সন্তানকে সুখী দেখতে চান সব মা-ই। তিনিও ব্যতিক্রম নন। যদিও সমাজের নিরিখে তাঁর সন্তান ব্যতিক্রমী। আর পাঁচজনের মতো বিপরীত লিঙ্গের কোনও মানুষকে নয়, সমলিঙ্গের মানুষকেই সঙ্গী হিসেবে পেতে চেয়েছিলেন তিনি। আর সেই সময় সন্তানের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর মা। এই মহিলাই দেশের প্রথম মানুষ, যিনি সমকামী সন্তানের জন্য বিয়ের বিজ্ঞাপন দিতে সংকোচ করেননি। আসুন, শুনে নেওয়া যাক এই মায়ের কথা।
সন্তানের জন্য মা নাকি সবকিছু করতে পারেন। জয় করতে পারেন যে কোনও প্রতিকূলতাকে। আর সে কথাই সত্যি বলে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন এই মা। তাঁর সন্তান যে সমকামী, সেই পরিচয়টি তাঁর সন্তানকে ভালবাসার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। অথচ এ কথাও তো অজানা নয় যে, সময় যতই এগোক না কেন, এখনও সমকামিতাকে সহজ চোখে দেখতে পারেন না অনেক মানুষই। এমনকি অনেক অভিভাবকও এ কথা জানলে সন্তানের হাত ছেড়ে দেন। লোকে কী বলবে, এই ভাবনাই তাঁদের কাছে সন্তানের শুভকামনার চেয়ে বড় হয়ে দেখা দেয়। কিন্তু মুম্বইয়ের বাসিন্দা পদ্মা আইয়ার সে পথে হাঁটতে চাননি। তিনি জানতেন, যৌন পরিচয়ের জন্য বাকি সমাজের অনেকগুলো চোখ তাঁর ছেলেকে বিঁধবে আজীবন। কিন্তু তিনি কোনও দিনই চাননি যে সেই চোখগুলোর মধ্যে তাঁর চোখও মিশে যাক। বরং একজন মা হিসেবে যে কোনও পরিস্থিতিতে সন্তানের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন তিনি। আর সেইভাবেই, নিজের অজান্তেই এক রেকর্ড গড়ে ফেলেন পদ্মা। আর পাঁচজন মা যেমন উপযুক্ত ছেলেমেয়ের বিয়ের কথা ভাবেন, তেমনটাই ভেবেছিলেন তিনিও। তাঁর ছেলে, হরিশের জন্য। আর সেই কারণেই সরাসরি ছেলের জীবনসঙ্গী চেয়ে বিজ্ঞাপন দেন তিনি।
আরও শুনুন: আর এক মালালা! তালিবান হানায় ভাঙা দেওয়ালে ছবি আঁকেন কাবুলের অ্যাসিড আক্রান্ত তরুণী
না, এই বিজ্ঞাপন দেওয়ার কাজটুকুও সহজ ছিল না। বিয়ে তো পরের কথা। লোকে কী বলবে, এই ভয় কাটিয়ে সন্তানের যৌন পরিচয় নিয়ে সরব হওয়া মুখের কথা নয়। সেই অবস্থানে দাঁড়িয়ে যখন পদ্মা সংবাদপত্রের পাত্রপাত্রীর কলামে বিজ্ঞাপন দিতে যান, তখন অনেক জায়গা থেকেই প্রত্যাখ্যান জুটেছিল তাঁর। কেউ কেউ বলেছিলেন, এতে আইনি বাধা রয়েছে। অবশ্য সমলিঙ্গের বিয়েটাই যেখানে আইনি বাধার মুখে দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে এমন কথা তো উঠবেই। ২০১৮-র ৬ সেপ্টেম্বর, ভারতীয় সংবিধান থেকে ৩৭৭ ধারাকে সংশোধন করে সমকামিতাকে ‘অপরাধ’-এর তকমা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরেও দুজন সমকামী মানুষের নিয়মমাফিক বিয়ে করার অনুমতি নেই এ দেশে। তবে পদ্মা সেসব কিছু ভাবেননি। তিনি কেবল তাঁর ছেলেকে সুখী দেখতে চেয়েছিলেন। তাই হাল ছাড়েননি তিনি। অবশেষে বিজ্ঞাপনটি দিয়েও উঠতে পেরেছিলেন। সেটা ২০১৫ সাল।
বিজ্ঞাপনে ফল কিছু হয়নি। অর্থাৎ কোনও কাঙ্ক্ষিত উত্তর আসেনি। কিন্তু এই বিজ্ঞাপনের দরুন যা হয়েছিল, তা হল এই ইস্যুতে আরও আরও কথা উঠে আসা। হরিশের মতো অনেকেই তাঁদের জমে থাকা কথাগুলো আস্তে আস্তে বলতে পারছিলেন। যেমন হরিশ বলতে পেরেছিলেন কিশোর বয়সে মামার হাতে তাঁর ধর্ষিত হওয়ার কথা। আর একজন সাধারণ গৃহবধূ পদ্মা এই জায়গাটাই খুলে দিয়েছিলেন তাঁর সন্তানের জন্য।
আরও শুনুন: অ্যাসিড হামলায় হারিয়েছে দৃষ্টি, দশম শ্রেণিতে স্কুলের সেরা সেই কিশোরীই
সমলিঙ্গ বিবাহকে বৈধ ঘোষণা করার দাবিতে জল গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। চলেছে দীর্ঘ সওয়াল জবাব। যেখানে এই দাবির সপক্ষে আরজি জানিয়েছিলেন চারশোরও বেশি বাবা-মা। যদিও এখনও পর্যন্ত আশানুরূপ ফল মেলেনি। তবে পদ্মার মতো আরও অনেক মায়ের চাওয়ার জোর একদিন হয়তো বাধার দেওয়ালগুলো ভেঙে দেবে সত্যিই, এই আশা করতে দোষ কোথায়!