খেলা ছেড়ে দিলেন সাক্ষী মালিক। যেন নিছকই একটা তথ্য। কই তেমন ঝড় উঠল না তো! যে সোশ্যাল মিডিয়া যে কোনও ইস্যুতে তোলপাড় হয়, তা যেন কার্যত চুপচাপ, আলোড়নহীন। এই কি তাহলে শেষমেশ প্রাপ্য ছিল? বোধহয় না। সাক্ষী তাঁর প্রতিবাদ জারি রাখলেন কঠোর সিদ্ধান্তে। কিন্তু বাকি দেশ! প্রতিবাদের ভাষা আদৌ আর তার মনে আছে তো!
খেলা ছেড়ে দিলেন সাক্ষী মালিক। যেন নিছকই একটা তথ্য। কই তেমন ঝড় উঠল না তো! যে সোশ্যাল মিডিয়া যে কোনও ইস্যুতে তোলপাড় হয়, তা যেন কার্যত চুপচাপ, আলোড়নহীন। টুকটাক বিক্ষিপ্ত মন্তব্য ছাড়া তেমন গণ প্রতিক্রিয়া নেই, যা এই ঘটনার ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত ছিল।
আরও শুনুন: এ কোন ‘অমৃতকাল’! সাক্ষী-ভিনেশরা মাটিতে পড়ে, মাটিতে মিশল দেশের সম্মানও
তবে, কি এমন একটা পরিণতি যে হতে পারে, তার জন্য প্রস্তুতই ছিল দেশ! ঘটনা তো আজকের নয়। শুরু হয়েছিল চলতি বছরের একেবারে গোড়াতে। ১৮ জানুয়ারি দেশের তাবড় কুস্তিগিররা একটি অভিযোগকে কেন্দ্র করে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। অভিযোগের তির ছিল, কুস্তি ফেডারেশনের তৎকালীন প্রধান ব্রিজভূষণ সিং-এর বিরুদ্ধে। এবং সে অভিযোগ ছিল সরাসরি যৌন হেনস্তার। মহিলা কুস্তিগিররা ফেডারেশনের মধ্যেই যৌন হেনস্তার শিকার হচ্ছেন, চারিদিকে একটা থমথমে ভয়ের পরিবেশ- এই কথা দেশের মানুষকে জানাতেই যন্তর-মন্তরে শুরু হয় ধরনা। ঘটনার জল ক্রমশ গড়াতে থাকে। তৈরি হয় অনুসন্ধান কমিটি। ফেব্রুয়ারি মার্চ পেরিয়ে এপ্রিলে এসে তদন্ত কমিটি একটি রিপোর্ট পেশ করে, একই সঙ্গে ফেডারশনের নির্বাচনও ঘোষণা করা হয়। যদিও ভিনেশ ফোগটরা এই কমিটির উপর আস্থা রাখতে পারেননি। এপ্রিলেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কুস্তিগিররা। আন্দোলন তুঙ্গ মুহূর্তে ওঠে ২৮ মে। নয়া সংসদ ভবন উদবোধনের মুহূর্তেই আন্দোলনের বহর দেখে কুস্তিগিরদের থামাতে যায় পুলিশ। আর দেশ দেখে, মাটিতে পড়ে আছেন ভারতের সোনার মেয়েরা। ৩০ মে হরিদ্বারের গঙ্গায় নিজেদের পদক বিসর্জন দিতে যান তাঁরা। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত থেকে তাঁরা সরে আসেন। ঘটনা গড়াতে থাকে। শেষ পর্যন্ত বছরের শেষে এসে জানা যায় যে, সঞ্জয় সিং হচ্ছেন নয়া প্রধান। অভিযোগ যে, তিনি ব্রিজভূষণেরই ঘনিষ্ঠ। ফলত বকলমে ফেডারেশনের উপর কর্তৃত্ব চলবে ব্রিজভূষণেরই। প্রতিবাদে কুস্তি ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন সাক্ষী মালিক। অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
আরও শুনুন: পাকিস্তানের সীমা নিয়ে প্রশ্ন করতেই পড়ুয়া বলল সীমা হায়দারের নাম, অবাক শিক্ষকও
অর্থাৎ গোটা বছর ধরে এই ঘটনা দেশবাসীর চোখের সামনেই ঘটেছে। কখনও সেদিকে মনোযোগ গিয়েছে, কখনও নয়। সময়ে সময়ে চরচার বিষয় ঘুরে গিয়েছে। সাক্ষীদের অভিযোগ কিন্তু সামান্য নয়। মহিলাদের হেনস্তার যে অভিযোগে তাঁরা আন্দোলন চালাচ্ছিলেন, তা তো লঘু হতে পারে না। বিশেষত এই দেশে যখন নারী নির্যাতন বা নারীদের প্রতি হেনস্তার ঘটনা অহরহ ঘটেই চলেছে। এমনকী সাম্রতিক যে রিপোর্ট তা-ও সেই ভয়াবহ ইঙ্গিতই দিচ্ছে। এই যখন দেশের অবস্থা, তখন দেশের তাবড় কৃতী অ্যাথলিটরা সেরকমই ঘটনার স্বাভাবিক নিষ্পত্তি চেয়েছিলেন। সাক্ষীর এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিচ্ছে, তাঁরা তা পাননি। যদি তাঁরাই তা না পেয়ে থাকেন, তাহলে দেশের বাকি মহিলাদের অবস্থাটা ঠিক কীরকম? এ-প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। তা উঠছেও। তবে, সবথেকে যা চোখে পড়ার মতো হল, তা হল দেশবাসীর নীরবতা। যে সাক্ষী মালিক দেশকে পদক এনে দিয়েছিলেন তিনি তো স্বাভাবিক অবসর নিচ্ছেন না। অবসর নিতে বাধ্য হচ্ছেন, কেননা তিনি ন্যায় পাননি। অন্যায়ের প্রতিবাদে তাঁর এই সিদ্ধান্ত। দেখা গেল, সে সিদ্ধান্ত জনমানসে সেই আন্দোলন জাগিয়ে তুলছে না এখনও। এখনও সকলে সোচ্চার হয়ে বলতে পারছেন না যে, ফিরে এসো সাক্ষী। কেননা, প্রশাসনের অচলায়তন আদৌ সরবে কি-না, তা কারোরই জানা নেই। অনেকেই হয়ত হাল ছেড়ে দিয়েছেন সে ব্যাপারে। ফলত যৌন হেনস্তার মতো একটা গুরুতর অভিযোগও যেন এক বছরে অনেকতাই ফিকে হয়ে গেল।
এই কি তাহলে শেষমেশ প্রাপ্য ছিল? বোধহয় না। সাক্ষী তাঁর প্রতিবাদ জারি রাখলেন কঠোর সিদ্ধান্তে। কিন্তু বাকি দেশ! প্রতিবাদের ভাষা আদৌ আর তার মনে আছে তো!