ছে, সহজে টাকা মেলার লোভে সেই মেয়েরাও আর এই চক্র ছেড়ে যায়নি।
আরও শুনুন: নারীর স্বাধীনতার জন্য লড়াই, মেহবুবা-মহম্মদির নোবেল স্বীকৃতিই যেন সত্যিকার দেবীপক্ষ
প্রশ্ন এখানেই। আপাতদৃষ্টিতে ধর্ষণের ক্ষেত্রে মেয়েরা শিকার, আর এই সাজানো ঘটনার ক্ষেত্রে তারাই আবার শিকারির ভূমিকায়। কিন্তু সত্যিই কি তাই? নাকি এক্ষেত্রেও একরকমভাবে ব্যবহারই করা হল তাদের? উপরন্তু, ধর্ষণের ঘটনায় বিচার পেতে দিনের পর দিন গড়িয়ে যায় নির্যাতিতাদের। সেই সময় জুড়ে তাদের দিকেও উঁচিয়ে ওঠে একাধিক অভিযোগের আঙুল। পোশাক নিয়ে, বেরোনো নিয়ে, আচার আচরণ নিয়ে- বারবার জেরার মুখে পড়ে তাঁরাই। এমনকি প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরাও একাধিক ক্ষেত্রে যে ধর্ষণকে ‘সাজানো ঘটনা’ বলে বসেন, তাও নতুন কথা নয়। সেখানে এ জাতীয় অপরাধ হয়তো সেইসব মেয়ের সুবিচার পাওয়ার পথটাই আরও অনেকটা কঠিন করে দিল। আরেকভাবে ধর্ষণসংক্রান্ত অপরাধের শিকারই হতে হল তাদের।