বয়স তো কেবল সংখ্যামাত্র। নিজের মনের জোরে নিজের নতুন পরিচিতি গড়েছেন চন্দ্রপ্রভা পরিহার। নিজের সংস্থা খুলেছেন। মহিলাদেরও উপার্জনের সুযোগও করে দিয়েছেন। কীভাবে সবকিছু সামলে নিজের ব্র্যান্ড ‘নইহর’ প্রতিষ্ঠা করলেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বয়স কেবল সংখ্যামাত্র। আর তাই নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে সত্যিই বয়স বোধহয় বাধা হয়ে উঠতে পারে না। তবে দরকার পড়ে একটু মনের জোরের। সাধারণত সবাই যখন ৬০ বছরকেই জীবনের অবসরের সময় হিসাবে ধরে নেন, তখন আরও ১০ বছর পেরিয়ে এসে নিজের স্বপ্নপূরণ করেছেন চন্দ্রপ্রভা পরিহার। নিজের সংস্থা খুলেছেন। উপার্জন করছেন। উপার্জনের সুযোগ করে দিচ্ছেন অন্য মহিলাদেরও।
চন্দ্রপ্রভার জীবনের গল্পটা অবশ্য এরকম ব্যতিক্রমী ছিল না। বরং গড়পড়ুতা। আর পাঁচ জন সাধারণ ভারতীয় মহিলার মতোই। মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিয়ে। তারপর সংসারের দেখভাল করতে করতেই কেটে গেল জীবনের সেরা সময়। উঁহু ভুল বলা হল। অনেকটা সময় পেরিয়েছে বটে। তবে, সেটাই সেরা সময় কিনা বলা যায় না। অন্তত চন্দ্রপ্রভার জীবনের দিকে তাকিয়ে অন্য কিছু ভাবতেই ইচ্ছে করে। সেই কবে ছোট বেলায় উল-কাঁটা হাতে নিয়ে আঙুলের জাদুতে নকশা বোনার শখ ছিল তাঁর। এরকম প্রতিভা তো অনেকেরই থাকে। সে কাজে যেমন আছে কল্পনা, তেমনই জরুরি দক্ষতা। তবে, তা যে মূলধন হয়ে উঠতে পারে, ক’জনই বা এমনটা ভাবে! চন্দ্রপ্রভাও ভাবেননি। নিছক শখ হিসাবে ভেবেই জীবনের এক কোনায় যেন তুলে রেখেছিলেন তাঁর এই কাজটিকে।
পালাবদল ঘটল এই বৃদ্ধ বয়সে এসে। উল বোনা এবং কুরুশে কাজের শখ অবশ্য বজায় রেখেছিলেন। বাড়ির লোকেদের জন্য সোয়েটার থেকে শুরু করে নানা পোশাক বুনতেন। ম্যাগাজিন থেকে নতুন নতুন ডিজাইন তুলতেন। ২০২২ সালে বাড়িরই এক জনের জন্য তিনি একটি ব্যাগ তৈরি করেন। দেখে তো সকলে মুগ্ধ। আর সে কাজ প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমতো হইচই। প্রায় তখুনি চন্দ্রপ্রভার কাছে আবদার আসে যে, ঠিক ওরকমই একটি ব্যাগ তৈরি করে দিতে হবে। তবে, আবদার নয়, আসলে সেটাই ছিল প্রথম অর্ডার। নিজের কাজের প্রশংসা পেয়ে চন্দ্রপ্রভা যেন প্রাণিত হলেন। আরও সূক্ষ্ম কাজ শিখে নিলেন নেটদুনিয়া ঘেঁটে। একদিন তাঁর বউমা বললেন, এটিকে ব্যবসার রূপ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এত বয়সে কি তা কি আর পেরে উঠবেন! গোড়ায় একটু দ্বিধা ছিল বইকি! তবে শেষমেশ রাজি হয়ে যান চন্দ্রপ্রভা। শুরু হয় তাঁর সংস্থা ‘নইহর’।
মায়ের হাতে তৈরি জিনিসের যে ওম আর নস্ট্যালজিয়া, তা পেতে শুরু করেন সকলে। আর রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। পাশে থাকলেন বউমা স্বাতী। শাশুড়ি-বউমা মিলে দিব্যি চালাতে থাকেন সংস্থা। এরপর অস্ট্রেলিয়া থেকে আসে একটা বড় অর্ডার। ডেডলাইন ছিল, তবে চন্দ্রপ্রভার হাতের জাদুতে কাজ উতরে যায়। আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি নইহরকে। এখন আরও ৬ জন মহিলা কাজ করছেন তাঁদের সংস্থায়। তাঁদের তৈরি জিনিসের চাহিদা এতটাই যে, আরও লোক খুঁজছেন চন্দ্রপ্রভা এবং তাঁর বউমা।
চাকরি-বাকরির বাঁধা নিয়ম অনেককেই ক্লান্ত করে। আর নিজের কোনও উদ্যোগ শুরু করা ক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন ওঠে, আর কি সেই বয়স আছে? সেই প্রশ্নেরই উত্তর যেন চন্দ্রপ্রভা। সত্তরে এসে নিজেকে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করে তিনি যেন বার্তা দিলেন, শুরুর কোনও শেষ নেই।