রেকর্ড তো অনেকেই গড়েন। তবে নিজের তৈরি রেকর্ড নিজেই ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়তে পারা কিন্তু মুখের কথা নয়। আর সেই কাজটাই করে ফেলেছেন এই মহিলা। তা-ও আবার যে সে কাজ নয়। বরফের চাদরের নিচে সাঁতার। নিজের গড়ে দেওয়া রেকর্ড নিজেই ভেঙে ফেলেছেন তিনি। দ্বিতীয় বার বরফের নিচে লম্বা রাস্তা সাঁতার কেটে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম তুলেছেন এই সাঁতারু।
মাথার উপরে তিন ইঞ্চি পুরু বরফের চাদর। তার নিচে ওই হিমশীতল জলে সাঁতার। তা-ও আবার কোনও রকম ডাইভিং স্যুট বা ফিন ছাড়াই। আর তাতেই নয়া রেকর্ড গড়লেন এই মহিলা।
এর আগেও একই ভাবে বরফের চাদরের তলায় সাঁতার কেটে রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। তবে সেবারের দূরত্বকে ছাপিয়ে গিয়েছেন এবার। ২৯৫ ফুট ও তিন ইঞ্চি দূরত্ব তিনি সাঁতরে ফেলেছেন ওই ভয়াবহ ঠান্ডা জলে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বাসিন্দা অম্বর ফিলারি। এ নিয়ে দ্বিতীয় বার একই রেকর্ড গড়লেন তিনি। নাম তুললেন গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ট রেকর্ডের খাতায়। বছর দুয়েক আগে নরওয়ের ওপ্পসজো হ্রদে প্রথমবার ওই রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। সেবার ২২৯ ফুট ৭.৯ ইঞ্চি দূরত্ব সাঁতরে পার করতে পেরেছিলেন তিনি। তবে এবার নিজেকেই নতুন করে চ্যালেঞ্জ করে জলে নামেন অম্বর। নরওয়ের কোংসবার্গে এবার সেই নয়া রেকর্ড গড়েছেন তিনি।
না, ব্যাপারটা মোটেও সহজ নয়। বরফ জলে কোনও রকম ডাইভিং স্যুট বা ফিন ছাড়া সাঁতার কাটাটা রীতিমতো ভয়েরই। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অমন চরম তাপমাত্রায় ব্রেইন ফ্রিজ হতে শুরু করে। অর্থাৎ মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তখন সাঁতার কাটা তো দূরের, স্বাভাবিক দম ধরে রাখাই কঠিন হয়ে পড়ে। তাই দরকার প্রচুর সাধনা ও প্রশিক্ষণের। তাছাড়া শ্বাসপ্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখাটাও এ ক্ষেত্রে খুব জরুরি। এবারের চ্যালেঞ্জে নামার আগে দক্ষিণ আফ্রিকাতেই সেসব দীর্ঘদিন অভ্যাস করেছেন অম্বর। তার জন্য ছিলেন আলাদা প্রশিক্ষকও। তা সত্ত্বেও চূড়ান্ত দিনে জলে নামার আগে যথেষ্ট ভয় পেয়েছিলেন অম্বর।
আরও শুনুন: ১১০ দিনে ৬ হাজার কিলোমিটার দৌড়! গিনেস বুকে নাম উঠল দিল্লির সুফিয়ার
সেই ভয় বুকে নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বরফশীতল জলে। তবে সাঁতার শুরু করতেই সেই ভয় যেন কোথায় উধাও হয়ে গেল। ভাল ভাবেই গোটা সাঁতার শেষ করে ফেললেন অম্বর। এখন তাঁর আফশোষ, আরও কিছুটা দূরত্ব হয়তো যেতে পারতেন তিনি। তাঁর কাছে যথেষ্ট শ্বাস তখনও মজুত ছিল। এর আগে লন্ডনের একটি আউটডোর পুলে লাইফগার্ড হিসেবে কাজ করতেন অম্বর। সে সময় থেকেই বরফজলের প্রতি ভাললাগাটা শুরু। লংগেস্ট আন্ডারওয়াটার ওয়াকেও রেকর্ড রয়েছে অম্বরের। তিন মিনিট ৪৭ সেকন্ডে প্রায় ১০৯ মিটার পথ হেঁটে ফেলেছেন তিনি। তাও আবার জলের তলায়। ফ্রি ডাইভিংয়েও ১৫০ মিটারেরও রেকর্ড রয়েছে তাঁরই ঝুলিতে।
প্রতিযোগিতাটা আসলে নিজের সঙ্গে, প্রায়শই অনেককে এ কথা বলতে শোনা যায়। কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই সেই যুদ্ধে নামতে পারেন হাতে গোনা মানুষ। অম্বর শুধু সেটাই করে দেখাননি, নিজেকে ছাপিয়েও গিয়েছেন সফল ভাবে। নিজের পুরনো রেকর্ড ভেঙেচুরে ফের জায়গা করে নিয়েছেন গিনেস বুকে। অম্বরের সেই আশ্চর্য অধ্যবসায় ও মনোবলের গল্পই কুর্নিশ কুড়িয়েছে নেটদুনিয়ায়।