বিশ্বকাপের ইতিহাসে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য মণিমুক্তো। কিছু তার মনে আছে, কিছু বা ঢাকা পড়ে গিয়েছে বিস্মৃতির কুয়াশায়। মাঠ আর মাঠের বাইরের নানা রঙের চরিত্রদের ফিরে দেখা চলতি বিশ্বকাপের মরশুমে। আচ্ছা, বিশ্বকাপের মতো আসরে পরিবারের অনেকে মিলে খেলেছেন, এরকম নজির মনে পড়ছে? ইতিহাস বলছে, এমন ঘটনা কিন্তু কম নয়! সেই গল্পই শোনালেন সৌরাংশু।
বাবা ও ছেলের বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার নজির বেশ কয়েকটা আছে। তাঁদের মধ্যে একটা তো আবার দুটো ভিন্ন দেশের হয়ে খেলার গল্প। মাজিনহো আলকান্তারা ১৯৯৪ সালে ২৪ বছর পরে বিশ্বকাপ জয়ী ব্রাজিলের মাঝমাঠে অধিনায়ক দুঙ্গা ও মরিসিও স্যান্টোসের সঙ্গে একটা আঁটোসাটো ত্রিফলা তৈরি করেছিলেন। তাঁর বড় ছেলে থিয়াগো আলকান্তারা স্পেনের হয়ে খেলেছিলেন ২০১৮-এর বিশ্বকাপে। অদ্ভুত ব্যাপার, থিয়াগোর ভাই রাফিনহা আলকান্তারা আবার খেলেছেন ব্রাজিলের হয়ে, তবে বিশ্বকাপে সুযোগ হয়নি।
আরও শুনুন: ২৪ বছর বিশ্বকাপে অংশ নেয়নি আর্জেন্টিনা, কিন্তু কেন?
পাওলো মালদিনির কথা তো আমরা সবাই জানি। অনেকের মতে বিশ্বের সর্বকালের সেরা ডিফেন্ডার তিনি। চারটে বিশ্বকাপে খেলেছেন, ‘৯৪তে রানার্স হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বাবার কথা ক’জন জানি আমরা? সিজারে মালদিনি ১৯৬২-তে ইতালির হয়ে বিশ্বকাপ খেলেছেন। শুধু তাই নয়, পাওলো ১৯৯৮-তে সিজারের কোচিং-এ বিশ্বকাপ খেলেন। ১৯৯৮ সালেই বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেন তদানীন্তন বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা গোলকিপার ডেনমার্কের পিটার স্মাইকেল। পিটারের ছেলে ক্যাসপার ২০১৮ এবং এ বছরের বিশ্বকাপ ডেনমার্কেরই গোলকিপার হিসাবে খেললেন।
আরও শুনুন: বিছানার নিচে জুতোর বাক্সে লুকোনো ছিল বিশ্বকাপের ট্রফি, কিন্তু কেন?
এ বছরই ডাচদের হয়ে লেফট ব্যাক পজিশনে খেলছেন ড্যালে ব্লিন্ড। ড্যালে তাঁর বাবার কোচিং-এও খেলেছেন। বর্তমানে ড্যালের বাবা ড্যানি ডাচ কোচ লুই ফন গালের সহকারী হিসাবে কাজ করছেন। ড্যানি বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের দলে ছিলেন ১৯৯০ ও ১৯৯৪ বিশ্বকাপে। এ ছাড়াও ২০১০এর সেরা খেলোয়াড় উরুগুয়ের দিয়েগো ফোরলানের বাবা পাবলো উরুগুয়ের হয়ে খেলেছেন ১৯৭৪ বিশ্বকাপে। ২০১০-এর বিশ্বকাপ জয়ী হ্যাবি আলোন্সোর বাবা মিগুয়েল আঙ্খেল আলোন্সো ১৯৮২-এর স্পেন বিশ্বকাপে স্পেনের প্রতিনিধিত্ব করেন। আর ১৯৯৮-এর বিশ্বকাপ জয়ী ফ্রান্সের ইউরি জরকয়েফের বাবা জাঁ জরকয়েফ আবার ১৯৬৬-এর বিশ্বকাপ খেলেছেন ফ্রান্সের হয়ে।
আরও শুনুন: সিগন্যাল দেখেই এল ভাবনা, ফুটবলে চালু হল লাল আর হলুদ কার্ডের শাসন
তবে সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন মেক্সিকোর বালসাজার/হার্নান্ডেজরা। টমাস বালসাজার ১৯৫৪-তে মেক্সিকোর হয়ে খেলেছিলেন বিশ্বকাপ। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে একটা গোলও আছে। বালসাজারের জামাই হ্যাভিয়ের হার্নান্ডেজ, যাঁর ডাকনাম এল চিচারো বা সবুজ কড়াইশুঁটি হয়েছিল তাঁর সবুজ চোখের জন্য, তিনি মেক্সিকোর হয়ে খেলেছিলেন মেক্সিকো বিশ্বকাপ, ১৯৮৬-তে। আর চিচারোর ছেলে হ্যাভিয়ের হার্নান্ডেজ জুনিয়র, যাঁকে ডাকা হয় এল চিচারিতো বা ছোট সবুজ কড়াইশুঁটি বলে, তিনি তো ২০১০-এ তাঁর প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচেই নিজের দাদুর কৃতিত্ব ছুঁয়ে ফেলেন ফ্রান্সের বিরুদ্ধেই গোল করে। তিনটি বিশ্বকাপে মোট ৪টি গোল করে বিশ্বকাপে মেক্সিকোর যুগ্ম সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি এবং সামগ্রিকভাবে তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবলে মেক্সিকোর সর্বোচ্চ গোলদাতা।
আরও শুনুন: বার দুয়েক চুরি হয়েছিল বিশ্বকাপের ট্রফি, উদ্ধারের গল্প হার মানায় সিনেমাকেও
মার্কাস থুরামের কথা দিয়ে আজকের গল্প শেষ করি। মার্কাস মূল ফ্রান্স দলে ছিলেন না, কিন্তু ২৬তম সদস্য হিসাবে দলে শেষ মুহূর্তে ডেকে নেন ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশঁ। মার্কাস এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠেও নামেন। মার্কাসের বাবা লিলিয়ান থুরাম ১৯৯৮-এর চ্যাম্পিয়ন ও ২০০৬-এর রানার্স আপ ফরাসি দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। ১৯৯৮ ও ২০০৬, দু-বছরই সেমিফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছেন আর ৯৮ বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে দুটি গোলও করেছেন। ’৯৮ বিশ্বকাপের তৃতীয় সেরা খেলোয়াড় ছিলেন থুরাম। মার্কাস খেলেন ফরোয়ার্ড লাইনে। বাবা-ছেলের বিশ্বকাপ খেলার নিদর্শন ঠেকে গেল চলতি বিশ্বকাপেও।