সেমিফাইনালে সপাট গোল। ইয়ামালের বাঁ পায়ে ভর করে ইউরোর ফাইনাল পর্যন্ত ছুটেছে স্পেনের বিজয়রথ। কিন্তু ইউরো ফাইনালে কি পুরো সময় জুড়ে মাঠ দাপাবে ইয়ামালের ম্যাজিক? শুনে নেওয়া যাক।
মাত্র ষোলো বছরের ছেলের সোলো শোয়ে নক্ষত্রের জন্ম দেখেছে ইউরো কাপ। মরক্কো থেকে স্পেনে চলে আসা অভিবাসী ছেলেটাই, গলির জীবন আর জীবনের চোরাগলিতে পাস খেলতে খেলতে পৌঁছে গিয়েছে ঝাঁ চকচকে ইউরোর রাজপথে। ইউরোর ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হওয়ার নজির গড়েই যেন সাবালক হয়েছে সে। হ্যাঁ, বলছি লামিন ইয়ামালের কথাই। সাবালক বলছি বটে, কিন্তু সে তো বড় মাঠে খেলার কৃতিত্বের নিরিখে। বয়সের হিসেবে সবে ১৭ ছুঁলেন ইয়ামাল। এর আগে পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ের বেশি খেলতেই পারেননি তিনি। সৌজন্যে জার্মানির শিশুশ্রম আইন। ১৬ বছর পেরোনো ইয়ামাল যে তখনও শিশুশ্রমিক বলেই গণ্য হচ্ছিলেন। তবে বয়স ১৭ হওয়ায় কি ছাড় মিলল সেই হিসেবে? ফাইনালে কি এক্সট্রা টাইম বা পেনাল্টির সময়ে খেলতে পারবেন তিনি?
আরও শুনুন:
ছোট্ট ইয়ামালের সঙ্গে মেসির ছবি ভাইরাল, কী বলছেন সেই ফোটোগ্রাফার?
ফুটবলের মাঠে ইয়ামালের প্রতিভা প্রথম থেকেই নজর কেড়েছিল। স্পেনের প্রতিটি বয়সভিত্তিক দলের হয়ে যেভাবে মাঠ মাতিয়েছেন তিনি, তাতে অল্প বয়সেই মরক্কোর জাতীয় দলের হয়ে খেলার প্রস্তাবও এসেছিল। তবে ২০২৩-এ স্পেনের হয়েই পেশাদার খেলা শুরু করেছেন ইয়ামাল। আর এবারেই সুযোগ এসেছে ইউরোতে। কিন্তু হলে কী হবে, রোজ পুরো সময় জুড়ে খেলার সুযোগ মিলছে না তাঁর। দলে তিনি যত অপরিহার্যই হয়ে উঠুন, জার্মানির শিশুশ্রম আইন অনুযায়ী নাবালকদের স্থানীয় সময় রাত ৮টার পরে কাজ করানো বেআইনি। ইউরো কাপের বড় মঞ্চেও সে আইনের ফাঁক নেই, তবে খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে রাত ১১টা পর্যন্ত। তাতেও যে সময় খেলা শুরু হচ্ছে, তাতে ইয়ামালকে পুরো ৯০ মিনিট খেলালে সেই সময়সীমা পেরিয়ে যাবে। আর সেক্ষেত্রে স্প্যানিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে জরিমানা দিতে হবে ২৭ লক্ষেরও বেশি টাকা।
আরও শুনুন:
ষোলোর সোলো শোয়ে নক্ষত্রের জন্ম, ইয়ামালের রূপকথা যেন মতি নন্দীর উপন্যাস
সেই নিয়মের চক্করেই ইয়ামাল এতদিন বিপাকে পড়েছেন। এবার বয়স ১৭ হল বটে, কিন্তু নিয়মের গেরো তো তাতেও আলগা হচ্ছে না। জার্মানিতে খেলা হওয়ার দরুন জার্মানির শিশুশ্রম আইন মানতে হবে সব দলকেই, ফলে ১৮-র নিচে যে কোনও বয়সি খেলোয়াড়ই পড়বেন সেই আওতায়। এমনিতে রাত ৯টায় শুরু হওয়া ইউরো ফাইনাল ১৫ মিনিটের ব্রেক সত্ত্বেও ১১টার আগেই শেষ হচ্ছে। এমনকি দুই অর্ধে ৫ মিনিট করে ‘ইনজুরি টাইম’ জুড়লেও সময় নাগালেই থাকছে। মুশকিল হবে যদি এক্সট্রা টাইম কিংবা পেনাল্টি অবধি খেলা গড়ায়। গত ফাইনালেও পেনাল্টি অবধি যেতে হয়েছিল ইংল্যান্ড আর ইতালিকে। এবারেও খেলা ততদূর গড়ালে বিপাকে পড়তে হবে স্পেনের বিস্ময়বালককে। যদিও স্পেনের কোচ ফুয়েন্তে আগেভাগেই বলে রেখেছেন, প্রয়োজন মনে করলে পুরো ম্যাচই খেলাবেন ইয়ামালকে। আইনের প্যাঁচে পড়ে তাঁর সেরা অস্ত্রকে বাতিল করতে মোটেই রাজি নন তিনি। তবে ফুটবলপ্রেমীরা এও মনে করছেন, জার্মানি হয়তো নিয়ম ভাঙলেও স্পেনকে সাজা না দিতে পারে। এই টানাপোড়েনে শেষ পর্যন্ত ইয়ামালের ভাগ্য কোনদিকে যাবে, সে কথা অবশ্য বলবে ফাইনাল ম্যাচই।