পাহাড় ডিঙোনো অত সহজ কথা নয়! আর সেই কঠিন কাজটিই প্রায় অবলীলায় করে দেখিয়েছিলেন এক ভারতীয় কন্যা, আর তা-ও মাত্র ষোলো বছরের বয়সে। যে সে পাহাড় নয়, জয় করেছিলেন এভারেস্ট। তিনিই সম্ভবত ভারতের কনিষ্ঠতম এভারেস্ট বিজয়ী। রক্ষণশীল পরিবার থেকে উঠে এসে শৃঙ্গজয়ের সাহস- কেমন ছিল সেই রাস্তাটা? আসুন, শুনে নিই হরিয়ানার মেয়ে শিবাঙ্গী পাঠকের গল্প।
ইচ্ছাশক্তিটাই আসল। পর্বতারোহী ও ভলিবল খেলোয়াড় অরুণিমা সিংহকে দেখতে দেখতে এই কথাটাই বারবার মনে হত শিবাঙ্গীর। চলন্ত ট্রেন থেকে অরুণিমাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। হারিয়েছিলেন একটি পা। তবে তাতে থেমে থাকেননি। একটি পা নিয়েও যে এভারেস্ট জয় করা যায়, তা দেখিয়েছিলেন অরুণিমা সিংহ। ভারতের প্রথম প্রতিবন্ধী এভারেস্টজয়ী তিনিই।
অরুণিমার এই অসীম সাহসের গল্প, ছবি ভিডিয়ো ছোট থেকেই বারবার দেখতেন শিবাঙ্গী। অরুণিমার বায়োপিক দেখতে দেখতে একদিন হঠাৎই তাঁর মনে হয়, তিনিই বা নয় কেন! তখন কতই বা বয়স শিবাঙ্গীর। চোদ্দ কিংবা পনেরো হবে। পড়াশোনায় মন বসত না যেন। মাথায় ঘুরত শুধু পাহাড়। দাদার মোবাইল নিয়ে এই সংক্রান্ত নানা জিনিস দেখতেন ইউটিউবে। এই করতে করতেই একদিন একটি পর্বতারোহণ স্কুলের খোঁজ পান শিবাঙ্গী।
আরও শুনুন: ক্যানসার জয় করে সফল উদ্যোগপতি, ১৫০ কোটি টাকার সংস্থার মালিক হয়ে নজির কণিকার
হরিয়ানার হিসার জেলার রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে শিবাঙ্গী। বাড়ির মেয়ে সব কাজ ফেলে পর্বতারোহণে বেরোবে, এই ব্যাপারটা মোটেও মানতে পারেননি তাঁর পরিবারের লোকেরা। বিশেষত বাবা আর ঠাকুমা। সবচেয়ে বেশি বাধা এসেছিল তাঁদের দিক থেকেই। পরে মেয়ের জিদের কাছে হার মানে গোটা পরিবার। জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামের জওহর ইনস্টিটিউট অব মাউন্টারিং অ্যান্ড উইন্টার স্পোর্টসে নাম লেখান শিবাঙ্গী। শুরু হল পাহাড় চড়ার শিক্ষা। বাড়ি থেকে এত দূরে প্রথম বার। শুরুর দিকে বেশ একা লাগত শিবাঙ্গীর। পরে ওই ইনস্টিটিউটই হয়ে উঠল ঘরবাড়ি।
আরও শুনুন: ডাইনি অপবাদ থেকে পদ্ম সম্মান, অন্ধকারে আলো হয়ে জ্বলে ওঠার গল্প শোনান ছুটনি মাহাতো
২০১৮ সালের মে মাসে নেপালের একটি ক্যাম্প থেকে এভারেস্টের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন শিবাঙ্গী। প্রায় দু-মাস পরে পৌঁছলেন শৃঙ্গে। মোট ২৪৪ জনের মধ্যে শিবাঙ্গীই ছিলেন কনিষ্ঠতম। সেই অভিজ্ঞতাটা একেবারে আলাদা, জানিয়েছেন এভারেস্ট বিজয়ী শিবাঙ্গী।
এভারেস্টের পরে জয় করেছেন আফ্রিকার উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো। তখন শিবাঙ্গীর বয়স ১৭। ওই বছর সেপ্টেম্বরেই রাশিয়ার উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট এলব্রুস জয় করেন তিনি। ২০১৯ সালে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাত থেকে ‘বাল শক্তি’ পুরস্কার জেতেন শিবাঙ্গী।
দেখতে দেখতে কুড়ি পেরিয়েছে সেদিনের ছোট্ট মেয়ে। তবে এখানেই থামতে রাজি নয় সে। বিশ্বের সবকটি বড় শৃঙ্গ পেরোনোই এখন পাখির চোখ শিবাঙ্গীর। পাশাপাশি এই ধরনের স্পোর্টসে মেয়েদের অংশ নেওয়ার ব্যাপারটিকে এখনও ভাল ভাবে নেওয়া হয় না অনেক জায়গাতেই। সেই অচলায়তন ভেঙে মেয়েরা এগিয়ে আসুক আরও। সেটাই চান শিবাঙ্গী।