তাঁরা নিজগুণে অনন্যা। না, সাফল্যের বিন্দু স্পর্শ করার যাত্রাপথে কেউ তাঁদের জন্য ফুল বিছিয়ে রাখেননি। বরং পদে পদে ছিল প্রতিকূলতার কাঁটা। তবু আত্মবিশ্বাসে ভর করে তাঁরা পৌঁছেছেন সাফল্যের শীর্ষবিন্দুতে। গতে বাঁধা পথ ছেড়ে নিজেরাই তৈরি করে নিয়েছেন নিজেদের সফল যাত্রাপথ। আআন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস উপলক্ষে সংবাদ প্রতিদিন শোনো স্যালুট জানায় সেইসব নারীদের। সেরকমই একজন সফল নারী অদিতি চক্রবর্তী। তাঁর সাফল্যের উড়ানের গল্প শুনলেন চৈতালী বক্সী।
মেয়ে হলে এটা করতে নেই। ওটা করতে নেই। ঘর-সংসারের কাজ করতে হবে। বাইরের কাজও করতে হবে। এই শুনতে শুনতেই বড় হয়েছেন তিনি। আজও অসংখ্য মেয়েকেই তা শুনতে হয়। তবে তাঁদের সবার কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন শিল্পী অদিতি চক্রবর্তী। বাবা কবিতা ভালবাসতেন, সেই সূত্রে তাঁরও শিল্পের প্রতি টান ছোট থেকেই। মাটি দিয়ে নকশা করা গয়না বানানোর ভাবনা প্রথম আসে তাঁর মাথায়। দেশলাই কাঠি দিয়েও গয়না বানিয়েছেন। ছোট ছোট পা ফেলেই স্বনির্ভরতার পথে এগিয়েছিলেন অদিতি। আর এখন, ক্লাবের দূর্গাপুজোর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তাঁর তৈরি প্রতিমা বিদেশেও যাচ্ছে। এই যাত্রাপথ সহজ ছিল না মোটেও। বরং বলা যায়, অদিতির জন্য একটু কঠিনই ছিল। কেননা তাঁর সন্তান ‘স্পেশাল চাইল্ড’। কিন্তু অদিতি নিজেই নিজেকে বলেছিলেন, ‘হার মেনো না’। যেটা করতে চাইছিলেন, সেটা করতে পারবেনই- এই আত্মবিশ্বাস ছিল তাঁর। আর তাই অদিতির বলেন, ‘আমি সবসময় ভেবেছি ভাল কাজ করলেই মন ভাল থাকবে, আর ছেলেকেও ভাল রাখতে পারব।’ পাশে পেয়েছিলেন স্বামী ও মা-বাবাকে। পরিবারের সমর্থন আর নিজের আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করেই শুরু করে দিয়েছিলেন নিজের স্বপ্নপূরণের কাজ।
আরও শুনুন: Superwoman: ‘ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা করবে সমাজ, দমে গেলে চলবে না’, বার্তা পৌলমীর
শুরুটা হয়েছিল মাটির গয়না বানানোর মাধ্যমে। মূলত ঘরে থেকেই যে কাজগুলি করা যায়, সেগুলি করতে শুরু করেন। পরে অবশ্য ঘর থেকে অনেকদূর ছড়িয়ে পড়ে কাজের পরিধি। নিজের কাজের একটা ‘আইডেন্টিটি’ তৈরি হয়ে যায়। জনপ্রিয়তা পান। এরকম করতে করতেই কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর। এই শহরে যে নারীরা নিজেদের লড়াই করে অন্যভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তাঁদের মধ্যে তিনি অন্যতম। আর তাই তিনি বলেন, ‘সংসারের জন্য সবকিছু জলাঞ্জলি দিলাম, আর তারপর সে নিয়ে আফশোস করলাম, এটা কারোর ক্ষেত্রেই বাঞ্ছনীয় নয়। ঘরের ও বাইরের কাজ তো সকলকে শিখতেই হবে। অনেক রকম মানসিক যন্ত্রণাও আসবে। কিন্তু নিজের জন্য সকলকে কিছু না কিছু করতে হবে, আর যেটা নিজের ভাল লাগে, সেই কাজটা করলে সবকিছুই ভাল লাগতে শুরু করবে। একজন নারীকে – তিনি মা, স্ত্রী যে-ই হোন না কেন – তাঁকে সফল দেখলে পরিবারের পুরুষরাও খুশিই হয়।’ মহিলারা তাই মনের জোরটা রাখুন আর নিজেকে ভালবাসুন। তাতে তিনি নিজেও ভাল থাকবেন, আর তাঁর চারপাশের সকলকে ভাল রাখতে পারবেন, নারীদিবসে এটাই বার্তা অদিতির।