আফগানভূমে ফের তালিবান শাসন জারি হওয়ার পর থেকেই নেমে এসেছে একের পর এক নারীবিরোধী ফতোয়া। মেয়েদের পড়াশোনা, গান, শিল্পচর্চা, সব কিছুর উপরেই জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু তালিবানের অ্যাসিড হানা সয়েও তার পালটা প্রতিবাদ জিইয়ে রেখেছেন এই তরুণী। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
তালিবানের হানায় শহর জুড়ে যা ক্ষত তৈরি হয়েছে, তা ঢেকে দিতেই রং তুলি নিয়ে পথে নেমেছেন তরুণী। কাজটা সহজ নয়। বুলেট-বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত দেওয়ালে ছবি আঁকা, আফগানিস্তানের মতো রক্ষণশীল একটি দেশের কোনও মহিলার পক্ষে রীতিমতো দুঃসাহসের কাজ। কখনও তাঁর দিকে ছোড়া হয় পাথর, কখনও ছুটে আসে অকথা কুকথা। এমনকি তালিবানি উগ্রপন্থীদের ছোড়া অ্যাসিডেও আহত হয়েছিলেন এই তরুণী। কিন্তু এই সবকিছু সত্ত্বেও তিনি হার মানতে নারাজ। মারের মুখের উপর দিয়ে ফুল ফোটানোর পথেই এগিয়ে চলেছেন শামসিয়া হাসানি।
আরও শুনুন: কেউ যুদ্ধ করেছেন, কেউ সামলেছেন সিংহাসন… ভারতীয় মুদ্রায় কুর্নিশ জানানো হয়েছে যে নারীদের
তালিবান শাসনে কী অবস্থা হবে আফগানভূমের মহিলাদের, তা নিয়ে উদ্বেগ ছিল গোড়া থেকেই। আর আফগানিস্তানে নয়া সরকার প্রতিষ্ঠার পর সত্যি হয়ে গিয়েছে সেইসব আশঙ্কাই। দেখা গিয়েছে মেয়েদের সম্পর্কে মুখে উদারনীতির কথা বললেও, আদতে তাদের ঘিরে কড়া নিষেধের পাঁচিল তুলে দিতেই আগ্রহী তালিবান। তাই মেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে যেমন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, তেমনই বন্ধ হয়ে গিয়েছে সমস্ত শিল্পচর্চার পথ। গানবাজনার সম্প্রচার বন্ধ করার কড়া নির্দেশ জারি হয়েছে দেশে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে পালটা প্রতিবাদের চেষ্টা জিইয়ে রেখেছেন কেউ কেউ। শামসিয়া হাসানি তাঁদেরই একজন। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এই তরুণী ব্রত নিয়েছেন, তালিবানের গোলাগুলির আঘাত শহরের যেসব দেওয়ালে স্থায়ী ছাপ রেখে গিয়েছে, রং তুলি দিয়েই সেইসব ক্ষত ঢেকে দেবেন তিনি।
আরও শুনুন: বিয়েতে বাবার ‘অনুমতি’ বাধ্যতামূলক কেন? কন্যা সম্প্রদান নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন নারীরা
যদিও মালালার মতোই, আফগানিস্তানের কান্দাহারে তালিবানের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এই তরুণী। ২০০৮ সালের নভেম্বরে অ্যাসিডে ঝলসে গিয়েছিলেন তিনি। কাবুল এবং দিল্লিতে দীর্ঘ চিকিৎসার পর তিনি সেরে উঠেছেন। চোখে অবশ্য রয়ে গিয়েছে চিরস্থায়ী ক্ষত। কিন্তু দেশের বুক থেকে যুদ্ধের ক্ষত মুছে ফেলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শামসিয়া। তাই গত কয়েক বছর ধরে, কাবুলের ক্ষতবিক্ষত দেওয়ালগুলোয় নানা উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করে তিনি তুলে ধরেছেন যুদ্ধ ও যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের নির্মমতাকে। তালিবান শাসনে মেয়েদের কী অবস্থা, সে কথাও তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর ছবিতে। যদিও তালিবানি মনোভাবাপন্ন জনতার অত্যাচারে অনেকসময়ই পুরো গ্রাফিতি এঁকে উঠতে পারেন না তিনি। কিন্তু শামসিয়ার বক্তব্য, মানুষের মন থেকে যুদ্ধের সব যন্ত্রণার স্মৃতি মুছে দিতে চান তিনি। তবে মানুষের মনের উপরে তাঁর হাত নেই। তাই মানুষের চোখে যে দেওয়ালগুলি পড়ে, সেখানেই এই ক্ষত মুছে দিয়ে আনন্দের বার্তা দিতে চান শামসিয়া হাসানি।