ফাল্গুনী নায়ার। এক প্রসাধনী সংস্থা-র মালকিন। সংস্থা বলতে স্টার্ট আপ। তবে এখন আর সে ছোটোটি নেই। এই ব্যবসার দৌলতেই বর্তমানে বিশ্বের সবথেকে ধনীদের তালিকায় ঢুকে পড়েছেন তিনি। আর ভারতের সেলফ-মেড মহিলা কোটিপতিদের মধ্যে তিনিই শীর্ষে। শুনে নেওয়া যাক তাঁর কথা।
একুশ শতকে পৌঁছে গেলাম আমরা, তবু মেয়েদের নিয়ে টিপ্পনী কাটা বন্ধ হল না। কেউ বলেন মেয়েদের ঘরেই ভাল মানায়, কেউ অতটা পিছিয়ে না থাকলেও ঠিক করে দিতে ভালবাসেন যে, মেয়েরা কোন কোন পেশা নেবে আর কী কী নেবে না। ঘরে বাইরে এখনও একাধিক লক্ষ্মণরেখা ঘিরে ধরে থাকে মেয়েদের। আর সেইসব বেড়া পেরিয়েই নিজের মতো করে কাজ করে চলেন অনেক, অনেক মেয়ে। তাঁরা সবাই আগামী দিনের মেয়েদের চলার পথ তৈরি করে যান। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ যখন খুব উজ্জ্বল হয়ে চোখে পড়েন, যখন তাঁদের কোনও মতেই অস্বীকার করা চলে না, তখন এই লড়াইটায় এক-একটা করে মাইলস্টোন যোগ হয়। তেমনই একটা মাইলস্টোন যোগ করে দিয়েছেন ফাল্গুনী নায়ার।
আরও শুনুন: বটতলার বই থেকে আধুনিক পত্রিকার বিজ্ঞাপন… নারীশরীর কি বরাবরই ‘জনপ্রিয় পণ্য’!
একসময় দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকে উচ্চপদে কর্মরত ছিলেন ফাল্গুনী। ২০১২ সালে, ৫০ বছরের জন্মদিনের মাস কয়েক আগে নিজের সংস্থা খোলার কথা ভাবেন তিনি। ব্র্যান্ডের নাম বেছে নেন সংস্কৃত শব্দ ‘নায়িকা’ থেকে। সংস্কৃত ভাষায় ‘নায়িকা’ অর্থ শ্রেষ্ঠ নারী, রূপে গুণে ব্যক্তিত্বে যিনি অনন্যা। ভারতীয় নারীদের সাজিয়ে তোলার ভার নিয়েছিল ফাল্গুনী নায়ার-এর সংস্থা।
কেউ বলতে পারেন, এর আগে কি এ দেশে প্রসাধন সামগ্রী পাওয়া যেত না? হ্যাঁ, পাওয়া যেত বইকি। তবে যুগের চাহিদা মেনে প্রসাধনের সঙ্গে প্রযুক্তিকে মিলিয়ে দিতে পেরেছিলেন ফাল্গুনী। ভাল মানের প্রসাধন সামগ্রী, এবং তার বিপুল বিচিত্র সম্ভার ক্রেতার হাতের নাগালে পৌঁছে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন তিনি। ফাল্গুনী তাই তাঁর সংস্থার নিজস্ব অ্যাপ লঞ্চ করার কথা ভাবেন, আর এ ব্যাপারেও তিনি সবার আগে। অর্থাৎ প্রসাধন সংস্থাগুলির মধ্যে ফাল্গুনির সংস্থাই এ ব্যাপারে প্রথম পদক্ষেপ করে। পাশাপাশি সারা দেশ জুড়ে ৭০টিরও বেশি আউটলেট খুলেছে এই সংস্থা, যাতে ক্রেতারা সামনাসামনি নিজেদের পছন্দসই জিনিসটি বেছে নিতে পারেন। আর বলিউড নায়িকাদের ঝলমলে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার তো ছিলই। ভারতের জলবায়ু, ভারতীয় মেয়েদের ত্বক এবং গায়ের রঙের কথা মাথায় রেখে অসংখ্য লিপস্টিক, নেলপলিশ, ফাউন্ডেশনের শেড নিয়ে এসেছে এই সংস্থা। রয়েছে ব্রাইডাল মেকআপের সামগ্রী। সম্প্রতি নিজস্ব পোশাক এবং অলংকারের সংগ্রহও ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরেছে সংস্থাটি। তবুও অনেক পথ চলা বাকি, মনে করছেন ফাল্গুনী নায়ার।
আরও শুনুন: শিকার গণধর্ষণের, তবু নারী পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অক্লান্ত Sunitha Krishnan
চলতি বছর ১০ নভেম্বরের শেয়ার মার্কেটের হিসেব জানিয়ে দিয়েছে, ফাল্গুনীর সংস্থার শেয়ারের দাম বেড়েছে প্রায় ৮৯ শতাংশ। ভারতের প্রথম মহিলা-পরিচালিত সংস্থা এটিই, যা স্টক মার্কেটে বড়সড় প্রভাব ফেলেছিল। নিজের উদ্যোগে যাঁরা শীর্ষে পৌঁছেছেন, ভারতে তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী মহিলা ফাল্গুনী নায়ার, জানাচ্ছে ব্লুমবার্গ বিলিওনেয়ারস ইনডেক্স-এর হিসেব। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ আপাতত সাড়ে ছয় কোটি ডলার। তবে এসবই তো সংখ্যা মাত্র। তার চেয়ে অনেক বড় কৃতিত্ব অর্জন করে ফেলেছেন এই মহিলা, যিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, বয়স, লিঙ্গপরিচয় কোনও কিছুই ইচ্ছেপূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। বাধা দিতে পারে না শীর্ষে পৌঁছানোর লক্ষ্যেও। নিজের চলা পথে আরও অনেক মেয়ের ইচ্ছের উড়ানের পথ দেখিয়ে দিয়েছেন ফাল্গুনী নায়ার।