কর্মক্ষেত্রে ধর্ষণ খুনের শিকার কর্মরতা চিকিৎসক তরুণী। সেই ঘটনার অভিঘাতে যখন তোলপাড় সমাজ, তার মাঝেও একের পর এক ধর্ষণের অভিযোগ। শহর থেকে শহরতলি-মফস্সল, নারীর সুরক্ষার বিষয়টি যে কোথাও প্রশ্নাতীত নয়, এ কথাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে এ সময়। আর সেই ভাবনাকেই আরও জোরদার করছে গোটা বিশ্বে মেয়েদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গ।
রাতের পথ মেয়েদের জন্য নিরাপদ নয়। নির্জন রাস্তা মেয়েদের জন্য বিপজ্জনক। অচেনা পুরুষের সঙ্গ মেয়েদের পক্ষে সংকটের। এমনই কত কথা, কত সাবধানবাণী। মেয়েদের পথচলার সামনে এমনই কত না কাঁটার বেড়া! কিন্তু বলুন তো, মেয়েরা ঠিক কোনখানে নিরাপদ? কখন নিরাপদ? রাস্তায় নিরাপদ নয়, পার্কে নিরাপদ নয়, যানবাহনে নিরাপদ নয়। সাম্প্রতিক ঘটনা বলছে, সংগঠিত কর্মক্ষেত্রেও মেয়েরা নিরাপদ নয়। আর ঘরে? সমীক্ষা বলে, যত মেয়ে যৌন হেনস্তার শিকার হন, অধিকাংশের ক্ষেত্রে সে অভিজ্ঞতা প্রথমবার ঘটে তাঁদের নিজেরই বাড়িতে। সাম্প্রতিক কালের ঘটনাবলি মেয়েদের এই নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে নতুন করে। আর সেই ভাবনাকেই আরও জোরদার করছে গোটা বিশ্বে মেয়েদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গ। রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্ট বলছে, গোটা বিশ্বে ২০০ কোটির বেশি কিশোরী এবং পরিণত বয়সের মহিলা কোনোরকম সামাজিক সুরক্ষা পান না। তাঁরা সর্বতোভাবেই অসুরক্ষিত।
আরও শুনুন:
যৌন হেনস্তার শিকার প্রায় সকলেই! কত বয়সে? ভয়াবহ অভিজ্ঞতা উঠে আসছে সোশাল মিডিয়ায়
এই সুরক্ষা কেবল শারীরিক সুরক্ষাই নয়। দেখা যাচ্ছে দারিদ্র্য এবং ক্ষুধার নিরিখেও এই মেয়েরা অসম্ভব নিরাপত্তাহীন। কেননা জীবনধারণের প্রাথমিক চাহিদাগুলোও তাঁদের আয়ত্তে নেই। গোটা বিশ্বের দরিদ্র জনসংখ্যার বড় অংশই লিঙ্গপরিচয়ে নারী, বলছে রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্ট। উপরন্তু কাজের সুযোগ না থাকা, কম বেতন, বেতনহীন গৃহশ্রম বা সেবাকাজ, এই সবকিছু মেয়েদের আর্থিক নিরাপত্তার জায়গাটিকে আরও দুর্বল করেছে। সমীক্ষা বলছে, ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সের পুরুষদের তুলনায় ওই একই বয়সসীমার মেয়েদের সংখ্যা অনেক বেশি, যাঁরা চূড়ান্ত দুর্দশার মধ্যে দিন কাটান। রাষ্ট্রসংঘের প্রতিবেদনই দাবি করছে, সামাজিকভাবে তুলনামূলক উঁচু শ্রেণিতে থাকা মেয়েদের যে নিরাপত্তা পাওয়ার কথা, তাঁরাও তা পান না। সেখানেও প্রয়োজনের তুলনায় আর্থিক সামাজিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ব্যস্তানুপাতিক। যেখানে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর, স্বাবলম্বী, কর্মরতা মেয়েদের ক্ষেত্রেও যৌন নিরাপত্তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে, সেখানে এই পিছিয়ে থাকা মেয়েদের তো সামান্যতম সুরক্ষার জায়গাও নেই। মেয়েদের দুরবস্থা নিয়ে যতই কথা হোক, যৌন হেনস্তা নিয়ে কড়া আইনের দাবি উঠুক, তাতে কি এই সুরক্ষার হাল বদলাবে?