বিশ্বকাপের ইতিহাসে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য মণিমুক্তো। কিছু তার মনে আছে, কিছু বা ঢাকা পড়ে গিয়েছে বিস্মৃতির কুয়াশায়। মাঠ আর মাঠের বাইরের নানা রঙের চরিত্রদের ফিরে দেখা চলতি বিশ্বকাপের মরশুমে। শোনা যাক জো গায়েটিয়েন্সের গল্প, শোনাচ্ছেন সৌরাংশু।
জো গায়েটিয়েন্সের নামটা কি মনে পড়ছে? বা আদৌ শুনেছেন? আচ্ছা এভাবে না জিজ্ঞাসা করে, বরং জিজ্ঞাসা করি, বিশ্বকাপের সেরা দশটা অঘটনের মধ্যে একটা যে ১৯৫০-এর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইংল্যান্ডের ১-০ পরাজয়, তা জানেন তো? বেলো হরাইজন্তের ওই খেলাটিকে বিশ্বকাপের বিস্ময় বলা হয়।
আরও শুনুন: অদ্ভুত চুলের ছাঁটে বাজিমাত, কেন এমন স্টাইল বেছে নিয়েছিলেন রোনাল্ডো?
তা সেই ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে গোল করেছিলেন যিনি, তাঁর নাম জো গায়েটিয়েন্স। দেশে ফিরে তিনি জাতীয় বীরের মর্যাদা পেয়েছিলেন। প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েই শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়ের নায়ক। এমনকী ১৯৯৪ সালে ফ্রেঞ্চ ফুটবল প্রেস থেকে যে ১০০ জন বিশ্বকাপের তারকার তালিকা প্রকাশ করা হয়, তাতেও নাম ছিল তাঁর।
তা এহেন গায়েটিয়েন্সের কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছিল না। মানে বিশ্বকাপের নিয়মকানুন তখন অনেক বেশি সহজ ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দলে গায়েটিয়েন্স সুযোগ পেয়েছিলেন এই বলে যে তিনি নাকি নাগরিকত্ব শীঘ্রই নেবেন। যদিও সে আর নেওয়া হয়ে ওঠেনি।
গায়েটিয়েন্সের পশ্চাৎপট কিন্তু রামধনু রঙের। এমন বলা হয় যে, গায়েটিয়েন্সের প্রপিতামহ ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে তদানীন্তন প্রুসিয়ার রাজা ফ্রেড্রিক উইলিয়ামস দ্য থ্রি-র হুকুমে হাইতিতে প্রুসিয়ার ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন ও বিস্তারের জন্য আসেন। সেখানে এসে তিনি বিবাহ করেন হাইতির এক সামরিক জেনারেলের মেয়েকে।
আরও শুনুন: ফাইনালের ভবিষ্যৎ জানিয়েছিল নকল পল! বিস্ময় অক্টোপাসের মৃত্যু ঘিরেও বহু বিতর্ক
হাইতি থেকেই জো গায়েটিয়ান্স ফুটবলের কেরিয়ার শুরু করেন এবং ১৯৪৭-এ যখন হিসাবরক্ষা নিয়ে পড়াশুনো করতে নিউইয়র্ক আসেন তখন নিউইয়র্কের ব্রুকহাটন দলের হয়ে খেলতে শুরু করেন। সেখানেই নজরে পড়েন যুক্তরাষ্টের ফুটবল কর্তাদের।
বেলো হরাইজন্তের সেই বিকেলে গোলটাও অদ্ভুত করেছিলেন তিনি। ওয়াল্টার বাহর বলে এক জার্মানজাত মার্কিন ইনসাইড রাইটের ২৫ গজি শট গোলকিপারের মাত্র ১০ হাত দূর থেকে মাথা ছুঁয়ে দিক পরিবর্তন করিয়ে গোলকিপারকে সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত করে জালে জড়িয়ে দেন। যে গোল শক্তিশালী ইংরেজরা আর শোধ করতে পারেনি।
বিশ্বকাপের পর তিনি প্যারিসে চলে যান রেসিং ক্লুব দে প্যারিসের হয়ে খেলতে। চার বছর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছুঁয়ে হাইতিতে ফিরে এসে আবার হাইতির জাতীয় দলে খেলেন তিনি বছর তিনেক। মাত্র ৪০ বছর বয়েসে হাইতির রাজধানী পোর্ট অউ প্রিন্সে মারা যান তিনি।
অদ্ভূত গল্প না? আসলে এমন অনেক মণিমুক্তো বিশ্বকাপের ইতিহাসে ছড়িয়ে আছে, পেলে-মারাদোনাদের দেখতে গিয়ে যাঁদের আমরা খুঁজেও দেখি না।