ছোটবেলার দুর্ঘটনায় ঝলসে গিয়েছিল শরীরের অর্ধেক। বাঁচার আশাই ছিল না। তবু জীবনের লড়াইয়ে হার মানেননি। বেঁচে ফিরেছেন তো বটেই, বর্তমানে দগ্ধ রোগীদের দিশা দেখানোই তাঁর নেশা ও পেশা। আর সেই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এবার পদ্মশ্রী পাচ্ছেন প্রেমা ধনরাজ। কেমন তাঁর জীবনের গল্প? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কথায় আছে, মনের ইচ্ছেটাই আসল। ইচ্ছে থাকলে সব হয়। গল্পে বা সিনেমায় নয়, বাস্তবেও এর উদাহরণ রয়েছে ভুরি ভুরি। সদ্য প্রকাশিত পদ্ম পুরস্কারের তালিকাতেও রয়েছেন এমন বেশ কয়েকজন যারা, প্রমাণ করেছেন ইচ্ছা থেকলে যে কোনও বাধা জয় করা সম্ভব।
আরও শুনুন: ন্যায়বিচার পেতেই দীর্ঘ পথচলা, বিলকিসের লড়াইয়ে শামিল ছিলেন এই ৪ নারীও
ঠিক যেমন, ড. প্রেমা ধনরাজ। ৭২ বছর বয়সী এই প্লাস্টিক সার্জেন পদ্মশ্রী সম্মান পাচ্ছেন। মূলত, চিকিৎসাক্ষেত্রে তাঁর অনন্য অবদানের জন্যই কেন্দ্রের তরফে এই সম্মান পাচ্ছেন প্রেমা। তবে তাঁর জীবনের গল্পও অবাক করতে বাধ্য। আর সেই লড়াইয়ে না জিতলে, এই মুহূর্তে বেঁচে থাকারই কথা নয় ড. প্রেমার। মাত্র ৮ বছর বয়সে ভয়ংকর এক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন প্রেমা। কোনওভাবে রান্নাঘরে কাজ করতে গিয়ে তাঁর গায়ে আগুন লেগে যায়। যার দরুন, শরীরের প্রায় ৫০ শতাংশই পুড়ে যায়। এমনিতে শরীরের ৩০ শতাংশর বেশি পুড়লেই, তা প্রাণঘাতী মনে করা হয়। অনেকে আবার পোড়ার জ্বালা যন্ত্রণা সহ্য করিতে না পেরে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। সেখানে ৮ বছর বয়সেই প্রেমার শরীরের ৫০ শতাং পুড়ে যায়। চিকিৎসকরা একপ্রকার ধরেই নিয়েছিলেন বাঁচার কোনও আশা নেই। কিন্তু প্রেমার বাড়ির লোকজন, বিশেষ করে তাঁর মা আশা ছাড়েননি। ধীরে ধীরে বছরের পর বছর অস্বাভাবিক কষ্ট সহ্য করে সুস্থ হন প্রেমা। কিন্তু একেবারে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। একাধিক সার্জারির জেরে চেহারাও বেশ বদলে যায়। তবু হার মানেননি প্রেমা। নিজের জেদে পড়াশোনা করে ডাক্তারি পাস করেন। তারপর পেশা হিসেবে বেছে নেন প্লাস্টিক সার্জারি। আসলে আগুনে পুড়ে যাওয়া মানুষের জীবন কতটা দুর্বিসহ হতে পারে, তা তাঁর থেকে ভালো কেউ বুঝবে না। তাই নিজেই দগ্ধ রোগীদের দিশা দেখানোর কাজ বেছে নেন।
আরও শুনুন: ন্যায়ের জন্য আজীবন লড়াই, সিনেমার স্ট্রাগলের থেকে কম নয় বিলকিসের বাস্তব জীবন
বর্তমানে দেশের সেরার সেরা প্লাস্টিক সার্জেনদের মধ্যে প্রেমা অন্যতম। বিদেশেও তাঁর রীতিমতো সুনাম রয়েছে। ২৫০০০-রও বেশি সার্জারি করেছেন প্রেমা। যাঁদের বেশিরভাগই আগুনে পুড়ে যাওয়ার শিকার। বছর ২৫ আগে, অগ্নি রক্ষা নামে এক রিহ্যাব তৈরি করেন তিনি। যেখানে আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীদের বিশেষ যত্ন নিয়ে সেবা করা হয়। দুর্ঘটনা পর বাকীরাও যেন তাঁর মতোই জীবনে ফিরতে পারেন সেই চেষ্টাই করে চলেছেন প্রেমা। চলতি বছরে এই সবকিছুর স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হতে চলেছেন। যা আগামীদিনে আরও অনেককে সাহস যোগাবে বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।