স্টেইন বা মিচেল জনশনদের দেখার হাতেখড়ি বাবার হাত ধরেই। গতির বলে ব্যাটাররা যখন পরাস্ত হয়, শরীরের দিকে ধেয়ে আসা বল সামলাতে পারেন না, তখন যে দৃশ্য রচনা হয়, তা তাতিয়ে দিত মায়াঙ্ককে। গতিই তাঁর প্রথম পছন্দ। সেই গতিই নিজের বোলিং-এ এনে চলতি আইপিএল-এর মঞ্চ মাতিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে গতির মায়ায় মায়াঙ্ক নিজেকেই হারিয়ে ফেলবে না তো!
দিল্লির নেটে নাগাড়ে বল করে যাচ্ছিলেন এক তরতাজা তরুণ। হঠাৎ চোখ পড়ল বিপক্ষ দলের কোচের। সেটা ২০২১ সাল। বিজয় হাজারে ট্রফির খেলায় মুখোমুখি উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লি। পাশাপাশি প্র্যাকটিস করছিল দুই দল। আর সেখানেই উত্তরপ্রদেশের কোচ, ভারতের প্রাক্তন উইকেটকিপার বিজয় দাহিয়ার চোখ পড়ে যায় তরুণের দিকে।
কাট টু, ২০২৪ আইপিএল। মুহূর্তের জন্য ক্যামেরুন গ্রিন বুঝতেই পারেননি যে, তাঁর উইকেট উড়ে গিয়েছে দুরন্ত গতির এক ডেলিভারিতে। যতক্ষণে বুঝলেন বল ততক্ষণে কিপার কে এল রাহুলকে পরাস্ত করে বাউন্ডারিতে চলে গিয়েছে। তরুণের হাতের আগুনে ডেলিভারি দেখে গোটা স্টেডিয়াম স্তব্ধ, মুগ্ধ এবং বিস্মিত।
আরও শুনুন: ‘পরাগ’রেণু আপনি জাগে আইপিএল-এ! নাকি নেপথ্যে সেই ঘরোয়া ক্রিকেটে?
তিনি মায়াঙ্ক যাদব। এই মুহূর্তে যাঁকে নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের তুমুল চর্চা। মনে করা হচ্ছে যে, যে ফর্ম নিয়ে তিনি খেলছেন, তাতে জাতীয় দলের টিকিট পাওয়া তেমন কষ্টসাধ্য হবে না। তার থেকেও বড় কথা, এইরকম একজন ফর্মে থাকা তরুণ পেসারকে দলে না নিয়ে নির্বাচকরাই বা থাকবেন কী করে! বলা যায়, একটা চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিয়েছেন মায়াঙ্ক।
তবে এই জার্নিটা কিন্তু মোটেও একদিনের নয়। সেদিন দিল্লির নেটে মায়াঙ্ককে দেখেই বিজয় বুঝেছিলেন, রত্নের সন্ধান মিলেছে। তখনই তিনি লখনউ টিমের সেই সময়কার ডিরেক্টর গৌতম গম্ভীরকে জানান মায়াঙ্কের কথা। ২০২২-এর আইপিএল-এ দলে আসেন মায়াঙ্ক। তবে, প্র্যাকটিসে বেশ কয়েকটা নো বল করেন পরপর। কারণ খতিয়ে দেখতে গিয়ে জানা গেল, তাঁর কোনও রান-আপই নেই। সকলে মিলে তাঁকে বোঝালেন যে, একজন বোলারের বিশেষত পেস বোলারের রান-আপ থাকা খুব জরুরি। এরপর ২০২৩-এর আইপিএল এল চোট। আর ২০২৪-এর আইপিএল-এ তো মায়াঙ্ক রিতিমতো স্টার। এখনও পর্যন্ত খেলেছেন দুটো ম্যাচ, দুটোতেই সেরার শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছেন। তাঁর বলের গতই পরাস্ত করেছে দেশ ও বিদেশে তাবড় ব্যাটারকে। এমনকী, ডেল স্টেইন, যাঁকে নাকি ঈশ্বরজ্ঞান করেন মায়াঙ্ক, তিনিও তরুণের বোলিং দেখে অভিভূত। তবে, রাতারাতি কি ম্যাজিকে বদলে গিয়েছেন মায়াঙ্ক? উত্তর হল, না। রান-আপ না-থাকা একজন বোলার থেকে সাফল্যের তুঙ্গে ওঠার মধ্যে আছে দেওধর ট্রফি। সেটা ২০২৩-এই। এখন যে গতিময় মায়াঙ্ককে দুনিয়া দেখছে, তার সলতে পাকানোর পর্বটা হয়েছে সেখানেই। সেবার আইপিএল-এর মাস দুয়েক পর হয়েছিল এই সিরিজ। নর্থ জোনের হয়ে ১২টি উইকেট নিয়েছিলেন মায়াঙ্ক। ঘণ্টায় ১৫৫ কিমি বেগে তাঁর হাত থেকে ডেলিভারি ছুটতে দেখে এখন যাঁরা অবাক হচ্ছেন, তাঁরা খেয়াল করেননি যে, এই কাজটি মায়াঙ্ক করেছিলেন ওই ঘরোয়া ক্রিকেটেই।
আরও শুনুন: রোহিত-বিদায়ে উল্লাসের জেরে মার, মৃত্যু ব্যক্তির… ক্রিকেট কি অসহিষ্ণু করে তুলছে ফ্যানদের?
মায়াঙ্কের বাবার ভালো লাগে ফাস্ট বোলারদের। স্টেইন বা মিচেল জনশনদের দেখার হাতেখড়ি বাবার হাত ধরেই। গতির বলে ব্যাটাররা যখন পরাস্ত হয়, শরীরের দিকে ধেয়ে আসা বল সামলাতে পারেন না, তখন যে দৃশ্য রচনা হয়, তা তাতিয়ে দিত মায়াঙ্ককে। গতিই তাঁর প্রথম পছন্দ। সেই গতিই নিজের বোলিং-এ এনে চলতি আইপিএল-এর মঞ্চ মাতিয়ে দিয়েছেন তিনি। গতির সঙ্গে বাউন্সারের দিকেও তাঁর নজর আছে। বলতে গেলে মায়াঙ্ক-এক্সপ্রেস সবে তার খেল দেখাতে শুরু করেছে। জার্নির এখনও বহু বাকি। আর সেখানেই একটা ছোট্ট প্রশ্ন উঁকি দিয়ে ফিরে যায়। গতির মায়ায় মায়াঙ্ক নিজেকেই হারিয়ে ফেলবে না তো! উমরান মালিকও এই গতিতেই সকলকে মুগ্ধ করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে খুব যে ছাপ রাখতে পেরেছেন তা নয়। গতি নিশ্চিতই একজন ফাস্ট বোলারের সম্পদ। তবে, তার সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয় আরও কিছু বিষাক্ত তির। যার দরুন স্টেন, জনশন বা স্টার্ক আতঙ্ক হয়ে ওঠেন ব্যাটারদের কাছে। মায়াঙ্কের সামনে এখন জাতীয় দলের হাতছানি। এখন গতির সঙ্গে তিনি যদি পেসারদের অন্যান্য গুপ্তবিদ্যাগুলি ঠিকঠাক রপ্ত করে নিতে পারেন, তাহলে আখেরে লাভ ভারতীয় ক্রিকেটেরই।