নিজের শর্তে বাঁচতে পছন্দ করেন তিনি। নিজের শর্তেই তৈরি করেছেন নিজের সাফল্যের রাস্তা। আর তাই এই দেশের বহু নারীর কাছেই তিনি প্রেরণা। সেই জায়গা থেকেই এই দেশের সব মেয়েদের নিজের শর্তেই বাঁচার পরামর্শ দিলেন, ঐশ্বর্য রাই। হেনস্তার শঙ্কার মুখে কীভাবে রুখে দাঁড়ানোর পরামর্শ তাঁর? আসুন শুনে নিই।
তিনি বিশ্বসুন্দরী। লাইমলাইট আর হাজার কৌতূহলী চোখ সর্বদা তাঁকে ঘিরে রয়েছে। তিনি ঐশ্বর্য রাই। শুধু অভিনেত্রী হিসাবেই নয়, এ-দেশের সফল নারী হিসাবে তিনি প্রায় আইকন। অনেকের কাছেই প্রেরণাদাত্রী। আর সেই জায়গা থেকেই, এবার দেশের সকল মেয়েদের বাঁচার মন্ত্র শিখিয়ে দিলেন তিনি।
ঘরের কোণ থেকে অফিস-কাছারি, মেয়েরা কি আদৌ সুরক্ষিত? এর উত্তর স্পষ্টভাবে আজও আমাদের জানা নেই। আর তাই এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দীর্ঘশ্বাস আসে, আসে সংশয়। আমরা জানি, আজও সর্বাঙ্গীণ সুরক্ষিত নয় নারী। আর তাই রাস্তায়, বাসে-ট্রামে-মেট্রোতে যাতায়াত করার সময় কিংবা কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলে মেয়ের মায়ের কপালে পড়ে ভাঁজ। কললিস্টে বাড়ে একের পর এক উদ্বিগ্ন ফোন। কারণটি সকলেরই জানা। রাস্তাঘাটে মেয়েকে পড়তে হতে পারে বিপদের মুখে। মেয়ের দিকে ধেয়ে আসতে পারে কটূক্তি, আসতে পারে হাজার কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত। শুধু তাই নয়, রাতের সুযোগ নিয়ে তাঁকে ছুঁতে পারে কোনও অন্ধকার হাত। আর এতকিছুর মধ্যে তাই মা মেয়েকে সাবধান করেন। রাশ টানেন তাঁর ইচ্ছেয়। বাধ সাধেন তাঁর পোশাকে। আটকে দিতে চান তাঁর স্বাধীন হওয়ার স্বপ্ন।
অজান্তেই যেন সেই সব ফতোয়া গায়ে চাপিয়ে ঘুরে বেড়ায় মেয়েরা। গাঢ় লিপস্টিক পরা চলবে না। চলবে না ছোট হাতা পোশাক। ওড়না থাকবে গায়ে। ফিরতে হবে সন্ধ্যা নামার আগে। বাড়তে থাকে হাজার বারণের তালিকা। তা সত্ত্বেও হেনস্তার ঘটনা ঘটতে থাকে। আট থেকে আশি, তখন সমস্বরে বলে ওঠেন নির্ঘাত মেয়েটির কোনও দোষ ছিল। কেউ বলেন, তাঁর খোলামেলা পোশাকই তাঁর হেনস্তার কারণ। কেউ আবার বলেন এত রাত অব্দি একা একা বাড়ির বাইরে থাকার দরকার কী বাপু? অর্থাৎ যা কিছু ঘটে যাক না কেন, মেয়েটিকেই দাঁড়াতে হয় কাঠগড়ায়। ভাবলে অবাক হতে হয়, পুরুষতন্ত্রের শিকলে মেয়েদের নিংড়ে ফেলে আজও পুরুষের হয়েই ওকালতি করে আমাদের সমাজ। যেন এইই দস্তুর।
আরও শুনুন: বচ্চনদের ‘ঐশ্বর্য’হীন হওয়ার রটনা জোরদার! কিন্তু বিচ্ছেদের গল্পে অন্য নারীকে টানতেই হবে?
নারীবাদের হাজার কথা থেকে যায় মুখের কথা আর তত্ত্বকথায়। আর এখনও দোষের দায় মাথায় নিয়ে চলতে হয় মেয়েদেরই। তবে এই ধারাবাহিক ইতিহাসে এবার খানিক দাঁড়ি টানার সময় এসেছে বই-কি। তাই ধীরে হলেও নিজেদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার নারীরা। বাদ নেই ঐশ্বর্যও। সম্প্রতি একটি ভিডিওবার্তায় তাঁকে বলতে শোনা গেছে যে, রাস্তাঘাটে মেয়েদের হেনস্তা হওয়ার দায় কখনও মেয়েটির নয়। মেয়েদের ছোট পোশাক, চলাফেরা, লিপস্টিকের রং-এর সঙ্গে তাঁর হেনস্তা হওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। তাই শক্ত হয়ে নির্দ্বিধায় রুখে দাঁড়াতে হবে এর বিরুদ্ধে। তিনি আরও বলেছেন, এক্ষেত্রে অন্যায়কারীর চোখে চোখ রেখে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। কিছুতেই ভয় পেলে চলবে না। এবং সবচেয়ে আগে বদলাতে হবে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা।
এই ভিডিওবার্তা প্রচারিত হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই নেটিজেনদের মধ্যে সাড়া পড়েছে। সন্দেহ নেই, এম্পাওয়ার্ড উইমেন বলতে এ সমাজ যা বোঝে, ঐশ্বর্য তাঁর প্রথম সারিতেই। তিনি যখন এই বিষয়ে মুখ খোলেন, এবং সকলকে সাহস দেন, তখন তা আলাদা মাত্রা পায়। তবে এতকিছুর পরেও একটি প্রশ্ন থেকেই যায়। ঐশ্বর্য যা বলছেন, তা তাঁর পরিমণ্ডলে বসে বলা যত সহজ, এই দেশের কোনায় কোনায় সেরকম আপসহীন জীবন যাপন করা ততটাই কঠিন। তবু, সিনেমা, বিশেষত বলিউড যেভাবে ভারতীয় জনমানসকে প্রভাবিত করে, তা অন্য গুরুত্ব রাখে। সেই নিরিখে ঐশ্বর্যর এই কথা যে অনেককে আপসহীন বাঁচায় সাহস দেবে, তা বলাই যায়।