শুধুমাত্র মহিলারাই অংশ নেন দোলে। এমনটাই রেওয়াজ গ্রামের। ভুলবশত বা ইচ্ছাকৃৎ, দোলের দিন যদি কোনও পুরুষ গ্রামে থাকেন, তাহলে তাকে শাস্তিও পেতে হয়। কোন গ্রামের কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অনুমতির বালাই নেই। ‘বুরা না মানো’ বললেই, সাত খুন মাফ। যখন ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা, রং লাগিয়ে দাও! আসলে, দোল খেলার অছিলায় ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছাপূরণ, তাও আবার প্রকাশ্যে। তবে দেশের সর্বত্র ছবিটা এরকম নয়। রাজস্থানের কথাই ধরা যাক। সেখানকার এক গ্রামে হোলি খেলেন শুধুমাত্র মেয়েরা। একজনও পুরুষ গ্রামে ঢুকতে পারেন না দোলের দিন।
:আরও শুনুন:
লাঠি দিয়ে পুরুষ সঙ্গীদের আঘাত করেন মহিলারা, দোল উদযাপনের অন্য এক ধারা ‘লাঠমার’
শুনতে অবাক লাগলেও, এমনটাই সত্যি। কথা বলছি, রাজস্থানের নগর গ্রামটির সম্পর্কে। সেখানকার ৫০০ বছরের পুরনো রেওয়াজ, দোলের দিন কোনও পুরুষ গ্রামে থাকবেন না। দোল খেলবেন স্রেফ মহিলারা। এমনকী, তাঁদের খেলা কোনও পুরুষের দেখতেও পারবেন না। দেখলেই কড়া শাস্তি। তবে এমন নিয়ম যে জোর করে পুরুষদের মানতে বলা হয় তা নয়, বরং স্বেচ্ছায় গ্রামের পুরুষরা দোলের দিন অন্যত্র চলে যান। খুদেরাও বাদ যায় না। বয়স পাঁচ পেরোলেই বাবা-কাকাদের সঙ্গে দোলের দিন গ্রামের বাইরে যেতে হয় তাদের। প্রশ্ন হচ্ছে কেন এমন নিয়ম?
:আরও শুনুন:
বিনা অনুমতিতে মেয়েদের গায়ে রং, তবু কেন ‘বুরা না মানো হোলি হ্যায়’?
আসলে, দীর্ঘদিন এই গ্রামে পর্দাপ্রথার প্রচলন ছিল। অর্থাৎ শুধুমাত্র পুরুষরাই প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করতেন। মহিলাদের জায়গা ছিল কেবলমাত্র বাড়ির অন্দরমহল। দেশের অনেক জায়গাতেই একসময় এই নিয়ম চালু ছিল। তাই একে ‘ভুল’ বা ‘অনুচিত’ মনে করতেন না সে যুগের কেউই। ব্যতিক্রম এই গ্রামের পুরুষরা! তাঁদের কাছে গ্রামের মহিলাদের পর্দার আড়ালে থাকা, মোটেও পছন্দের বিষয় ছিল না। এদিকে, সমাজের নিয়ম উপেক্ষা করার সাহস নেই। তাই ভেবেচিন্তে বছরে একটা দিন, গ্রামের সকল পুরুষ মহিলাদের বাইরে আনার কথা ভাবেন। কিন্তু শর্ত ছিল, সেদিন কোনও পুরুষ গ্রামে থাকবেন না। আর সেই দিনটাই হল দোল। প্রায় ৫০০ বছর আগে এই গ্রামে এমনই নিয়ম চালু হয় যে, পুরুষশূন্য গ্রামে নিশ্চিন্তে বাইরে এসে দোল খেলবেন মহিলারা। সেই নিয়ম এখনও পালন করা হয়। এককালে দোলের দিন কোনও পুরুষ এই গ্রামে ধরা পড়লে, চরম শাস্তি দেওয়া হত। এমনকী, গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হত অবধি। তবে এখন এই ধরনের কড়াকড়ি নেই। কেউ দোলের সময় গ্রামে থাকেও না অবশ্য। সকাল সকাল গ্রাম ছেড়ে দূরের এক মন্দিরে চলে যায় তারা। সেখানে আমোদ-প্রমোদ আর রং খেলায় মেতে ওঠে। এদিকে, নিজেদের মতো আনন্দের পসরা সাজিয়ে বসেন গ্রামের মহিলারা। এই দিন তাঁদের স্বাধীনতা উদযাপনের দিন। এখন আর পর্দার আড়ালে থাকতে না হলেও, একসময় যে অসহ্য অবস্থার মধ্যে দিয়ে গ্রামের মহিলারা কাটিয়েছেন, তাই স্মরণ করেন সকলে।