প্রথমবার বন্দুক হাতে নিয়েছিলেন যখন তাঁর বয়স ৬০ পেরিয়েছে। তাও নেহাতই মজার ছলে। অথচ প্রথম সুযোগেই সবাইকে অবাক করে দিয়ে বুলস আই হিট করেন ওই বৃদ্ধা। তাঁর নতুন পরিচয় হয়ে যায় ‘রিভলবার দাদি’। এখন বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মহিলা শার্প শ্যুটার তিনিই। আসুন, শুনে নেওয়া যাক চন্দ্র তোমর-এর কথা।
তাঁর গ্রামে কোনও মেয়ের বিয়েতে এখন আর পণ লাগে না। ‘রিভলবার দাদি’-র গাঁ বলে কথা। যাঁর হাতের একটা গুলিও মিস হয়নি আজ অব্দি। হ্যাঁ, বয়স হার মানাতে পারেনি তাঁর কব্জির জোরকে। তাই তিনি শুধু জোহরি গ্রামের ‘রিভলবার দাদি’ নন, গোটা বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মহিলা শার্প শ্যুটার-এর খেতাব এখন তাঁরই দখলে। জাতীয় স্তরে ১০ মিটার শ্যুটিং-এর ইভেন্টে এখনও পর্যন্ত ৩০টি পদক জিতেছেন উত্তরপ্রদেশের ৮৫ বছরের বৃদ্ধা চন্দ্র তোমর।
আরও শুনুন: জেসিবি থেকে রোড রোলার, চালাতে পারেন সবই! ইঞ্জিনিয়ারিংও পড়ছেন ৭১ বছরের বৃদ্ধা
অথচ ৬০ বছর বয়সের আগে কোনও দিন বন্দুক-পিস্তল হাতে তুলেও দেখেননি তিনি। উত্তরপ্রদেশের গ্রামে আর পাঁচজন মেয়ের জীবন যেভাবে কাটে, এই বৃদ্ধার জীবনটাও তার চেয়ে অন্যরকম কিছু ছিল না। পড়াশোনা বা চাকরির প্রশ্নই নেই। ৮ সন্তান আর ১৫ জন নাতিনাতনি নিয়ে ভরা সংসার সামলানোর দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। কিন্তু এই গতানুগতিক পথটা বদলে গিয়েছিল হঠাৎ করেই। নাতনি শ্যুটিং ক্লাবে একা যেতে লজ্জা পেত বলে তার সঙ্গে যেতেন ওই বৃদ্ধা। একদিন সে রাইফেল লোড করতে পারছিল না দেখে তিনি সাহায্য করতে এগিয়ে যান। তারপর মজার ছলেই ফায়ার করে বসেন। আর প্রথমবারেই লক্ষ্যভেদ। বৃদ্ধার নিপুণ নিশানা দেখে তাঁকে অনুশীলনে যোগ দিতে অনুরোধ করেন কোচ। সেদিন থেকেই বদলে যায় বাকি গল্পটা।
আরও শুনুন: জন্মের পরেই বিষ দিয়েছিল পরিবার, ধর্ষণের হুমকি উড়িয়ে অসহায় মেয়েদের আশ্রয় সেই কৃতি ভারতী
কোচের ভরসার মান রেখেছিলেন বৃদ্ধা। কিন্তু তাঁর পরিবার বা সমাজে যে মেয়েদের জন্য হাজারও বেড়া তোলা। সেইসব অনুশাসনের ভয়ে নিজের প্রতিভার কথা লুকিয়ে রাখতেই চেয়েছিলেন তিনি। এমনকি খবরের কাগজে তাঁর ছবি বেরোলে ছিঁড়ে ফেলতেন, পাছে তা বাড়ির কেউ দেখতে পায়। তবে বাস্তবে কিন্তু ফল হয়েছিল অন্যরকম। তাঁর সাফল্যের কথা জানাজানি হওয়ার পর তাঁর পরিবার এবং গ্রামের আরও অনেকেই শ্যুটিং শিখতে শুরু করেন। চন্দ্রর দুই নাতনি সীমা এবং শেফালি আন্তর্জাতিক স্তরের শার্প শ্যুটার। ২০১০ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে তাঁর বিভাগে সোনা জিতে নেন শেফালি। আরও আশ্চর্যের কথা হল, চন্দ্র তোমরকে দেখেই হাতে রাইফেল তুলে নেন তাঁর জা প্রকাশী তোমর। বর্তমানে চন্দ্র তোমর-এর পর তিনিই সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক শার্প শ্যুটারদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। তাঁদের দুজনের জীবনের গল্পকে ভিত্তি করেই বলিউডে বানানো হয়েছে বায়োপিক ‘সান্ড কি আঁখ’।
বয়স আশি পেরিয়ে গিয়েছে অনেকদিন। কিন্তু প্র্যাকটিস থামাননি বৃদ্ধা। প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন অন্যান্য মেয়েদেরও। মেয়েরা নিজেরাই যাতে নিজেদের ভার নিতে পারে, সেই লক্ষ্যেই পথ চলেছেন চন্দ্র তোমর।